১০ বছরেরও বেশি সময় চেষ্টার পর আধা খাওয়া পিৎজার সূত্র ধরে ভয়ঙ্কর এক সিরিয়াল কিলারকে গ্রেফতার করেছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক পুলিশ। রেক্স হিউয়েরম্যান নামের ওই ব্যক্তির কর্মকাণ্ড ও তাকে গ্রেফতার করার কাহিনী যেকোনো থ্রিলার মুভিকেও হার মানাবে।
Advertisement
ঘটনার শুরু হয় ২০১০ সালে। ২০১০-১১ সালের মধ্যে নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডের সমুদ্রতীরে মেলে একের পর এক মরদেহ। কোনোটি খোলা জায়গায় বস্তাবন্দি, কোনোটি বা আবার ঝোঁপের নিচে। একে একে উদ্ধার করা হয় ৯ নারী, এক পুরুষ ও একটি শিশুর লাশ।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় নিহত ৪
একপর্যায়ে গোটা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ব্যাপক আলোচনায় আসে এসব হত্যাকাণ্ডের খবর। নড়েচড়ে বসে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় প্রশাসন। শুরু হয় তদন্ত। কিন্তু হত্যাকারী এতটাই দক্ষ ও সুচতুর ছিলেন যে, কোনোভাবেই তাকে শনাক্ত করা যাচ্ছিল না।
Advertisement
এক যুগের বেশি সময় ধরে তদন্তের পর সম্প্রতি অমীমাংসিত সে রহস্যে সমাধানে সক্ষম হয় নিউইয়র্ক পুলিশ। শনাক্ত হন, ঠান্ডা মাথা ভয়ঙ্কর খুনি রেক্স হিউয়েরমান। ১১টি হত্যাকাণ্ডের পরও পুলিশের নাকে ডোগা দিয়েই প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছিলেন তিনি।
২০২২ সালের মার্চে গোয়েন্দারা হিউরম্যানকে সন্দেহভাজন হিসেবে বিবেচনা করে তার চলাফেরা ও গতিবিধির ওপর নজর রাখতে শুরু করে। তদন্তকারীরা জানতে পারেন তিনি (হিউরম্যান) একটি শেভ্রোলেট অ্যাভাল্যাঞ্চ মডেলের পিকআপ ট্রাকের মালিক। ঠিক এই মডেলের একটি পিকআপ ট্রাক যৌনকর্মীদের তুলে নিয়ে যেতে ব্যবহার করা হতো বলে জানান এক সাক্ষী।
আরও পড়ুন: নেতানিয়াহু হাসপাতালে
পরে হিউরম্যানের পেছনে একদল অনুসরণকারী নিযুক্ত করা হয়। ওই দলটি ম্যানহাটন থেকে হিউরম্যানের পিকআপ থেকে ফেলে দেওয়া পিৎজার বক্স সংগ্রহ করে। ওই বক্স থেকে সংগ্রহ করা পিৎজা ক্রাস্ট ডিএনএ টেস্টের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। সেই পরীক্ষার ফলাফল মৃত এক নারীর দেহাবশেষ থেকে পাওয়া আলামতের সঙ্গে মিলে যায়। আরও কিছু সূত্র মিলে যাওয়ার পর আরও নিশ্চিত হন তদন্তকারীরা।
Advertisement
এ নিয়ে সাফোক কাউন্টির পুলিশ কমিশনার রডনি হ্যারিসন বলেন, রেক্স হিউয়েরম্যান একজন পিশাচ, যিনি আমাদের মাঝে ভদ্র মানুষের বেশ ধরে চলাফেরা করতেন। তার লক্ষ্য ছিল মূলত নারী যৌনকর্মীরা। তার হাতে খুন হওয়া নারীদের বয়স ২০ এর আশেপাশে ও তারা সবাই ২০০৭ এর জুলাই থেকে ২০১০ এর সেপ্টেম্বরের মধ্যে নিখোঁজ হন।
‘হিউয়েরম্যান এতটাই ধুরন্ধর যে, দীর্ঘ ১৩ বছরেও আমরা তার কাছে পৌঁছাতে পারিনি। তবে আমরা জানতাম, খুনি আমাদের তদন্তের দিকে নজর রাখছে। তাই খুব গোপনে তদন্ত পরিচালনা করি।’
আরও পড়ুন: অনুমতি পেয়েও পবিত্র তোরাহ-বাইবেল পোড়ালেন না মুসলিম যুবক
এ বিষয়ে আইনজীবী জন রে বলেন, ১২ বছর ধরে এ মামলায় তদন্তের পর এখন নিজেকে হালকা মনে হচ্ছে। এখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছি। নিহতদের পরিবারগুলোর জন্যও স্বস্তির কারণ এটি। অবশেষে অপরাধীকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে।
তবে হিউরম্যানের আইনজীবী মাইকেল ব্রাউন বলেন, এখনই বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়। কেবল এটা বলতে পারি, আমার মোয়াক্কেল বলেছেন, তিনি এসব ঘটনায় জড়িত নন। সবেমাত্র মামলা হয়েছে ও নতুন করে তদন্ত শুরু হয়েছে। কোনো পক্ষের হাতেই পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ নেই।
সূত্র: আল জাজিরা
এসএএইচ