মশার যন্ত্রণায় জীবন অতিষ্ঠ সবার। এদিকে বাড়ছে ডেঙ্গুর উপদ্রব। ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়াসহ নানান রোগের বাহক এই ছোট পতঙ্গটি। তবে আমাদের কাছে যন্ত্রণাদায়ক হলেও বিশ্বের এমন এক জাতি আছে তাদের জন্য মশা আশীর্বাদস্বরূপ। মশার উৎপাত থেকে রক্ষা পেতে আমরা অনেক কিছুই করি। কিন্তু তারা মশার উৎপাদন যেন বেশি হয় তাই চান মনেপ্রাণে।
Advertisement
আফ্রিকার লেক ভিক্টোরিয়া এবং এর আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের কাছে বর্ষা এক উৎসবের সময়। না, বৃষ্টি বিলাস তাদের উদ্দেশ্য নয়। মশা ধরাই তাদের মূল উদ্দেশ্যে। কারণ এই মশা থেকেই তৈরি হবে কেক এবং স্যুপ। যা তাদের খুবই পছন্দের একটি খাবার।
প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে আফ্রিকার ভিক্টোরিয়া গ্রেট লেক অঞ্চলে উড়তে থাকে লাখ লাখ মশা। মশার ভিড়ে কালো হয়ে আসে আকাশ। অনেক সময় মশার কারণে দূরের অনেক কিছু দেখা পর্যন্ত যায় না। তবে এ জন্য বিরক্ত হন না সেখানকার বাসিন্দারা। বরং মশার পরিমাণ বাড়ার সাথে সাথে তাদের খুশিও বাড়তে থাকে। কারণ তাদের কাছে মশা হলো মাংস খাওয়ার প্রধান মাধ্যম!
আফ্রিকার এই অঞ্চলে খুবই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বাস। এখনও অনেক লোক আছে যারা পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার বা বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারেন না। কিন্তু তারা এর বিকল্প খুঁজে নেন মশার কেক বা স্যুপ থেকে। এটি স্থানীয় খাবার যা মাংসের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মশা দিয়ে তৈরি কেকে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি, এমনকি গরুর মাংসের চেয়েও।
Advertisement
আরও পড়ুন: ভিক্ষা করাই পেশা, মাসে আয় লাখ টাকা
আফ্রিকায় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির লেক হলো ভিক্টোরিয়া লেক। ১৮৫৮ সালে ব্রিটিশ অভিযাত্রীরা লেকটি আবিষ্কার করেন। বিশাল লেকে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে কয়েক শ’ মিলিয়ন মশা জন্ম নেয়। এই মশা তাদের কামড়ালেও তারা বিরক্ত হন না একটুও। কারণ এই মশাগুলো মানুষের রক্ত খেয়ে হৃষ্টপুষ্ট হবে। যা পরবর্তিতে তাদের প্রোটিনের যোগান দেবে।
প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম শুরু হলে লেক ভিক্টোরিয়ার আশপাশের গ্রামগুলোতে শুরু হয় মশা ধরার উৎসব। ছোট বড় সবাই এই উৎসবে যোগ দেয়। হাতে খালি হাঁড়ি নিয়ে তারা মশা সংগ্রহ করে। উড়তে থাকা মশার দলে একবার হাঁড়ি শূন্যে ঘোরালেই হাঁড়িতে জমা হয় মশার স্তূপ। সেই মশা থেকেই তৈরি হয় কেক।
কেক তৈরির জন্য প্রথমে সংগ্রহ করা মশা হাতে ডলে মন্ড করতে হয়। যা দেখতে অনেকটা ভর্তার মতো। সেই মন্ড ভাগ করে মাংসের চাপের (প্যাটি) মতো বানানো হয়। যেভাবে বার্গারের প্যাটি বানানো হয় ঠিক সেভাবে। এরপর সেগুলো ভাজা হয়। পাতলা প্যানে তেল দিয়ে উল্টে-পাল্টে দুই পাশেই ভেজে নেওয়া হয়। এ সময় চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে মশার চাপের ঘ্রাণ। ভেতরের অংশ কাঁচা থাকলেও যদি বাইরের অংশে কালো হয়ে যায় তাহলেও সমস্যা নেই। এছাড়াও এই মিশ্রণ দিয়ে তারা স্যুপ তৈরি করেও খায়।
Advertisement
এভাবে তৈরি মশার কেক খেতে অনেকটা মাছের বড়ার মতো। তাদের বিশ্বাস মশাগুলো ভিক্টোরিয়া লেকের আশপাশে থাকে বিধায় তাদের মাংস থেকে সামুদ্রিক খাদ্যের স্বাদ পাওয়া যায়। এ কারণে তাদের ধারণা মশার কেক তাদের দৈনন্দিন প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে পারে। এই খাবারে প্রোটিনের পরিমাণ সাধারণ গরুর মাংস এবং মাটনের ৭ গুণ বেশি। তাদের মতে, মশা যতই ছোট হোক না কেন এটি তাদের মাংসের চাহিদাও পূরণ করতে পারছে।
আরও পড়ুন: টানা ৫৮ ঘণ্টা চুম্বন করে বিশ্বরেকর্ড দম্পতির
তবে গবেষকরা বলছেন, এভাবে মশা খাওয়া মোটেই নিরাপদ নয়। নানান ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি হতে পারে এর ফলে। আফ্রিকান এই জনগোষ্ঠীর দাবি, তারা শত শত বছর ধরে এভাবে মশা খেয়ে আসছেন। তাদের কখনো কোনো সমস্যা হয়নি। তবে গবেষকরা বলছেন, মশা খাওয়ার ফলে তাদের শরীরে বিপুল সংখ্যক ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া বহন করে। উচ্চ তাপমাত্রায় ভাজা হলেও সব জীবাণু মেরে ফেলা কঠিন। স্থানীয়রা মশার আসল স্বাদ পেতে কেবল এর বাইরের অংশটুকুই ভেজে নেন, ভেতরে কাঁচা থাকে পুরোপুরি। যা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।
আফ্রিকানের এই জনপ্রিয় খাবার ‘মশার কেক’, এক কামড়ে হাজার হাজার মশা। প্রোটিনের অন্যতম উৎস হলেও এটি আসলে তারা খেতে বাধ্য হয়েছেন। এটি তাদের জন্য কোনো বিলাসিতা নয়, বরং দারিদ্র্যের অন্যতম এক উদাহরণ। মূলত এই অঞ্চলের মানুষ পর্যাপ্ত খাদ্যের অভাবেই বিভিন্ন পোকামাকড় খেয়ে থাকেন। এমনকি ক্ষুদা মেটাতে মাটির তৈরি বিস্কুটও খান তারা।
সূত্র: আইনিউজ
কেএসকে/জিকেএস