মালয়েশিয়া বাংলাদেশের জন্য অন্যতম সম্ভাবনাময় একটি শ্রমবাজার। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় ২০২২ সালের ৮ আগস্ট বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার পুনরায় চালু হয়। বর্তমানে দেশটিতে বাংলাদেশি কর্মী পাঠানো চলমান রয়েছে। এরই মধ্যে মালয়েশিয়ার সারাওয়াক রাজ্যে কর্মী নিয়োগে চলে কূটনৈতিক তৎপরতা। যে রাজ্যে শুধু ইন্দোনেশিয়ান, ফিলিপাইন ও পাকিস্তানি কর্মীরা কাজ করছেন। সেখানে এখন যাবেন বাংলাদেশি কর্মী। এ বিষয়ে গত কয়েকমাস ধরে চলে কূটনৈতিক তৎপরতা।
Advertisement
চলতি মাসের ১২ জুলাই রাজ্যের প্রিমিয়ার (রাজ্য সরকার প্রধান) দাতুক পাটিঙ্গি তান শ্রী আবাং জোহারি তুন ওপেংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার।
আরও পড়ুন: হুন্ডিতে ঝুঁকছেন মালয়েশিয়া প্রবাসীরা, রেমিট্যান্সে ভাটা
বৈঠক শেষে হাইকমিশনার জানান, সারাওয়াক রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক সদরদপ্তরে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে দক্ষ কর্মী নিয়োগে রাজ্য সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে।
Advertisement
সারাওয়াক রাজ্যকে সহযোগিতা করতে বাংলাদেশ প্রস্তুত রয়েছে এবং এক্ষেত্রে হাইকমিশন তথা বাংলাদেশ সরকারের পূর্ণ সহযোগিতার বিষয়ে আশ্বাস দেয় বলে জানান হাইকমিশনার।
এসময় বাংলাদেশ থেকে পেশাভিত্তিক দক্ষ মানবসম্পদ নিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণসহ অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক সব বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণের জন্য সারাওয়াক রাজ্যের সরকারপ্রধান তার দপ্তরের কর্মকর্তাদের তাৎক্ষিনকভাবে নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুন: মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগে ‘তৃতীয়পক্ষ’ বন্ধের নির্দেশ
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, সারাওয়াক রাজ্যের স্টেট সেক্রেটারি দাতো শ্রী মোহাম্মদ আবু বকর মারজুকি এবং বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রথম সচিব (বাণিজ্যিক) প্রণব কুমার ঘোষ।
Advertisement
বাংলাদেশের হাইকমিশনার বলেন, চেষ্টা করলে সারাওয়াকে সীমিত সংখ্যক হলেও কর্মী পাঠানো সম্ভব। সারাওয়াকের একটা স্টিল মিলে গত কয়েক মাস আগে ২০ জন কর্মী পাঠাতে সক্ষম হয়েছি। এই স্টিল মিলে বর্তমানে ৬৩ বাংলাদেশি কর্মী রয়েছেন, তারা ভালো আয় করছেন। এই কোম্পানি বাংলাদেশ থেকে আরও কর্মী নেবে। এছাড়া সারাওয়াকের একটি নামকরা প্ল্যানটেশনে এক হাজার কর্মী নিয়োগের ডিমান্ড সম্প্রতি সত্যায়ন করেছে হাইকমিশন।
২০১৪ সালে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো সারাওয়াক প্রদেশে কৃষিখাতে পাঠানোর জন্য পাঁচ হাজার বাংলাদেশিকে চূড়ান্ত করেছিল। কিন্তু তখন দুই সরকারের মধ্যকার জিটুজি চুক্তিতে মালয়েশিয়া সরকারের আগ্রহের অভাবে শেষ পর্যন্ত পাঠানো যায়নি।
আরও পড়ুন: মালয়েশিয়ায় ফ্ল্যাটের মালিক ৮০০০ বাংলাদেশি, আরও ৪০০০ আবেদন
এদিকে বর্তমানে সারাওয়াক প্রদেশে কতজন বাংলাদেশি রয়েছেন- এ বিষয়ে দূতাবাস বা মন্ত্রণালয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।
অভিবাসন বিশ্লেষকরা বলছেন, সারাওয়াক মালয়েশিয়ার একটি আলাদা স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশ। এটি পাহাড়ি এলাকা। ফলে বাংলাদেশি শ্রমিকরা সেখানে অধিকার সংক্রান্ত সমস্যায় পড়তে পারেন।
তারা আরও বলছেন, সারাওয়াক প্রদেশে বাংলাদেশ মিশনের কোনো কার্যালয় নেই। ফলে সেখানে শ্রমিকরা কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে দূতাবাসকে জানানো কঠিন হবে। ফলে শ্রমিকদের চাকরি এবং তাদের জন্য সম্পূর্ণ বিমা কভারেজ নিশ্চিত করার পরই কাউকে সারাওয়াক প্রদেশে পাঠানো উচিত।
দীর্ঘদিন মালয়েশিয়ায় থাকা প্রবাসী ও কমিউনিটি নেতা রাশেদ বাদল বলেন, সারাওয়াক প্রদেশ সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি এখানে মূলত পামওয়েল সংগ্রহের কাজ। এখানে কাজের জায়গাটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং পরিশ্রমের। আবার অবৈধ হয়ে গেলে কম বেতনে কাজ করানো হয়।
এছাড়া সারাওয়াক স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশ হওয়ায় সেখানকার প্রশাসনের সঙ্গে বাংলাদেশি শ্রমিকদের অধিকার বিষয়ে আলাদা চুক্তি হওয়া প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে হাইকমিশনার বলেন, চুক্তির বিষয়ে ভালো অগ্রগতি হয়েছে। শিগগির তা জানানো হবে।
রাজ্য সরকার প্রধান দাতুক পাটিঙ্গি তান শ্রী আবাং জোহারি তুন ওপেংয়ের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার
এদিকে ২০২২ সালের ৮ আগস্টে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার পুনরায় উন্মুক্ত হওয়ার পর, শুরুতে কর্মী যাওয়ার গতি কিছুটা কম থাকলেও চলতি বছরের প্রথম থেকেই পুরোদমে কর্মী যাচ্ছে দেশটিতে। বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৬ জুলাই পর্যন্ত চার লাখ ২৩ হাজার ৫৬৯ কর্মীর চাহিদাপত্র সত্যায়ন করা হয়েছে।
বিএমইটির পরিসংখ্যান বলছে, দেশটিতে যাওয়ার প্রক্রিয়াধীন কিংবা অপেক্ষায় আছেন আর এক লাখ ৯৫ হাজার ৫২২ কর্মী।
এই খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সব প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকলে ধারাবাহিকভাবে বাকিদেরও শিগগির দেশটিতে পাঠানো সম্ভব হবে।
জেডএইচ/এএসএম