<> যানজট তৈরি করছে অটোরিকশা <> পেশা বদলাচ্ছেন শ্রমিকরা <> মহিপাল-হাসপাতাল মোড় রুটে বাস চলাচল বন্ধ
Advertisement
ফেনী শহরে যানজট নিরসনে প্রায় ১৯ বছর আগে চালু করা হয়েছিল ‘গ্রিন টাউন বাস সার্ভিস’। এটি বেশ সাড়াও ফেলেছিল। তবে সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দিন দিন কমে গেছে বাস। এখন এ সার্ভিস বন্ধ হওয়ার পথে।
জানা গেছে, ২০০৫ সালের ১১ আগস্ট শহরে গ্রিন টাউন বাস সার্ভিসের সূচনা করেন মেয়র নুরুল আবছার। সবগুলো বাস একই রঙে রঙিন করা হয়। শহরের অসহনীয় যানজট নিরসনে এ উদ্যোগ যাত্রীদের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়। তখন প্রতিটি বাসেই উপচেপড়া ভিড় ছিল লক্ষণীয়। ২২টি বাস দিয়ে এ সার্ভিস শুরু হলেও চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পর্যায়ক্রমে শহরতলীর বিসিক শিল্পনগরী ও ফেনী-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের তেমুহনী, অপরপ্রান্তে রানীরহাট পর্যন্ত রুট বাড়ানো হয়। একইসঙ্গে বাড়ানো হয় বাসের সংখ্যাও। এ দুটি রুটে অধশর্তাধিক বাস চলতো। প্রথমে সর্বনিম্ন ভাড়া দুই টাকা নির্ধারণ করা হলেও জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় পরে পাঁচ টাকা করা হয়।
সম্প্রতি পৌরসভার উদ্যোগে শহর এলাকার উল্লিখিত দুটি রুটে পৌর অটোরিকশা চালু হয়। তবে পৌরসভার নির্ধারিত গাড়ির বাইরেও অসংখ্য গাড়ি চলাচল করছে। টাউন সার্ভিসের জন্য নির্ধারিত স্থান এমনকি সড়ক দখল করে অটোরিকশায় যাত্রী ওঠানামা করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মহিপাল থেকে হাসপাতাল মোড় রুটে বন্ধ হয়ে যায় টাউন সার্ভিস।
Advertisement
আরও পড়ুন: ঢাকা-শরীয়তপুর রুটে বাস বেড়েছে ১০০
একাধিক বাসমালিক ও চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন শুধু লালপোল থেকে হাসপাতাল মোড় রুটে টাউন সার্ভিসের বাস চলছে। বাসের সংখ্যাও আগের তুলনায় অর্ধেকে নেমেছে। যেগুলো চলাচল করছে সেগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিয়ে-শাদি ও অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হয়। শহরে বাস সার্ভিস এখন বন্ধের পথে।
শহরের প্রবীণ বাসিন্দা মাহবুব আলম জাগো নিউজকে জানান, যানজট নিরসনে শহর থেকে সব বাসস্ট্যান্ড অপসারণ ও গাড়ি চলাচল বন্ধ করা হয়। এতে শহরে রিকশার দাপট বেড়ে যায়। ফলে যানজট না কমে বরং বেড়ে যায়। তাই জনগণের দুর্ভোগ ও যানজট নিরসনে পৌর কর্তৃপক্ষ শহরে গ্রিন টাউন বাস সার্ভিস চালু করেছিল। এতে শহরবাসী খুশি হয়েছিল। তবে সেবাটি এখন বন্ধ হওয়ার পথে।
ফেনী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ফারহান মাহাতাব অয়ন বলেন, মহিপাল থেকে ফেনী কলেজে যেতে টাউন সার্ভিসে ৮ টাকার ভাড়া এখন ১৫ টাকা গুনতে হয়। সার্ভিসটি এখন বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে অটোরিকশায় যাতায়াত করি।
Advertisement
বাসচালক মাধব দেবনাথ জাগো নিউজকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় এ বাস সার্ভিসের সঙ্গে কাজ করছি। এখন শহরে এতো অটোরিকশা যে টাউন সার্ভিস দাঁড়ানো দূরে থাক; চলাচল করারও সুযোগ পায় না।’
আরও পড়ুন: পড়ে আছে কোটি টাকার বাস টার্মিনাল, সড়কে ভোগান্তি
আরেক বাসচালক ইমাম হোসেন ইমন জানান, দুটি রুটে ৫২টি বাস চলতো। মহিপাল রুট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ২০টি বাসের ৬০-৭০ শ্রমিক অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন। মালিকরা লোকসান গুনতে থাকায় অনেক বাস কেটে বিক্রি করে দিয়েছেন।
বাসমালিক জসীম উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাস থেকে প্রতিদিন ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা আয় হয়। তা দিয়েই পরিবার-পরিজন নিয়ে কোনোরকমে দিনাতিপাত করছি।’
শফিকুর রহমান নামের এক যাত্রী জাগো নিউজকে বলেন, ‘কম খরচে নিম্নআয়ের যাত্রীদের জন্য এ বাস সার্ভিস অতুলনীয়। যানজট নিরসনে এটি ছিল অসাধারণ উদ্যোগ। বর্তমানে মাত্রাতিরিক্ত অটোরিকশার কবলে ফেনী শহর। অসংখ্য অনুমোদনহীন অটোরিকশা সড়কে পার্কিং করে যানজট তৈরি করছে। জনজীবনকে বিষিয়ে তুলেছে তারা।’
দীর্ঘদিন ধরে গ্রিন টাউন বাস সার্ভিসের সঙ্গে যুক্ত আছেন মুবারক হোসেন। তিনি লাইনম্যান হিসেবে কর্মরত।
মোবারক হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘একটি রুট বন্ধ হওয়ায় এখন ১৫ দিন ডিউটি করি, বাকি ১৫ দিন বেকার বসে থাকতে হয়। এ রুটে আমরা দুজন লাইনম্যান মাসে ১৫ দিন করে কাজ করি।’
আরও পড়ুন: এক দোকানে ৫৩ রকমের চা
কথা হয় গ্রিন টাউন সার্ভিস বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এ সার্ভিসের সঙ্গে সম্পৃক্তরা কোনোরকম জীবনযাপন করছেন। মহিপাল রুট বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর অনেকেই গাড়ি বিক্রি করে দিয়েছেন। অনেকে এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে ফেনী পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী বলেন, টাউন সার্ভিস বাস পৌর নাগরিকদের চলাচলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও নিম্নআয়ের মানুষ এ পরিবহনটি বেশি ব্যবহার করেন। তাদের কথা চিন্তা করেই আমরা এটি আরও আধুনিকায়ন করবো। যে রুটে টাউন সার্ভিস বন্ধ রয়েছে সে রুট সচল করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, ছোট শহর হিসেবে টাউন সার্ভিস বাসের পাশাপাশি পৌর অটোরিকশা সার্ভিস চালু করেছি। মানুষ দ্রুত ও আরামদায়ক সেবা পেতে চায়। অটোরিকশা সার্ভিস মানুষের যাতায়াতকে আরও সহজ করে তুলেছে।
অটোরিকশার কারণে যানজট প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, অনুমোদনহীন অটোরিকশা চলাচল বন্ধে শিগগির জেলা প্রশাসন ও বিআরটিএর সহযোগিতায় অভিযান চালানো হবে।
এসআর/জিকেএস