রাজীব কুমার সাহা
Advertisement
ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ বাঙালির আত্মানুসন্ধান ও বুদ্ধিবৃত্তিক চেতনার জাজ্বল্যমান বাতিঘর। তিনি একাধারে ভাষাবিজ্ঞানী, দার্শনিক, সাহিত্যিক, অনুবাদক, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, লোকবিজ্ঞানী ও ভাষাসৈনিক। ‘আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য তার চেয়ে বেশি সত্য আমরা বাঙালি’—তাঁর এমন অসাম্প্রদায়িক বাণীই প্রমাণ করে তিনি কেমন অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। এ জ্ঞানতাপস ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দের ১০ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের অবিভক্ত চব্বিশ পরগনা জেলার পেয়ারা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন মা-বাবার পঞ্চম সন্তান। তাঁর বাবা মফিজ উদ্দিন আহমদ ছিলেন ইংরেজ আমলে সরকারি জরিপ বিভাগের একজন কর্মকর্তা। শহীদুল্লাহর মা হুরুন্নেছা খাতুনের শিক্ষার প্রতি ছিল প্রচণ্ড আগ্রহ। তিনি বাড়িতে তাঁর পরিবার ও পেয়ারা গ্রামের অন্য নারীদের শিক্ষা দিতেন। প্রথমদিকে মুহম্মদ শহীদুল্লাহর নাম রাখা হয়েছিল মুহম্মদ ইব্রাহীম। কিন্তু পরবর্তী সময়ে পিতার পছন্দে আকিকা করে তাঁর নাম পুনরায় রাখা হয় মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্। পরিবারে তিন বোন ও চার ভাইয়ের মধ্যে শহীদুল্লাহ্ ছোটোবেলায় ছিলেন দারুণ আমুদে ও আত্মভোলা।
ছোটোবেলা থেকেই শহীদুল্লাহ্ ঘরোয়া পরিবেশে উর্দু, ফারসি ও আরবি ভাষা শেখেন এবং একইসঙ্গে গ্রামের পাঠশালায় সংস্কৃতের পাঠ গ্রহণ করেন। পাঠশালার পড়া সমাপনান্তে ভর্তি হন হাওড়া জেলা স্কুলে। স্কুলের ছাত্র থাকাকালীনই বইপড়া এবং নানা বিষয় জানার প্রতি তাঁর ছিল দারুণ কৌতূহল। হাওড়া স্কুলের স্বনামখ্যাত ভাষাবিদ আচার্য হরিনাথ দের সংস্পর্শে এসে শহীদুল্লাহ্ ভাষা শেখার প্রতি মনোযোগী হয়ে পড়েন। স্কুলজীবন থেকেই তিনি আরবি-ফারসি-উর্দুর পাশাপাশি হিন্দি ও ওড়িয়া ভাষা পড়তে শিখেছিলেন। ১৯০৪ সালে হাওড়া জেলা স্কুল থেকে তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে সংস্কৃতসহ প্রবেশিকা পাশ করেন। এরপর কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে থেকে ১৯০৬ সালে এফএ পাস করেন। অসুস্থতার কারণে অধ্যয়নে সাময়িক বিরতির পর ১৯১০ সালে তিনি কলকাতা সিটি কলেজ থেকে সংস্কৃতে অনার্স পাস করেন। বাঙালি মুসলমান ছেলেদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম অনার্স নিয়ে পাস করেন।
কিন্তু সংস্কৃতের হিন্দু শিক্ষক সত্যব্রত সামশ্রমী একজন মুসলমান ছেলেকে সংস্কৃতের শাস্ত্র ‘বেদ’ পড়াতে কিছুতেই রাজি হলেন না। ভর্তি পরীক্ষায় পাস করা সত্ত্বেও সংস্কৃত পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দেখে শহীদুল্লাহ্ ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। মামলাটি দিল্লি হাইকোর্টে যায়। হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, শহীদুল্লাহকে সংস্কৃত পড়তে দেওয়া হোক নতুবা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর জন্য একটি সাবজেক্ট চালু করে তাকে পড়ানোর ব্যবস্থা করা হোক। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আদালতের দ্বিতীয় নির্দেশ অনুযায়ী ‘ভাষাতত্ত্ব বিভাগ’ নামে নতুন একটি বিভাগ চালু করেন। ফলে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক ভাষাতত্ত্ব বিভাগে ভর্তি হন এবং ১৯১২ সালে এ বিভাগের প্রথম ছাত্র হিসেবে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এর দু’বছর পর ১৯১৪ সালে তিনি আইনশাস্ত্রে বিএল ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯২৬ সালে তিনি উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য ইউরোপ গমন করেন। বাংলা ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন ‘চর্যাপদ’ বিষয়ে গবেষণা করে ১৯২৮ সালে তিনি প্যারিসের সোরবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে প্রথম ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। এ বছরই ধ্বনিতত্ত্বে মৌলিক গবেষণার জন্য প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপ্লোমা লাভ করেন। আঠারো শতকের মুসলিম সমাজ, পারিবারিক ঐতিহ্য ও পৈতৃক পেশা থেকে বেরিয়ে ব্যতিক্রমী মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ ভাষা ও জ্ঞানচর্চায় ব্রতী হন। ভাষাবিজ্ঞানের প্রায় সব ক্ষেত্রেই তিনি নির্দ্বিধ বিচরণ করেছেন, আয়ত্ত করেছিলেন বাইশটি ভাষা। তিনি বাংলা, উর্দু, ইংরেজি, হিন্দি, সংস্কৃত, পালি, ওড়িয়া, আরবি, ফারসি, হিব্রু, আবেস্তান, ল্যাটিন, তিব্বতি, জার্মান, প্রাচীন সিংহলী, পশতু, মুন্ডা, সিন্ধী, মারাঠি, মৈথিলী প্রভৃতি ভাষা জানলেও ভাষার ব্যাপারে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি সানন্দে বলতেন, ‘আমি বাংলা ভাষাই জানি।’
Advertisement
১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. জিয়াউদ্দিন আহমদ উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার সুপারিশ করেন। এর প্রতিবাদে প্রথম লেখনী ধারণ করেন ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আজাদ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা সমস্যা’ প্রবন্ধে বলেন, “পাকিস্তান ডোমিনিয়নের বিভিন্ন অঞ্চলের অধিবাসীদের মাতৃভাষা বিভিন্ন যেমন পশতু, বেলুচি, পাঞ্জাবী, সিন্ধী এবং বাংলা; কিন্তু উর্দু পাকিস্তানের কোন অঞ্চলেই মাতৃভাষা রূপে চালু নয়। ...যদি বিদেশী ভাষা বলিয়া ইংরেজী ভাষা পরিত্যক্ত হয়, তবে বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষারূপে গ্রহণ না করার পক্ষে কোন যুক্তি নাই। যদি বাংলা ভাষার অতিরিক্ত কোন দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা গ্রহণ করিতে হয়, তবে উর্দু ভাষার দাবী বিবেচনা করা কর্তব্য। ...বাংলাদেশের কোর্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষার পরিবর্তে উর্দু বা হিন্দী ভাষা গ্রহণ করা হইলে, ইহা রাজনৈতিক পরাধীনতারই নামান্তর হইবে। ড. জিয়াউদ্দিন আহমদ পাকিস্তানের প্রদেশসমূহের বিদ্যালয়ে শিক্ষার বাহনরূপে প্রাদেশিক ভাষার পরিবর্তে উর্দু ভাষার স্বপক্ষে যে অভিমত প্রকাশ করিয়াছেন আমি একজন শিক্ষাবিদরূপে উহার তীব্র প্রতিবাদ জানাইতেছি।”
এই প্রতিবাদের সূত্র ধরেই ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন। ডক্টর শহীদুল্লাহ্ রয়ে গেলেন বিতর্কের কেন্দ্রে। ১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলনে সভাপতির অভিভাষণে তিনি বলেন, “আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য, তার চেয়ে বেশী সত্য আমরা বাঙালি। এটি কোন আদর্শের কথা নয়; এটি একটি বাস্তব কথা। মা প্রকৃতি নিজের হাতে আমাদের চেহারায় ও ভাষায় বাঙালীত্বের এমন ছাপ রেখে দিয়েছেন যা মালা-তিলক-টিকিতে কিংবা টুপি-লুঙ্গি-দাড়িতে ঢাকবার কোন জো-টি নেই।” ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা দিবসে বগুড়ার আজিজুল হক কলেজের ছাত্রদের আহ্বানে তিনি হাসিমুখে এগিয়ে এসে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ছাত্র-জনতার মাঝে সশরীরে উপস্থিত থেকে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করেছেন তিনি; এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে পুলিশি হামলায় টিয়ার গ্যাসে নিগৃহীত হয়েছেন।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর একটি স্বকীয় অবস্থান রয়েছে। এই দুটি বিষয়ের ক্ষেত্রেই তিনি মৌলিক ধারণা দিয়েছেন। ১৯২০ সাল থেকে ভাষাবিজ্ঞান বিষয়ক নানাবিধ প্রবন্ধ লিখে তিনি নিজের যে বক্তব্য তুলে ধরতে থাকেন তার চূড়ান্ত ও ধারাবহিক রূপ দেখা যায় তাঁর ‘বাংলা ভাষার ইতিবৃত্ত’ (১৯৬৫) গ্রন্থে। তিনি এক স্বতন্ত্রধর্মী গবেষক ছিলেন। তাঁর গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল জটিল দিকের অবসান ঘটিয়ে গবেষণালব্ধ বিষয়ের নবতর ব্যাখ্যা প্রদান। বাংলা লোকসাহিত্যের প্রতিও তিনি বিশেষ অনুরাগী ছিলেন। গবেষণাগ্রন্থের পাশাপাশি তিনি সাহিত্য এবং শিশুসাহিত্যের অনেক মৌলিক গ্রন্থও রচনা করেন। তিনি বেশ কয়েকটি গ্রন্থ অনুবাদ ও সম্পাদনা করেন। বাংলার গঠনপদ্ধতি অনুসারে তিনিই প্রথম ১৯৪৩ সালে বাংলা ব্যাকরণ রচনায় হাত দেন। ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ যখন বাংলা ভাষার প্রথম সহজবোধ্য ‘বাংলা ব্যাকরণ’ লিখলেন; তখন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর খুশি হয়ে তাঁকে একটি চিঠি লেখেন। ওই চিঠিতে তিনি বলেন, ‘‘আপনার বাংলা ব্যাকরণখানি পড়ে বিশেষ সন্তুষ্ট হয়েছি। ব্যাকরণখানি সকল দিকেই সম্পূর্ণ হয়েছে। এতে ছাত্রদের উপকার হবে। বইখানি আমার শান্তি নিকেতনের বাংলা বিভাগের অধ্যাপকদের দেবো। তাঁরা তা শ্রদ্ধাপূর্বক ব্যবহার করবেন।’’ ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ শিশু-কিশোরদের জন্য ‘আঙুর’ পত্রিকা বের করার পর একে স্বাগত জানিয়ে বিখ্যাত লোকসাহিত্যিক ড. দীনেশ চন্দ্র সেন বলেন, ‘‘আপনার মত এত বড় পণ্ডিত, যাহার বিদ্যার পরিধি আয়ত্ত করিবার সাধ্য আমাদের নাই, যিনি বেদ-বেদান্তের অধ্যাপক, ফার্সি ও আরবী যার নখদর্পণে, যিনি জার্মান ব্যাকরণের জটিল ব্যূহ ভেদ করিয়ে অবসর রঞ্জন করে—তিনি একটি ‘আঙুর’ হাতে নিয়া উপস্থিত!’’
তাঁর অবিস্মরণীর কৃতিত্ব হলো বাংলা একাডেমি থেকে দুই খণ্ডে প্রকাশিত ‘বাংলা ভাষার আঞ্চলিক অভিধান’ (১৯৬৫) সম্পাদনা। তাঁর নেতৃত্বে আঞ্চলিক শব্দের অভিধান সংকলনের প্রচেষ্টা ১৯৫৮ সালে শুরু হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ৪৫৩ জন সংগ্রাহকের কাছ থেকে ৩ বছরে ১,৬৬,২৪৬টি শব্দ সংগৃহীত হয়। সম্পাদকবৃন্দ ৭৫,০০০টি শব্দ নির্বাচন করেন। সম্পাদনার কাজ করেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে দেশের কয়েকজন বিশিষ্ট ভাষাতাত্ত্বিক। তাঁদের সম্পাদিত ‘আঞ্চলিক ভাষার অভিধান’ ১৯৬৫ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুয়ায়ী, এগুলোর পাশাপাশি তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হলো: সিন্দবাদ সওদাগরের গল্প (১৯২২), ভাষা ও সাহিত্য (১৯৩১), বাঙ্গালা ব্যাকরণ (১৯৩৬), দীওয়ান-ই-হাফিজ (১৯৩৮), শিকওয়াহ ও জওয়াব-ই-শিকওয়াহ (১৯৪২), রুবাইয়াত-ই-উমর খয়্যাম (১৯৪২), Essays on Islam (১৯৪৫), আমাদের সমস্যা (১৯৪৯), পদ্মাবতী (১৯৫০), বাংলা সাহিত্যের কথা (দুই খণ্ড ১৯৫৩, ১৯৬৫), বিদ্যাপতি শতক (১৯৫৪), বাংলা আদব কী তারিখ (১৯৫৭), বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস (১৯৫৭), কুরআন শরীফ (১৯৬৩), অমরকাব্য (১৯৬৩), সেকালের রূপকথা (১৯৬৫) প্রভৃতি। মুহম্মদ আবদুল হাইয়ের সঙ্গে তাঁর যুগ্ম-সম্পাদনায় রচিত Traditional Culture in East Pakistan (১৯৬১) একখানা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। তাঁর Buddhist Mystic Songs (১৯৬০) গ্রন্থটি চর্যাপদের অনুবাদ ও সম্পাদনা কর্ম। তিনিই প্রথম যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করেন যে, চর্যাপদ সম্পূর্ণ বাংলা ভাষায় রচিত এবং পরবর্তী সময়ে তিনি চর্যাপদের ধর্মতত্ত্ব নিয়েও আলোচনা করেন।
Advertisement
তিনিই প্রথম ১৯৪০ সালে ভারতের মুসলিম শিক্ষা কংগ্রেসে পূর্ব বাংলায় ভাষা চর্চা উন্নয়ন ও গবেষণার জন্য একটি প্রতিষ্ঠান গঠনের প্রস্তাব করেন। ১৯৪৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার কার্জন হলে অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলনের অভিভাষণে তিনি সেই প্রতিষ্ঠানের নাম ‘বাংলা একাডেমী’ রাখার প্রস্তাব করেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘স্বাধীন পূর্ববাংলার স্বাধীন নাগরিক রূপে আজ আমাদের প্রয়োজন হয়েছে সর্বশাখায় সুসমৃদ্ধ এক সাহিত্য... আমাদিগকে একটি একাডেমী (পরিষদ্) গড়তে হবে, যার কর্ত্তব্য হবে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষা থেকে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সাহিত্য বিষয়ে শ্রেষ্ঠ গ্রন্থাবলীর অনুবাদ বাংলায় প্রকাশ।’’
জীবনব্যাপী ভাষা ও সাহিত্য সাধনার স্বীকৃতিস্বরূপ এই জ্ঞানতাপস পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ‘প্রাইড অব পারফরম্যান্স’ এবং ১৯৬৭ সালে ফরাসি সরকার কর্তৃক ‘নাইট অব দি অর্ডারস অব আর্ট লেটার্স’ পদকে ভূষিত হন। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক মরণোত্তর ‘ডি লিট’ উপাধি এবং ১৯৮০ সালে মরণোত্তর ‘স্বাধীনতা পদকে’ ভূষিত হন। আজীবন উদ্যমী এই অসাম্প্রদায়িক মানুষটি সর্বদা ছিলেন কর্মচঞ্চল। জীবনসায়াহ্নে যখন হাসপাতালের বিছানায়, তখন ডানহাতের লেখার শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। খুব দুঃখিত হয়ে বললেন, ‘‘ভালো হয়ে নিই, আমার বাম হাতে লেখার অভ্যাস করবো।’ জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ জুলাই ঢাকায় পরলোকগমন করেন।
এ মহান মনীষী বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জন্য যা করেছেন, তা প্রবাদপ্রতিম। বাংলা ভাষাকে এবং শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিকে স্বীয় জ্ঞানসৌকর্যে তিনি সুউচ্চ মর্যাদা দান করেছেন। তিনি চিরদিন বাঙালির পরম পূজনীয় হয়ে থাকবেন। আজ জ্ঞানতাপস ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ৫৪তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি।
লেখক: কর্মকর্তা, অভিধান ও বিশ্বকোষ উপবিভাগ, গবেষণা, সংকলন এবং অভিধান ও বিশ্বকোষ বিভাগ, বাংলা একাডেমি।
এসইউ/জেআইএম