বিনোদন

অভিনয়ের পিপাসা একটুও মেটেনি: ফজলুর রহমান বাবু

নন্দিত অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু। অভিনয়ে জন্য একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ দেশে বিদেশে অসখং পুরস্কার লাভ করেছেন। দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি শোবিজ ভুবনে বিচরণ করছেন। তার ঝুলিতে রয়েছে অসংখ্য জনপ্রিয় নাটক ও সিনেমা। সম্প্রতি তার সঙ্গে আলাপ হয় জাগো নিউজের বিশেষ আয়োজন ‘জাগো তারকা’র সঙ্গে। সেখানেই জানান তার জীবনের নানান গল্প।

Advertisement

আরও পড়ুন: শ্যাম বেনেগালের বঙ্গবন্ধু সিনেমায় ফজলুর রহমান বাবু

জাগো নিউজ: চার দশকেরও বেশি সময় ধরে আপনি নিয়মিত অভিনয় করে যাচ্ছেন। এখন আপনি আমাদের দেশের নন্দিত একজন অভিনেতা। সবাই আপনাকে ভীষণ ভালোবাসে। এই জীবনটা আপনি কেমন উপভোগ করছেন?

ফজলুল রহমান বাবু: আমি তো একজন অভিনেতাই হতে চেয়েছিলাম। আমি খুবই সৌভাগ্যবান। বাংলাদেশে খুব কম মানুষই আছে যারা নিজেদের পছন্দের কাজটিকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে পারেন। আমার সবচেয়ে পছন্দের কাজ হচ্ছে অভিনয় করা। আমি পেশায় একজন ব্যাংকার ছিলাম। তবে আমি অভিনয় পেশাটাকে বেছে নিয়েছি এবং খুব উপভোগ করি। একদম ছাত্রজীবন থেকে অভিনয়টা আমি এনজয় করি।

Advertisement

আরও পড়ুন: বেরিয়ে যাওয়া দর্শক ঘরে ফেরানো কঠিন : ফজলুর রহমান বাবু

জাগো নিউজ: আপনার শুরুর গল্পটা শুনতে চাই?

ফজলুল রহমান বাবু: শুরুটা ইন্টারমিডিয়েটের সময় থেকে হয়েছে। ফরিদপুরের খুব প্রাচীন একটি নাট্য সংগঠন আছে। নাম ‘টাউন থিয়েটার’। প্রথমে এই নাট্যদলের সঙ্গে যুক্ত হই। ১৯৭৮ সালে জাতীয় নাট্য উৎসব হয়েছিল। তখন সারাদেশ থেকে প্রতিটি জেলায় একটি করে নাট্যদল গঠন করা হয়। ঢাকা চট্টগ্রাম মিলিয়ে মাসব্যাপী একটি উৎসব হয়। সেই উৎসবে ফরিদপুরের টাউন থিয়েটার একটি নাটক করেছিল। নাটকের নাম ছিল তালেব মাস্টারের হালখাতা। সেখানে আমি কিশোর চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। সেই থেকেই আমার শুরু। এরপর ঢাকায় এসে আরণ্যক নাট্যদলের প্রতিষ্ঠাতা আমার গুরু ও ওস্তাদ মামুনুর রশীদের কাছে এসে আমার অভিনয়ের আকাঙ্ক্ষাটা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে শুরু করে। সেই থেকে এখনো অভিনয় শিখে যাচ্ছি।

জাগো নিউজ: অভিনয়ের সবকটি মাধ্যমে আপনি অভিনয় করেছেন। কোন মাধ্যমে অভিনয় করতে আপনি সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?

Advertisement

ফজলুল রহমান বাবু: সবকটি মাধ্যমেই অভিনয় করতে আমি এনজয় করি। স্বাচ্ছন্দ্য নয় বরং উপভোগ করি। টেলিভিশন, চলচ্চিত্র, ওটিটি, ইউটিউব, ছাড়াও আমি রেডিওতে নিয়মিত অভিনয় করি। প্রতি সপ্তাহেই আমার নাটক রেডিওতে প্রচার হয়। তবে আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা হচ্ছে মঞ্চ। কারণ মঞ্চেই আমার জন্ম।

জাগো নিউজ: অভিনয়ের পাশাপাশি গান গেয়েও আপনি শ্রোতাদের মন জয় করেছেন। আপনার গানের শুরুটা কিভাবে হলো?

ফজলুল রহমান বাবু: আমি জানতাম এমন প্রশ্ন আপনি করবেন। শৈশব থেকেই আমি প্রচুর গান শুনতাম। গানের প্রতি ভালোলাগা থেকেই গুনগুন করে গান তুলতাম এবং বন্ধুদের শোনাতাম। তবে আমার গান শেখা হয়নি। অভিনয়ে এসে বুঝতে পারলাম অভিনয়ের সঙ্গে গানের একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। একজন ভালো ও পূর্ণাঙ্গ অভিনেতা হতে হলে গান, নাচ, পেইন্টিংসহ সবই জানতে হয়।

আরও পড়ুন: ঈদে তিন গান নিয়ে আসছেন ফজলুর রহমান বাবু

জাগো নিউজ: আপনি বলেছেন প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা নেওয়া হয়নি শুধুমাত্র রেওয়াজ বা কণ্ঠস্বর ঠিক রাখার জন্য গানের চর্চা করেছেন তবুও এতো সুন্দর গান কিভাবে গাওয়া সম্ভব?

ফজলুল রহমান বাবু: ওটা তো উপরওয়ালা জানে।

জাগো নিউজ: কখনো কি মনে হয়েছে অভিনয়ের পাশাপাশি সংগীতশিল্পী হয়ে উঠবেন?

ফজলুল রহমান বাবু: না, কখনো তা মনে হয়নি। আমি কখনো নিজেকে সংগীতশিল্পী মনেও করি না। যদিও আমার গান সারাদেশের প্রান্তিক মানুষ খুব পছন্দ করে। তবুও যে বিষয়ে আমার আদ্যোপান্ত জ্ঞান নেই। সে বিষয়ে নিজেকে পরিচয় দিতে পছন্দ করি না। আমি আসলে সবার অনুরোধে গান করি। আমার সৌভাগ্য যে সবাই আমার গান পছন্দ করেন।

জাগো নিউজ: শুধু গান নয়, পুঁথি পাঠেও আপনি পারদর্শীতা দেখিয়েছেন। মুজিব শতবর্ষে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে আপনি পুঁথি পাঠ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী খুব মনোযোগ সহকারে শুনেছেন। এই অভিজ্ঞতা শুনতে চাই।

ফজলুল রহমান বাবু: এটা অবশ্যই একটি মজার অভিজ্ঞতা। আমি মুম্বাইতে একটি শুটিংয়ের কাজে ছিলাম তখন। আমি আগে কখনো পুঁথি পাঠ করিনি। সম্ভবত আসাদুজ্জামান নূর ভাই পুঁথিপাঠের জন্য আমাকে স্মরণ করেছিলেন। আমার প্রতি নূর ভাইয়ের বিশ্বাস ছিল। এতো বড় আয়োজনে আমি পুঁথি পাঠ করবো এটা আমার জন্য বেশ ভয়ের বিষয় ছিল। সবাই খুব খুশি হয়েছিলেন এবং প্রধানমন্ত্রী নিজেও খুব খুশি হয়েছিলেন। আমার সৌভাগ্য যে কাজটি আমি করেছিলাম।

জাগো নিউজ: আপনি কি কি পুরস্কার পেয়েছেন?

ফজলুল রহমান বাবু: সবচেয়ে বড় পুরস্কার হিসেবে পেয়েছি মানুষের ভালোবাসা। এছাড়া জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছি ছয়বার। লাক্স চ্যানেল আই পুরস্কার, ওটিটির জন্য চরকির অ্যাওয়ার্ড, মেরিল প্রথম আলো অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি চারবার, আরটিভি স্টার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি পাঁচবার। বাংলাদেশের প্রায় সব ধরনের পুরস্কার আমি পেয়েছি।

জাগো নিউজ: সময়ের প্রয়োজনে আপনি অনেক নতুন ও তরুণ নির্মাতার সঙ্গে কাজ করেছেন। তরুণ নির্মাতাদের মধ্যে কেমন সম্ভাবনা রয়েছে?

ফজলুল রহমান বাবু: তরুণ নির্মাতাদের মধ্যে অনেকেই আছে সম্ভাবনাময়। খুবই মেধাবী আর ব্রাইট মনে হয়। তাদের সঙ্গে কাজ করে আমি খুবই কম্ফোর্ট।

জাগো নিউজ: তরুণ যারা অভিনয়ে আসতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে কি বলবেন?

ফজলুল রহমান বাবু: নতুনদের অবশ্যই জানতে হবে, শিখতে হবে এবং অনুশীলন করতে হবে।

জাগো নিউজ: আপনি সব ধরনের অভিনয় নিজের মধ্যে ধারণ করতে পারেন বা চরিত্রের সঙ্গে নিখুঁতভাবে মিশে যান এটার কৌশল কি?

ফজলুর রহমান বাবু: আমার মনে হয় না আমি নিখুঁতভাবে অভিনয় করতে পারি। তবে আমি চেষ্টা করি। আমার গুরু মামুনুর রশীদের কাছে জিজ্ঞাসা করেছিলাম একজন ভালো অভিনেতা কি করে হওয়া যায়? তিনি বলেছিলেন, যে মানুষকে এবং সমাজকে যতো ভালোভাবে বুঝতে পারে, সে ততো ভালো অভিনয় করতে পারে। যতো ভালোভাবে চরিত্রকে বিশ্লেষণ করতে পারা যায় ততো ভালো অভিনেতা হওয়া যায়।

জাগো নিউজ: অভিনেতা হিসেবে আপনি কতোটা সফল? ফজলুর রহমান বাবু: মানুষ যেহেতু আমাকে পছন্দ করে সে দিক দিয়ে আমি সফল।

জাগো নিউজ: অভিনয়ের পিপাসা কতোটা মিটেছে?ফজলুর রহমান বাবু: একটুও মেটেনি।

জাগো নিউজ: কাকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন?ফজলুর রহমান বাবু: নিজের সাথেই আমি নিজের প্রতিযোগিতা করি। আমার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।

এমএমএফ/জিকেএস