রাজনীতি

সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্তির ১ দফা ঘোষণা ফখরুলের

সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদের বিলুপ্তি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তির দাবিতে ‘এক দফা’ ঘোষণা করেছে বিএনপি।

Advertisement

বুধবার (১২ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে আয়োজিত মহাসমাবেশ থেকে এই এক দফার ঘোষণা দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জনগণের ভোটাধিকার হরণকারী ফ্যাসিবাদী, কর্তৃত্ববাদী সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা, নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির এক দফা ঘোষণা করছি।’

আরও পড়ুন: আ’লীগের ভোট চুরির প্রকল্প গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে: আমীর খসরু

Advertisement

তিনি বলেন, ‘এ দাবি আদায়ে আগামী ১৮ জুলাই সকাল ১০টা থেকে ৪টা পর্যন্ত গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করা হবে। একইভাবে এদিন সারাদেশের মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে একই কর্মসূচি করা হবে। এর পরদিন ১৯ জুলাই ঢাকার আব্দুল্লাহপুর থেকে বাহাদুরশাহ পার্ক পর্যন্ত পদযাত্রা কর্মসূচি করা হবে।’

ফখরুল বলেন, ‘এ কর্মসূচি ঘোষণা দিলাম। ওইদিন কর্মসূচি করার আগেই দাবি মেনে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে দেবেন, পদত্যাগ করে বিদায় নেবেন। যদি বিদায় না নেন, তারপর তো আরও কর্মসূচি আসছেই। কঠোর কর্মসূচি দিয়ে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেবে জনগণ।’

আরও পড়ুন: ২০১৪-১৮ সালে নির্বাচন খেয়েছেন, আর খেতে দেবো না: ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকের এই এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা ব্যক্তি মির্জা ফখরুলের নয়, তরুণ প্রজন্মের তরুণ্যের নেতা তারেক রহমানের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা। দেশের ১৮ কোটি মানুষ, যারা গণতন্ত্রের জন্য তাকিয়ে আছেন, তাদের জন্য ঘোষণা।’

Advertisement

বর্তমান সরকারের আমলে নেতাকর্মীদের খুন-গুম, মামলা-হামলার শিকার হতে হয়েছে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এ সরকার আমাদের ছয় শতাধিক নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। এ স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার শত শত মায়ের বুক খালি করেছে। সন্তানদের এতিম করেছে। সরকারের পেটোয়া বাহিনীর নির্যাতনে অনেকে পঙ্গু হয়ে বিছানায় কাতরাচ্ছেন। এমন অবস্থা থেকে আমাদের তরুণ-যুবকরা রুখে দাঁড়াচ্ছেন। তারা তারুণ্যের নেতা তারেক রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে।’

আরও পড়ুন: ১৮ জুলাই ঢাকাসহ সারাদেশে পদযাত্রা

‘দেখুন, আজকের সমাবেশে চারদিকে তরুণ-যুবকের মুখ। তাদের প্রত্যাশা- একটি নতুন বাংলাদেশ দেখতে চাই। এ প্রত্যাশা নিয়ে সবাই এখানে এসেছেন। তারা পরিবর্তন চান। তারা গুম হওয়া মানুষগুলো ফেরত চান। সরকারকে বলবো- দিনে দিনে বাড়িতেছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ। বহু ঋণ হয়ে গেছে, সব শোধ করতে হবে’ যোগ করেন মির্জা ফখরুল।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘চালের দাম এখন ৮০-৯০ টাকা। অথচ তারা (আওয়ামী লীগ) কথা দিয়েছিল ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবেন। ঘরে ঘরে চাকরি দেবেন। চাকরি ঠিকই দিয়েছে, সেটা তাদের নিজেদের লোকদের। যদিও তাদের কাছ থেকেও ১০ লাখ, ১৫ লাখ টাকা ঘুস নিয়েছেন।’

ফখরুল বলেন, ‘কৃষকদের কথা দিয়েছিল- বিনামূল্যে সার দেবে। সেই সারের দাম এখন তিন-চারগুণ বেড়েছে। মধ্যবিত্তদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। অথচ মন্ত্রীরা বলেন, উন্নয়নশীল দেশে দাম তো বাড়বেই। সবাই ভালো আছে, খেয়ে-দেয়ে শুয়ে বসে ভালোই চলছে।’

আরও পড়ুন: আ’লীগের সমাবেশে লোক নেই, আগামীতে থাকবেই না: আব্বাস

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী খাদিজার মুক্তি চেয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তার (খাদিজা) অপরাধ, সে একটি ইউটিউব চ্যানেলে উপস্থাপনা করেছিল। যেখানে বক্তারা কিছু কথা বলেছিলেন। সেই কারণে তাকে রাতের অন্ধকারে তুলে নিয়ে গেছে। তার জামিনের জন্য হাইকোর্ট-সুপ্রিম কোর্টে গিয়েও মুক্তি মেলেনি। জামিন দিয়েও তা বাতিল করা হয়েছে। একটা নাবালক মেয়েকে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে থাকতে হচ্ছে। তার মা বলছেন, আমার মেয়ের কী অপরাধ, তা তারা জানেন না।’

সরকার শুধু দেশের নির্বাচনব্যবস্থা নয়, অর্থনীতি, স্বাস্থ্যব্যবস্থা সব ধ্বংস করেছে অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাংকগুলো সব ফাঁকা হয়ে গেছে। দেশ থেকে টাকা নিয়ে আমেরিকায় রাখছিলেন, আমেরিকা যেই স্যাংশনস দিয়েছে, সেখান থেকে অন্য দেশে সরাচ্ছেন। সেই টাকা দেশে ফেরাতে আবার প্রণোদনাও দেওয়া হচ্ছে। কালো টাকা দেশে আনতেও প্রণোদনা দিতে হচ্ছে।’

কেএইচ/এএএইচ/জিকেএস