প্রায় দশ দিনের বেশি সময় ধরে আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে শুরু হয়েছে অতিবৃষ্টি। এতে আম বাগানে দেখা দিয়েছে মাছি পোকার (ফ্রুট ফ্লাই) উপদ্রব। মাছি পোকার কামড়ে ফেটে যাচ্ছে আম। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন হাজারো আমচাষি। গাছেই পচে নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার ফজলি আম।
Advertisement
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতিঘন বৃষ্টি হলেই দেখা যায় এই মাছি পোকা। তবে এখন পর্যন্ত এ পোকা দমনের কোনো ব্যবস্থা করতে পারেননি বাগানিরা।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন আম বাগান ঘুরে দেখা যায়, সারি সারি গাছে দুলছে ফজলি জাতের আম। তবে বেশির ভাগ আমেই কামড় বসিয়েছে ফলের মাছি পোকা (ফ্রুট ফ্লাই)। এতে ফেটে পচে যাচ্ছে আম। কারও কাছে গিয়েই এ সমস্যার প্রতিকার মিলছে না। এতে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে চাষিদের।
জেলায় সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদন হয় শিবগঞ্জে। এ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের আমচাষি এনামুল হক বলেন, প্রায় ১০ দিন থেকে শুরু হয়েছে অতিঘন বৃষ্টি। কয়েকদিন আগেই ফজলি জাতের আম বাগানে মাছি পোকার উপস্থিতি দেখতে পাই। কীটনাশক স্প্রেও করেছি। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি। প্রতিনিয়ত এ মাছি পোকা আম ফুটা করে দিচ্ছে। আর পোকা ফুটা করলে সেই আম ফেটে নষ্ট হয়ে যায়। পচে যায়।
Advertisement
আরও পড়ুন: শেষ হচ্ছে গুটি জাতের আম, আসছে ফজলি
তিনি আরও বলেন, আমার দুই বিঘা জমিতে ১৪টি ফজলি জাতের আম গাছ রয়েছে। এতে আমার ধারণা প্রায় ১০০ মণ আম ছিল। কিন্তু অর্ধেকের বেশি আম নষ্ট হয়ে গেছে। সেগুলো গরুকে খাওয়াচ্ছি। এছাড়া অনেক আম বাগানে ফেলে দিচ্ছি। কারণ যে পরিমাণ আম ফেটেছে তা গরুতেও খেতে পারছে না। এসব আম পেড়ে বিক্রিও করতে পারছি না। কারণ আমের দাম এখন খুবই কম।
উপজেলার কানসাট বাজার এলাকার আমচাষি রিয়াল উদ্দিন বলেন, সকাল থেকে আম পাড়া শুরু করেছি৷ এখন পর্যন্ত যতগুলো ভালো আম নামিয়েছি ঠিক ততোগুলো ফাটা আম পেয়েছি। এক কথায় বলা যায়, দুই ডালি আম পাড়লে এক ডালি ফাটা।
তিনি বলেন, এখন আমের বাজার এতটাই মান্দা যে কানসাট বাজারে আম নিচ্ছে না। আর নিলেও দাম অনেক কম। এদিকে, আম সব ফেটে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
Advertisement
আরও পড়ুন: আতিয়ারের ‘ব্রুনাই কিং’ ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে
শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রোডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খান শামীম বলেন, জেলার সব থেকে বেশি ফজলি আম উৎপাদন হয় শিবগঞ্জ উপজেলায়। তবে এখানে সমস্যা হচ্ছে ফলের মাছি পোকা (ফ্রুট ফ্লাই)। বৃষ্টি হলেই আমে কামড় মারে ফ্রুট ফ্লাই। এবারও প্রায় সব ফজলি বাগানেই এই পোকা আক্রমণ করেছে। এই পোকা আক্রমণ করলে ৩০ শতাংশর বেশি আম নষ্ট হয়ে যায়। সেই হিসাবে কোটি টাকার বেশি মূল্যের আম নষ্ট করেছে এই পোকা।
তিনি আরও বলেন, সরকার যদি পদক্ষেপ নেয় এ পোকা দমন করা সম্ভব। তবে কোনো কীটনাশক স্প্রে করে এ পোকা দমন করা যাবে না। সরকারের কাছে আমার দাবি, এ এলাকায় সেক্স ফেরোমন ব্যবহার করা হোক। তবেই এই পোকার বংশবৃদ্ধি রোধ করা সম্ভব। নয়তো প্রতি বছরই কোটি কোটি টাকার আম নষ্ট হবে এই মাছি পোকার কামড়ে।
তিনি আরও বলেন, কৃষি বিভাগ বলছে এ পোকার হাত থেকে বাঁচতে ফুড ব্যাগিং ব্যবহার করতে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ফুড ব্যাগিং করা আমের মূল্য বাজারে অনেক কম। তাহলে খরচ করে ফুড ব্যাগিং করে আমার লাভ কী?
চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, বৃষ্টি হলেই ফলের মাছি পোকা (ফ্রুট ফ্লাই) আতঙ্কে থাকে ফজলি চাষিরা। এই পোকা ২০-৩০ শতাংশ আম নষ্ট করে। তবে কোনো কীটনাশক স্প্রে করে এ সমস্যার সমাধান হয় না। এ সমস্যার সমাধান হচ্ছে ফুড ব্যাগিং।
আরও পড়ুন: কানসাট আম বাজারে ৫৪ কেজিতে হয় একমণ!
জানতে চাইলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক পলাশ সরকার বলেন, বৃষ্টি হলে এই মাছি পোকার আক্রমণ বেড়ে যায়। তবে ফজলি আম চাষিদের পরামর্শ দিয়েছিলাম ফুড ব্যাগিং পদ্ধতি ব্যবহার করতে। যারা ফুড ব্যাগিং পদ্ধতি ব্যবহার করছেন তারা পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেয়েছেন। যারা এ পদ্ধতি ব্যবহার করেননি তাদের বাগানে এ পোকা আক্রমণ করেছে। তবে বর্তমানে আকাশ পরিষ্কার রয়েছে, আশা করছি আর মাছির আক্রমণ হবে না।
এফএ/এএইচ/এমএস