দেশজুড়ে

ভ্যাকসিনের অভাবে ঠাকুরগাঁওয়ে সাপের কামড়ে মরছে মানুষ

ঠাকুরগাঁওয়ের হাসপাতালগুলোতে অ্যান্টিভেনম ভ্যাকসিন না থাকায় চিকিৎসার অভাবেই মারা যাচ্ছেন সাপে কামড়ানো রোগীরা। ভ্যাকসিন না থাকায় চলতি জুলাই মাসেই এ জেলায় বিষধর সাপের কামড়ে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। দ্রুততম সময়ে ভ্যাকসিন সরবরাহ করা না গেলে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Advertisement

এর আগে মে মাসে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম ভ্যাকসিন না থাকায় চিকিৎসার অভাবে মারা যান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক প্রধান শিক্ষক। এই ঘটনা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হলে দ্রুততম সময়ে ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করে সদর হাসপাতাল। তবে সেই ঘটনার পরও ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো।

জানা গেছে, রোববার (৯ জুলাই) একইদিনে হরিপুর উপজেলার গেদুড়া ইউনিয়নের রাজা দিঘী গ্রামের মৃত খেলদার চন্দ্রের স্ত্রী প্রমিলা রাণী (৪৭) ও রাণীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়নের ধুমপুকুর গ্রামের চাপোয়া রাম (৪০) সাপের কামড়ে প্রাণ হারান। এর আগে ২ জুলাই বালিয়ডাঙ্গী হরিনমারি এলাকার করিমুল চৌধুরীর ছেলে মিরাজ (৩২) সাপের কামড়ে মারা যান।

তাদের পরিবার ও স্থানীয়দের অভিযোগ, সীমান্তবর্তী এ দুই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভ্যাকসিন না থাকার কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে।

Advertisement

এই ঘটনায় হরিপুর গেদুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, উপজেলায় সাপে কামড়ানো রোগীদের জন্য ভ্যাকসিন না থাকায় তারা ওঝার কাছে যাচ্ছেন। ফলে আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা পাচ্ছেন না এ সকল এলাকার বাসিন্দারা। চিকিৎসার অভাবেই মারা যাচ্ছে মানুষ।

বালিয়ডাঙ্গী উপজেলার সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, প্রায় ৮ মাস থেকে এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোনো অ্যান্টিভেনম নেই। অথচ কৃষিপ্রধান এই এলাকায় শস্যক্ষেতে অনেকেই সাপের কামড়ের শিকার হচ্ছেন, বর্ষাকালে এই পরিমাণ বেড়ে যায়। তবুও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ভ্যাকসিন সরবরাহে অনিহার কারণ ঠিক বোধগম্য হচ্ছে না। সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করছে চিকিৎসা ব্যবস্থার পেছনে, কিন্তু কাজে আসছে না সাধারণ মানুষের।

এই বিষয়ে রাণীশংকৈল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্মকর্তা ডা. আইনাল হক জাগো নিউজকে জানান, আগে আমাদের এখানে অ্যান্টিভেনমের সরবরাহ ছিল। মাঝখানে কিছু সমস্যার কারণে আর সরবরাহ পাইনি। দ্রুতই ভ্যাকসিন আনা হবে।

ভ্যাকসিন সংকটের কথা স্বীকার করে জেলা সিভিল সার্জন ডা. নুর নেওয়াজ আহমেদ বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ের হাসপাতালে সাপের বিষের ভ্যাকসিন না থাকার বিষয়টা আমি অবগত আছি। আমি একাধিকবার ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিচালকদের তাগাদা দিয়েছি। তারা যদি না কেনে তাহলে এর দায়ভার তাদের।

Advertisement

তিনি বলেন, দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সংকট বেশি থাকায় সরকার সেদিকে সব ভ্যাকসিন সরবরাহ করছে। তবে নিজ উদ্যোগে ঠাকুরগাঁওয়ের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো কেন ভ্যাকসিন কিনছে না তা আমার বোধগম্য নয়। কারণ সরকার তাদের টাকা দিয়েছে এবং প্রয়োজনীয় কাজে সেটা ব্যবহারের ক্ষমতাও দিয়েছে।

এফএ/জিকেএস