রাজনীতি

জামায়াত ছাড়াই এক দফার আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপি

#স্মরণকালের সর্বোচ্চ লোকসমাগমের টার্গেট#তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাসে আলটিমেটাম#আসছে রোডমার্চ-লংমার্চ-অবস্থান কর্মসূচিও#আন্দোলনে থাকছে না ‘বিশ্বস্ত সঙ্গী’ জামায়াত

Advertisement

সরকার পতনে এক দফার আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বিএনপি। বুধবার (১২ জুলাই) রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে দলটি। হঠাৎ আয়োজিত এ সমাবেশে স্মরণকালের সর্বোচ্চ জনসমাগম ঘটাতে চায় বিএনপি। ঢাকা ও এর আশপাশের জেলার নেতাকর্মীরা এ সমাবেশে যোগ দেবেন। এখান থেকে সরকার পতনে এক দফার আন্দোলন ঘোষণা করা হবে। এক দফার এ আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে থাকবে আরও ৩৫টি দল। তারা যুগপৎ কর্মসূচি করবে। তবে এ আন্দোলনে থাকছে না বিএনপির দীর্ঘদিনের সঙ্গী জামায়াতে ইসলামী।

এদিকে, বুধবারের সমাবেশ থেকে ঠিক কী ধরনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে- তা নিয়ে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করছে দলটি। খোদ বিএনপি নেতাকর্মীরাও এ ব্যাপারে পুরোপুরি অন্ধকারে। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা- সমাবেশ থেকে হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি আসবে। দায়িত্বশীল পর্যায়ের নেতারা বলছেন, দীর্ঘদিন বিএনপির আন্দোলন যেভাবে চলমান, ঠিক সেভাবেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচি আসবে। এর মধ্য দিয়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সরকারের পতন ঘটানো হবে।

দলীয় সূত্র বলছে, নয়াপল্টনে বুধবার সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত হঠাৎ নেওয়া হয়েছে। তবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ শীর্ষ নেতাদের নির্দেশনা- এ সমাবেশে স্মরণকালের সর্বোচ্চ লোক সমাগম ঘটাতে হবে। সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন নেতাকর্মীরা। ঢাকা মহানগর ও ঢাকার আশপাশের জেলার নেতাকর্মীদের এ সমাবেশে অংশ নিয়ে জোরালে ভূমিকা রাখার নির্দেশনা রয়েছে। এখান থেকে চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা হবে। আগামী দিনে কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হবে, তা নিয়ে আন্দোলনে সহযোগী ৩৫ দলের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি এবং বিএনপি যে ১০ দফা দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন করছে, এটিই এখন এক দফায় পরিণত হয়েছে। তৃর্ণমূলের নেতারা প্রত্যাশা করেন, এ ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের জন্য পরিস্থিতি বুঝে হরতাল, অবরোধ, ঘেরাওসহ কঠোর কর্মসূচিতে যেতে হবে

আরও পড়ুন>> বিএনপির তারুণ্যের সমাবেশে ‘উপেক্ষিত’ তরুণরা 

বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, সমমনা ৩৫ দলের সঙ্গে বৈঠক হলেও জামায়াতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক হয়নি। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে দলটির কিছু নেতার সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। সম্প্রতি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একটি বক্তব্য ঘিরে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এরপর জামায়াত ছাড়াই বিএনপি এক দফার আন্দোলনে যাচ্ছে। জামায়াত নিজেদের মতো করে কর্মসূচি করবে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন সমীকরণ দেখা যেতে পারে বলেও জানিয়েছে সূত্রটি।

কর্মসূচি নিয়ে ‘অন্ধকারে’ নেতাকর্মীরারাত পোহালে নয়াপল্টনে সমাবেশ। সেখান থেকে ঘোষণা হবে এক দফার আন্দোলন কর্মসূচি। কী কর্মসূচি আসতে যাচ্ছে, তা নিয়ে পুরোপুরি অন্ধকারে বিএনপি নেতাকর্মীরা। দলের একাধিক সূত্রের দাবি, সরকারকে পদত্যাগ এবং সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পাসের জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হবে। পাশাপাশি ঘোষণা করা হবে একগুচ্ছ গতানুগতিক কর্মসূচি। আলোচনায় রয়েছে রোডমার্চ, লংমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচিও।

Advertisement

আরও পড়ুন>> নয়াপল্টনে সমাবেশ ঘিরে পাড়া-মহল্লায় বিএনপির মাইকিং

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশ জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিএনপি সবসময় জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছে। জনগণের স্বার্থে ও পক্ষে আন্দোলন কখনো বৃথা যায় না। গণতন্ত্রকামী জনগণকে দাবিয়ে রাখার জন্য সরকার প্রতিনিয়ত হামলা, মামলা, নির্যাতন ও গ্রেফতার করছে। নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি এবং বিএনপি যে ১০ দফা দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন করছে, এটিই এখন এক দফায় পরিণত হয়েছে। তৃর্ণমূলের নেতারা প্রত্যাশা করেন, এ ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের জন্য পরিস্থিতি বুঝে হরতাল, অবরোধ, ঘেরাওসহ কঠোর কর্মসূচিতে যেতে হবে।’

সমাবেশে সহযোগিতা চাইতে ডিএমপিতে বিএনপি নেতারা/ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী জেলা বিএনপির সদস্য ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন বলেন, ‘দল যেহেতু এক দফার আন্দোলন কর্মসূচিতে যাচ্ছে। আমরা চাই, হরতাল, অবরোধ, ঘেরাওয়ের মতো কঠোর কর্মসূচি আসবে।’

আরও পড়ুন>> মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে উজ্জীবিত বিএনপির মধ্যম সারির নেতৃত্ব!

যা বলছেন কেন্দ্রীয় নেতারাজানতে চাইলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স জাগো নিউজকে বলেন, ‘সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি আসতেও পারে।’

 

বিএনপিসহ ৩৬টি রাজনৈতিক দল যুগপৎ আন্দোলন করছে। সরকারবিরোধী আন্দোলনে নতুন ডাক দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে পুরো জাতিকে একসঙ্গে করে যুগপৎ আন্দোলনকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগিয়ে নেওয়া হবে। সেজন্য ১২ জুলাই যৌথ ঘোষণা দেওয়া হবে। দলগুলো নিজ নিজ জায়গা থেকে এ ঘোষণা দেবে। এর মাধ্যমে আমরা দাবি আদায়ে সফল হবো

 

দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্মরণকালের সর্বোচ্চ মানুষের উপস্থিতিতে আগামীকাল (বুধবার) সমাবেশ হবে। সেখান থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা আসবে।’

ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘বিএনপি এক দফার আন্দোলনে কী কর্মসূচি দেবে, তা আগামীকালের (বুধবার) সমাবেশ থেকে জানা যাবে। সরকার পতনে এক দফার আন্দোলন কর্মসূচিতে দলীয় নেতাকর্মীদের বাইরেও সর্বস্তরের মানুষকে শামিল হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিএনপিসহ ৩৬টি রাজনৈতিক দল যুগপৎ আন্দোলন করছে। সরকারবিরোধী আন্দোলনে নতুন ডাক দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে পুরো জাতিকে একসঙ্গে করে যুগপৎ আন্দোলনকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগিয়ে নেওয়া হবে। সেজন্য ১২ জুলাই যৌথ ঘোষণা দেওয়া হবে। দলগুলো নিজ নিজ জায়গা থেকে এ ঘোষণা দেবে। এর মাধ্যমে আমরা দাবি আদায়ে সফল হবো।’

আরও পড়ুন>> চূড়ান্ত আন্দোলনে বিএনপির যত চ্যালেঞ্জ

কী ধরনের কর্মসূচি আসছে, জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে এ অবৈধ সরকারের পতন ঘটানো হবে।’ তাহলে কি গতানুগতিক কর্মসূচি আসছে- এমন প্রশ্নের জবাবে পাল্টা প্রশ্ন করেন তিনি। ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচির মধ্যে নতুনত্ব রয়েছে। আমরা সারাদেশে গণমিছিল করেছি, পদযাত্রা করেছি, এটা কি আমাদের কর্মসূচির নতুনত্ব নয়?’

সমাবেশ সফল করতে পাড়া-মহল্লায় চলছে মাইকিং/ছবি: সংগৃহীত

বিএনপি কর্মসূচি প্রণয়নের ক্ষেত্রে ভিসানীতি বিবেচনায় রাখছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভিসানীতি বিএনপির জন্য প্রযোজ্য নয়।’ হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি প্রসঙ্গে মঈন খান বলেন, ‘হরতাল-অবরোধ এড়িয়ে যাচ্ছি বা ঝাঁপিয়ে পড়ছি- এর কোনোটিই প্রযোজ্য নয়।’

 

এটা (বিএনপি-জামায়াত সম্পর্ক) আওয়ামী লীগকে জিজ্ঞাসা করেন। দীর্ঘদিন পর জামায়াতে ইসলামীকে তারা (সরকার) তো সমাবেশ করতে দিয়েছেন। তাই এ প্রশ্ন (বিএনপি-জামায়াত সম্পর্ক) তাদের জন্য প্রযোজ্য

 

আরও পড়ুন>>> ডিএমপির সহযোগিতার আশ্বাস, সমাবেশ থেকে আসবে নতুন কর্মসূচি

বিএনপি-জামায়াতের এখন সম্পর্ক কেমন, জানতে চাইলে মঈন খান বলেন, ‘এটা (বিএনপি-জামায়াত সম্পর্ক) আওয়ামী লীগকে জিজ্ঞাসা করেন। দীর্ঘদিন পর জামায়াতে ইসলামীকে তারা (সরকার) তো সমাবেশ করতে দিয়েছেন। তাই এ প্রশ্ন (বিএনপি-জামায়াত সম্পর্ক) তাদের জন্য প্রযোজ্য।’

তবে এ বিষয়ে জামায়াত নেতাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

কেএইচ/এএএইচ/জিকেএস