অর্থনীতি

হিমাগার-মজুতদারদের কারসাজিতে ৩ গুণ আলুর দাম

# সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর দাম কেজিতে বেড়েছে ১০-১৫ টাকা# চাহিদার চেয়ে আলু উৎপাদন বেশি হয়েছে ২২ লাখ টন# কোল্ডস্টোরেজ মালিকরা দোষ চাপাচ্ছেন মজুতদারদের ওপর# সরকারি হিসাবের সঙ্গে একমত নন কোল্ডস্টোরেজ মালিকরা#  দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর

Advertisement

বাজারে নতুন আলুর কেজি ৪শ টাকাও দেখেছে বাংলাদেশ। তবে বছরের মাঝামাঝি সময়ে চাহিদার উদ্বৃত্ত উৎপাদনের পরও ৫০ টাকা সচরাচর হয় না। নতুন মৌসুম আসতে এখনো ঢের বাকি। এরই মধ্যে আলুর দামের এ অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে বিপাকে ভোক্তারা। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সরকারের প্রতিবেদন বলছে, হিমাগার ও মজুতদারদের কারসাজিতে বাজারে এ অস্বাভাবিক দাম।

বাংলাদেশে আলুর সরবরাহ ও মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে গতকাল (১০ জুলায়) কৃষি মন্ত্রণালয়কে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। কৃত্রিমভাবে আলুর বাজার অস্থির করার চেষ্টার কারণে অসাধু ব্যবসায়ীদের সরকারি বিভিন্ন তদারকি সংস্থা ও পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে বলেও প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন>> আলুর কেজি ৫০ টাকা

Advertisement

গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে হঠাৎ করে আলুর দাম ৩৫ টাকা থেকে বেড়ে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে মূল্যবৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধান করে অধিদপ্তর কৃষি মন্ত্রণালয়কে এ প্রতিবেদন দিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবছর প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ হয়েছে ১০ টাকা ৫০ পয়সা। চাষিরা এ আলু বাজারে সর্বোচ্চ ১৫ টাকার মধ্যে বিক্রি করেছেন। যেটা সব খরচ মিলে খুচরা বাজারে কোনোভাবে ৩২ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়।

বলা হচ্ছে, প্রতি বছরের মতো এবারও ফেব্রুয়ারি মাস থেকে দেশের আলু উঠতে শুরু করে। আলুর একটা অংশ কৃষক পর্যায় থেকে সরাসরি বাজারে আসে, কৃষকের কাছে কিছু মজুত থাকে এবং বাকিটা থাকে হিমাগারে। দেশের ৩৬৫টি হিমাগারে এবছর ২৪ লাখ ৯২ হাজার টন আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে। কৃষকের হাতে আলু শেষ হওয়ার পর জুন থেকে হিমাগারের আলু বাজারে সরবরাহ আসতে থাকে। কিন্তু এ সরবরাহ ঠিকভাবে হচ্ছে না। কৃত্রিমভাবে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী আলুর দাম বাড়াচ্ছে। এর মধ্যে হিমাগার মালিকরা চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত পরিমাণ আলু বাজারে ছাড়ছেন।

জানা যায়, এবছর আলু উৎপাদন হয়েছে এক কোটি ১১ লাখ টন, যেখানে স্থানীয় চাহিদা ৯০ লাখ টন। চাহিদার বিপরীতে প্রায় ২২ লাখ টন আলু বেশি উৎপাদন হওয়া সত্ত্বেও গত প্রায় ১৫ দিন ধরে আলু দাম বাড়ছে অস্বাভাবিকভাবে।

Advertisement

তথ্য বলছে, গত এক মাসে আলুর দাম ১০ শতাংশ এবং এক বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৫ শতাংশ বেড়েছে। অথচ পাইকারি পর্যায়ে আলুর দাম কোনোভাবে ২৪ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয় বলেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন>> ঢাকায় কাঁচা মরিচের কেজি ৪৮০, আলুর দাম বেড়ে ৫০

প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে হিমাগার থেকে খাওয়ার আলু খালাস হয়েছে দুই লাখ ৬৯ হাজার টন এবং এখনো প্রায় ৯০ শতাংশ আলু হিমাগারে সংরক্ষিত। তবে কৃষকের ঘরে এখন কোনো আলু নেই।

তবে এ প্রতিবেদন বিষয়ে হিমাগার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন বলছে, এবছর আলু উৎপাদনের যে তথ্য সরকার দিচ্ছে তা ঠিক নয়। তার চেয়ে ২০ থেকে ২২ শতাংশ কম উৎপাদন হয়েছে। গত বছর সব কোল্ডস্টোরেজ ভরা থাকলেও এবার ২০ শতাংশ পর্যন্ত আলু কম রয়েছে। কৃষকের হাতে যে আলু জুন পর্যন্ত থাকে সেটা এবার এপ্রিলেই শেষ হয়েছে।

কোল্ডস্টোরেজে যে আলু আছে তার মধ্যে ৬০ শতাংশ খাওয়ার এবং ৪০ শতাংশ বীজ আলু। এই ৬০ শতাংশের মধ্যে ১০ শতাংশ কোল্ডস্টোরেজ মালিকদের, ১০ শতাংশ কৃষকের এবং বাকি ৪০ শতাংশ স্টকারদের (মজুতদার)। উৎপাদন কমায় মজুতদাররা বাজারকে প্রভাবিত করছে। তারাই বাজারে আলু কম ছাড়ছে, অতিরিক্ত লাভ করছে।

কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু জাগো নিউজকে বলেন, প্রথমত ওই প্রতিবেদনে যত আলু উৎপাদনের কথা বলা হচ্ছে এবছর উৎপাদন ততটা হয়নি। আর সরবরাহ কমায় হিমাগার মালিকদের দায় নেই।

তিনি বলেন, যারা আলু স্টক করেছেন তারা বাজারে চাহিদার তুলনায় কম আলু দিচ্ছেন। আবার প্রতি কেজি আলু কোল্ডস্টোরেজ থেকে মানভেদে ৩০-৩১ টাকায় বিক্রি করছে। তারাই কেজিপ্রতি ১২ থেকে ১৩ টাকা পর্যন্ত লাভ করছেন। এ কারণেই বাজারে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে।

বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশকিছু সুপারিশ করেছে বিপণন অধিদপ্তর। সংস্থাটি বলছে, হিমাগার থেকে চাহিদা অনুযায়ী দ্রুত আলু খালাস করতে হবে। আলুর সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে নিশ্চিত করতে হবে পর্যাপ্ত পরিবহন সুবিধা। ফেরি ও টোলপ্লাজায় আলু বহনকারী পরিবহনকে অগ্রাধিকারভিত্তিতে পারাপার নিশ্চিত করতে হবে। সঙ্গে যেসব অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিমভাবে আলুর বাজার অস্থির করার চেষ্টা করছেন তাদের বিভিন্ন তদারকি সংস্থা এবং পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. মজিবর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের মনিটরিং সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তাকে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। ওই প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছে। সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এনএইচ/এএসএ/এমএস