# সৌদি প্রতিষ্ঠানকে অপারেটর নিয়োগ প্রায় চূড়ান্ত# পিসিটিতে অপারেশন শুরু হলে গতি বাড়বে বন্দরের
Advertisement
ব্যবহারের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হলেও এখনো অপারেশনে যেতে পারছে না চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগে নির্মিত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি)। মূলত অপারেটর নিয়োগ বিলম্বিত হওয়ায় শুরুর কার্যক্রম পিছিয়ে যাচ্ছে টার্মিনালটির। তবে পিসিটি অপারেশনে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের আওতায় সৌদি প্রতিষ্ঠান রেড সি গেটওয়ে টার্মিনালকে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। এই টার্মিনাল চালু হলে বন্দরে আমদানি-রপ্তানি পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে বাড়বে গতি।
এরই মধ্যে রেড সি গেটওয়ে টার্মিনালকে রেসিডেন্স পারমিট (আরপি) ইস্যু করা হয়েছে বলে জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটির পরিচালক (পিএমএফ) ও সরকারের উপ-সচিব মো. আলী আজম আল আজাদ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপারেটর নিয়োগ চূড়ান্ত হলেও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি সংযোজন করে টার্মিনালটি অপারেশনে যেতে আরও এক বছরের মতো সময় লাগতে পারে।
আরও পড়ুন>> পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে বিনিয়োগের প্রস্তাব সৌদি কোম্পানির
Advertisement
আমদানি-রপ্তানি পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে গতি বাড়াতে এ পিসিটি তৈরি করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। অপারেশন শুরু না হলেও এরই মধ্যে পিসিটিতে পরীক্ষামূলকভাবে ১০ মিটার গভীরতা ও ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভিড়িয়েছে বন্দর। এ টার্মিনালে বছরে প্রায় পাঁচ লাখ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং সম্ভব বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
সূত্রে জানা যায়, ব্যবহারের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল। পতেঙ্গার কর্ণফুলী নদীর ড্রাইডক থেকে বোট ক্লাব পর্যন্ত নদী পাড়ে ৩২ একর জায়গার ওপর নির্মিত টার্মিনালটি। এতে ১৬ একর ইয়ার্ড ও বিভিন্ন সুবিধাসহ ৬০০ মিটার জেটি রয়েছে। ২০২২ সালের ২১ জুলাই টার্মিনালটি উদ্বোধনের ঘোষণা দিয়ে পিছিয়ে আসে বন্দর কর্তৃপক্ষ। মূলত অপারেটর নিয়োগ জটিলতার কারণে কনটেইনার অপারেশনে যেতে পারছে না টার্মিনালটি। বর্তমানে কিছু বাল্কপণ্য খালাস করা হচ্ছে টার্মিনালটি দিয়ে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, পিসিটি অপারেশনে যাওয়া জরুরি। এতে বন্দরের গতিশীলতা আরও বাড়বে। বন্দর ব্যবহারকারীদের সংগঠন পোর্ট ইউজার্স ফোরামের সভাপতি এবং চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ভিশন ২০৪১’ নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। চট্টগ্রাম বন্দর হচ্ছে দেশের লাইফ লাইন। চট্টগ্রাম বন্দর যত এগিয়ে যাবে, বাংলাদেশ ততই এগিয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর ভিশনের সঙ্গে মিলিয়ে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ একটি মাইলফলক। দেশের সামগ্রিক ব্যবসার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বন্দর এগোতে পারছে না। ব্যবসার গতি যেভাবে বাড়ছে, বন্দরকে তারচেয়ে বেশি গতিতে ছুটতে হবে।”
আরও পড়ুন>> চালু হচ্ছে পতেঙ্গা টার্মিনাল, ‘অগ্রগতি’ নেই বে-টার্মিনালের
Advertisement
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের প্রায় সব দেশে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে। যে কারণে আমদানি কিছুটা কমেছে। তাই বলে আমাদের বসে থাকলে চলবে না। বন্দরকে আগামীদিনের আমদানি-রপ্তানি হ্যান্ডলিংয়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। বন্দরকে গতিশীল করার জন্য স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে।’
জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৩ জুন পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল প্রকল্পের অনুমোদন দেয় সরকার। এক হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের শেষ সময় ছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরে ব্যয় আরও এক হাজার ৩৯৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাবের সঙ্গে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়ে আরডিপি বরাবর আবেদন করে প্রকল্প সংস্থা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয়।
পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) আওতায় পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এ লক্ষ্যে ২০২১ সালের মার্চ মাসে ‘ইক্যুইপ, অপারেট অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স অব পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল’ প্রকল্পের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।
পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটি (পিপিপি) টার্মিনালটি পরিচালনার জন্য বিদেশি অপারেটর নিয়োগে কাজ করছে। সৌদি আরব, দুবাই, ভারত ও সিঙ্গাপুরভিত্তিক বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পিসিটি পরিচালনার আগ্রহ প্রকাশ করে প্রস্তাবনা দেয়। এর মধ্যে সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল, দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ড, ভারতের আদানি পোর্ট আ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোন লিমিটেড ও সিঙ্গাপুরের পিএস সিঙ্গাপুর প্রস্তাবনা জমা দেয়। সবশেষ এসব প্রস্তাবনা যাচাই-বাছাই শেষে সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনালকে অপারেটর হিসেবে নিয়োগের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন>> ২৮-৪৮ ঘণ্টায় খালাস হবে ডিজেল ও ক্রুড অয়েল
প্রকল্প পরিচালক ও বন্দরের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল এখনই ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত। টার্মিনালটি পিপিপির আওতায় অপারেশন করা হবে। এরই মধ্যে অপারেটর নিয়োগও প্রায় চূড়ান্ত। তবে অপারেটর নিয়োগ হওয়ার পরেও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহ ও সংযোজন করে অপারেশনে যেতে আরও এক বছরের মতো সময় লাগতে পারে।
তিনি বলেন, ‘৩২ একর জায়গায় পিসিটি নির্মাণ করা হয়েছে। এ টার্মিনালে ৬০০ মিটার জেটি রয়েছে। যেখানে তিনটি জাহাজ একত্রে বার্থিং করতে পারবে। ডলফিন জেটিতেও তেলবাহী ট্যাংকার জাহাজ ভিড়তে পারবে।’
প্রাক-সমীক্ষা অনুযায়ী প্রকল্পটির সম্ভাব্য বিনিয়োগের পরিমাণ ৫৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং বার্ষিক পরিচালনা ব্যয় ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। পিসিটির ৫৮৪ মিটার লম্বা তিনটি জেটিতে একসঙ্গে তিনটি কনটেইনার জাহাজ ভেড়ানো যাবে। এছাড়া ডলফিন জেটিতে তেল খালাসের জন্য ভেড়ানো যাবে অপর একটি জাহাজ।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১০ মিটার গভীরতার বাংলাদেশি পতাকাবাহী ‘মেঘনা ভিক্টোরি’ নামে একটি জাহাজ পিসিটিতে বার্থিং দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব পাইলট ও টাগবোটের সহায়তায় পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের জেটিতে ভেড়ানো হয় জাহাজটি।
টার্মিনাল ছাড়াও পিসিটি প্রকল্পে এক লাখ ১২ হাজার বর্গমিটার অভ্যন্তরীণ ইয়ার্ড এবং রাস্তা রাখা হয়েছে। দুই হাজার ১২৮ বর্গমিটার কনটেইনার ফ্রেইট স্টেশন শেড (সিএফএস), ৬ মিটার উচ্চতার এক হাজার ৭৫০ মিটার কাস্টমস বন্ডেড ওয়াল, পাঁচ হাজার ৫৮০ বর্গমিটার পোর্ট অফিস ভবন, এক হাজার ২০০ বর্গমিটার যান্ত্রিক ও মেরামত কারখানা, ৪২০ মিটার ফ্লাইওভার, চার লেনের ১২শ মিটার সড়ক, সিকিউরিটি পোস্ট, গেস্টহাউজ, ফুয়েল স্টেশন এবং লেবার শেড তৈরি করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক জাগো নিউজকে বলেন, টেকনোলজি ট্রান্সফার ও টার্মিনাল অপারেশনের জন্য বিদেশি অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। পিসিটির অপারেটর নিয়োগের বিষয়টি বিল অন ট্রান্সফার (বিওটি) নাকি বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) ভিত্তিতে হবে, সে বিষয়টি পিপিপি অথরিটির মাধ্যমে ঠিক করা হবে।
এমডিআইএইচ/এএসএ/এমএস