দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার আফতাবগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা দিলীপ বাবু। রাস্তায় একটি অসুস্থ কুকুর ছানাকে পড়ে থাকতে দেখে বাড়িতে এনে সেবা-শুশ্রুষা করতে থাকেন। সুস্থ হয়ে উঠলে এর নাম দেন ‘রাজাবাবু’।
Advertisement
‘রাজাবাবু’ সুস্থ হওয়ার কিছুদিন পর তাকে নিজ ব্যবসার কাজে লাগান দিলীপ বাবু। দুই চাকাওয়ালা একটি গাড়ি তৈরি করে দেন। ওই গাড়িটিতে করে মুড়ির দোকানের মালামাল বহন করে নিয়ে যেতো কুকুরটি। এভাবে দ্রুত পরিচিত পেয়ে যায় ‘রাজাবাবু’।
সম্প্রতি মনিব দিলীপের বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তায় এলে মোটরসাইকেলে ধাক্কা খায় কুকুরটি। এতে রাজাবাবুর সামনের বাম পা ভেঙে যায়। চার সপ্তাহ ধরে চিকিৎসা করানোর পর পা অনেকটা সেরে উঠেছে। তবে আগের মতো গাড়ি চালাতে পারে না ‘রাজাবাবু’।
রাজাবাবুর মনিব দিলীপ কুমারের বাড়ি নবাবগঞ্জ উপজেলার আফতাবগঞ্জ কুশদহ ইউনিয়নের পরিষদের উত্তর পাশে। স্ত্রী রেখা রানীকে নিয়ে ছোট জীর্ণ কুটিরে বসবাস করেন তিনি। দিলীপের দুই ছেলেমেয়ে থাকেন ঢাকায়। কাজ করেন পোশাকশ্রমিক হিসেবে।
Advertisement
দিলীপ কুমার বলেন, প্রায় দুই বছর আগে আফতাবগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির সামনে রাস্তার পাশ থেকে অসুস্থ অবস্থায় কুকুটি বাড়িতে নিয়ে এসেছিলাম। স্ত্রীকে দিয়ে বলেছিলাম, আজ থেকে এটিই তোমার সন্তান। সেই থেকে নিজের সন্তানের মতো করেই লালন-পালন শুরু করেন কুকুর ছানাটি। ধীরে ধীরে পরিবারের একজন সদস্য হয়ে ওঠে ‘রাজাবাবু’।
স্থানীয় আফতাবগঞ্জ বাজার সপ্তাহে দুদিন খাবারের দোকান দেন দিলীপ ও তার স্ত্রী রেখা রানী। মূলত দোকানের আয় দিয়েই তাদের সংসার চলে। আয়ের অংশ দিয়ে কুকুর রাজাবাবুর জন্য মাছ, মাংস কিনে আনেন।
দিলীপ কুমারের স্ত্রী রেখা রানী জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিদিন নিজ হাতে কুকুরটি গোসল করানো থেকে শুরু করে খাবার খাওয়ানো সবই করি আমি। অসুস্থ হলে চিকিৎসক ডেকে এনে চিকিৎসা করাই। এমনকি আমাদের সঙ্গেই সে ঘুমায়।
দিলীপ কুমার বলেন, ‘রাজাবাবু আমাদের ছাড়া এক মুহূর্তও থাকতে পারে না। আমাদের না দেখলেই চিল্লাচিল্লি করে। এমনকি খাবারও খায় না। আমার স্ত্রী প্রতিদিন নিজ হাতে ওকে গোসল করায়, খাবার খাওয়ায়। মূত্রত্যাগের সময় সে চিল্লাচিল্লি করে। তখন ওকে বাইরে নিয়ে যাই। সে বাইরেই মলমূত্র ত্যাগ করে। রাতে আমাদের বিছানার পাশেই ওকে বিছানা করে দেই।’
Advertisement
দিলীপ কুমারের প্রতিবেশী সবিতা রানী। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাজাবাবু অনেক ভালো। সে কাউকে কামড়ায় না। অপরিচিত লোক দেখলেই চিৎকার করে। পায়ের কাছে সে নাক দিয়ে ঘ্রাণ নেয়। তবে কিছু করে না।’
সুনীল রায় নামের আরেকজন বলেন, ‘দিলীপের রাজাবাবুর জন্য আমাদের এই এলাকা অনেক সুনাম কুড়িয়েছে। কয়েকদিন আগে রাতে গ্রামে চোর এসেছিল। রাজাবাবু বুঝতে পেরে চিৎকার শুরু করে। চোররা তার চিৎকার শুনে দৌড়ে পালিয়ে যায়।’
স্থানীয় আবুল হোসেন বলেন, ‘দিলীপ কুমার যখন দোকানে খাবার বিক্রি করেন তখন রাজাবাবু পাশেই শান্ত হয়ে বসে থাকে। দিলীপের পরিবার ওকে খুবই ভালোবাসে। কুকুর যে প্রভুভক্ত এটাই তার প্রমাণ।’
নবাবগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় কুকুরটির বাম পা ভেঙে গিয়েছিল। আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজ নিয়েছি। আমাদের তত্ত্বাবধায়নে প্লাস্টার করা হয়েছে। কুকুরটি ধীরে ধীরে সেরে উঠছে।
মাহাবুর রহমান/এসআর/জেআইএম