ভ্রমণপিপাসু একদল ভারতীয় নাগরিক মানবতা-শান্তি ও বন্ধুত্বের বার্তা ছড়িয়ে দিতে বেরিয়েছে বিশ্বভ্রমণে। তারা মূলত কারনেট পাসের মাধ্যমে নিজেদের গাড়িতেই এক দেশ থেকে অন্য দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
Advertisement
তারই অংশ হিসেবে ভুটান ও নেপাল ঘুরে তারা এসেছিলেন বাংলাদেশে। বেশ কয়েকদিন এদেশে থাকার ইচ্ছে থাকলেও অনুমতি পাননি। মাত্র ৫ দিন বাংলাদেশে অবস্থান করে এই ভারতীয় ভ্রামণিক দল।
আরও পড়ুন: মানবতা-শান্তি-বন্ধুত্বের বার্তা নিয়ে বাংলাদেশে ৪ ভারতীয় ভ্রামণিক
এই চার ভ্রামণিক হলেন জয়কুমার দিনমণি, লক্ষ্মীধুতা, ডা. অজিথা সিএস ও সাজিকুমার টিপি। তাদের মধ্যে জাগোনিউজ২৪ এর সঙ্গে কথা বলেছেন লক্ষ্মীধুতা। জানিয়েছেন বাংলাদেশ ভ্রমণের মিশ্র অভিজ্ঞতা-
Advertisement
জাগো নিউজ: বাংলাদেশে প্রবেশের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
লক্ষ্মীধুতা: তখন প্রায় সন্ধ্যা ৬টা। কারনেট পাস থাকার পরও কাস্টমস অফিসার আমাদের গাড়ি নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশে বাধা দেন। তখন ভারতে ফিরে যাওয়াটা মুশকিল।
রাতে বিদেশি জায়গায় আটকে পড়লাম। আমরা বাংলা ভাষা জানি না। অনেক অনুরোধের পর কাস্টমস অফিসাররা আমাদের থাকার জন্য একটি হোটেল খুঁজে দেন ও একটি রেস্তোরাঁয় নিয়ে যান।
আরও পড়ুন: একাই ১০০ দেশ ঘুরলেন ভ্রমণকন্যা মালিহা, ঘুরতে চান পুরো বিশ্ব
Advertisement
সেখানে রাত কাটানোর পর পরদিন, আমরা বুড়িমারী থেকে ঢাকা যাওয়ার জন্য বাসে ১৭ ঘণ্টা ভ্রমণ করেছি। যেহেতু আমাদের লাগেজ গাড়িতে রেখে যেতে হয়েছিল, তাই আমরা ঢাকায় ৫ দিনের জন্য মাত্র দুই সেট কাপড় নিয়ে এসেছিলাম।
আমাদের প্রিয় বন্ধু ড. হুমায়ুন। পেশায় তিনি একজন অধ্যাপক। মূলত তার আমন্ত্রণেই আমরা বাংলাদেশে আসার সাহস জুগিয়েছিলাম। এই ৫ দিন আমাদের অনেক যত্ন নিয়েছেন তিনি।
তার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা অসীম। তিনি ঢাকা ও এর আশপাশে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে আমাদের ঘুরিয়েছেন। এই সীমিত সময়ের মধ্যে আমরা স্থানীয় খাবারের স্বাদও নিয়েছি, যা সত্যিই তৃপ্তিদায়ক।
আরও পড়ুন: ৫১ দিনে ২৮ রাজ্য ঘুরলেন মা-ছেলে
আমাদের আধ্যাত্মিক গ্রন্থ ‘মহাবধূতম’ এর গবেষণার অংশ হিসেবে শরীয়তপুরের ডিংগামানিক গ্রামে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল।
সেখানকার গ্রামীণ জীবন, বিশেষ করে পাট চাষিদের ও গাছ থেকে দড়ি প্রক্রিয়াজাত করার বিষয়গুলো সচক্ষে দেখতে চেয়েছিলাম। তবে সময় স্বল্পতার কারণে আর যাতায়াত ব্যবস্থা অনুকূলে না থাকায় তা পারিনি।
জাগো নিউজ: ঢাকায় থাকার অভিজ্ঞতা কেমন, কী কী দেখলেন?
লক্ষ্মীধুতা: সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, এক জায়গায় এত রিকশা আগে কখনো দেখিনি! আমি যে রাজ্য (কেরালা) থেকে এসেছি, সেখানে একটি রিকশাও নেই। বাংলাদেশে সিএনজি ও মোটর-রিকশায় চড়া এক নতুন অভিজ্ঞতা ছিল আমাদের জন্য।
আর এখনকার খাবার ও রন্ধনপ্রণালির সঙ্গে আমাদের কিছু কিছু খাবারেরও মিল পেয়েছি। তাই নিজেদের স্থান বলেই মনেই হয়েছে বাংলাদেশ। সবচেয়ে মজাদার ছিল বিভিন্ন ধরনের বিরিয়ানি আর কাবাব!
আরও পড়ুন: অন্ধ হচ্ছে ৩ সন্তান, ইচ্ছেপূরণে বিশ্বভ্রমণে পরিবার
জাগো নিউজ: বাংলাদেশে কি আবারও আসতে চান?
লক্ষ্মীধুতা: আমরা আবারও বাংলাদেশে ঘুরতে আসতে চাই! যদি কাস্টমস থেকে আমাদের নিজস্ব গাড়িটি বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি পেতাম তাহলে এদেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে সুবিধা হতো।
অনেক সীমাবদ্ধতার কারণে বেশিদিন থাকতে পারলাম না বাংলাদেশে। আমরা সত্যিই আবারও আসতে চাই ও দেশটি ঘুরে দেখতে চাই। আমরা আশা করি, আন্তর্জাতিক কারনেট পাস নিয়ে আসা ভ্রমণকারীদের জন্য বাংলাদেশ তার দরজা খুলে দেবে।
আমরা জেনেছি অনেক বিদেশি ওভারল্যান্ডারসহ ইউরোপীয় ভ্রমণকারীরা সুযোগ পেলে বাংলাদেশে ঘুরতে আসতে চান। যা বাংলাদেশের পর্যটন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দেয়।
আরও পড়ুন: বাড়ি-গাড়ি বেচে, চাকরি ছেড়ে বিশ্বভ্রমণে বের হলেন দম্পতি
বাংলাদেশের কাছে অনেক কিছু দেওয়ার আছে যা অন্যদেশের জন্য জরুরি। আমাদের এই সংক্ষিপ্ত ভ্রমণের মধ্যেই সুযোগ পেয়েছিলাম এদেশের সংস্কৃতি, গ্রামীণ অভিজ্ঞতা ও বাংলার ইতিহাস সম্পর্কে কিছুটা জানার পাশাপাশি আন্তঃধর্মীয় শান্তি ও সম্প্রীতির সেমিনারে অংশগ্রহণ করার।
জাগো নিউজ: বাংলাদেশের ভালো ও খারাপ দিক কী?
লক্ষ্মীধুতা: একজন পর্যটক হিসেবে আমি এদেশের রাস্তাঘাট, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল দেখে খুবই খুশি হয়েছি। পরেরবার যখন আমরা আসবো তখন বাংলাদেশ নিশ্চয়ই আর উন্নত হবে অবকাঠামোগত দিক দিয়ে।
তবে দুঃখজনক হলেও সত্যিই যে, এদেশের কিছু মানুষ বিদেশি পর্যটকদের বিষয়ে সৎ নন। যেহেতু এখানকার প্রায় সব বোর্ডই বাংলায়, আর বাংলা ভাষার প্রতিবন্ধকতার কারণে অনেকেই পর্যটকদের বিভ্রান্ত করার সুযোগ খোঁজে। যা সত্যিই দুঃখজনক।
আরও পড়ুন: সাইকেলে ৫ দিনে দেশ ভ্রমণ করলেন চার বন্ধু
জাগো নিউজ: বাংলাদেশ ছাড়ার আগে কোনো বার্তা দিতে চান?
লক্ষ্মীধুতা: হ্যাঁ! একজন বিদেশি ভ্রামণিক হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের কাছে দাবি রাখতে চাই, যাতে কারনেট ভ্রমণকারীদের এদেশে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয় ও এ বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করা হয়।
বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে একটি সুন্দর দেশ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা এদেশে ঘুরতে আসতে চান, তাদেরকে দেখতে দিন! আমরা আশা করি পরবর্তী সফরে এসে এদেশের গ্রামের রাস্তাগুলো আরও উন্নত দেখবো। আর ঢাকার শহরবাসীর প্রতি বার্তা হলো আপনারা ট্রাফিক নিয়ম মেনে চলুন।
জেএমএস/জিকেএস