প্রথমত বলবো, টি-টোয়েন্টিতে নিউজিল্যান্ড ভারতের কাছে একটা রহস্য। এই রহস্য নিজেদের মাটিতেও ভেদ করতে পারলো না ভারত। নিউজল্যান্ড তাদের কাছে অধরাই থেকে গেলো। তবে, ভারতের পরাজয়ের কারণ এটা নয়, সবচেয়ে বড় কারণ হলো নিউজিল্যান্ডের জন্য পাতা ফাঁদে পা দিয়েছে তারা নিজেরাই। যে স্পিন দিয়ে নিউজিল্যান্ডকে বধ করতে চেয়েছিল, সেই স্পিনেই গর্তে পড়লো ভারত।আর ভারতের হারের আরেকটা বড় কারণ হলো কেন উইলিয়ামসনের অসাধারণ নেতৃত্ব। গতকালই বলেছিলাম স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের পর নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটে সম্ভবত দীর্ঘ সময়ের জন্য আরেকজন নেতৃত্ব শুরু করতে যাচ্ছেন। বয়স মাত্র ২৫, তাতেই নেতৃত্বের দায়িত্বে। আগামী আরও ১০ বছর যদি তিনি খেলতে পারেন, তাহলে নেতৃত্বে যে তিনি অনেকদূর এগিয়ে যাবেন তা বলাই বাহুল্য।এই টুর্নামেন্টে হয়তো মহেন্দ্র সিং ধোনিই সবচেয়ে সেরা অধিনায়ক। অভিজ্ঞতা বলুন আর খেলার যাই বলুন, ধোনি সবার চেয়ে এগিয়ে। কিন্তু আগেই বলেছিলাম, উইলিয়ামসন কেমন অধিনায়ক হতে পারেন তার বড় পরীক্ষা হতে পারে এই ম্যাচটি। যোগ্যতার দারুণ পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছেন তিনি। এতকম রান পুঁজি নিয়েও জয়ের মূল কৃতিত্ব অধিনায়কের। তিনটা স্পিনার দলে নেয়ার মতো সাহসী সিদ্ধান্ত, একের পর এক বোলার পরিবর্তন করে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের চিন্তার সুযোগ না দিয়ে সাঁড়াশি আক্রমণ তৈরি করেছেন তিনি।নিউজিল্যান্ড কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে খুব বেশি সফলতা পাওয়া দল নয়। বিশ্বকাপের ৬ আসরে এখনো পর্যন্ত কোনোটাতে ভালো খেলতে পারেনি, মূল ( ওয়ানডে) ৬ বারের মতো সেমিফাইনাল খেললেও, নিউজিল্যান্ড টি-টোয়েন্টিতে একেবারে ভালো করা দল ছিল না কখনো। তবে এবার সূচনাটা যখন ভালো করলো, তখন মনে হয় এবার সেমিফাইনাল খেলার সম্ভাবনা অনেক বেশি তাদের। এই ম্যাচটা জেতাতে তাদের জন্য কাজটা সহজ হয়ে গেলো। বিশেষ করে ১২৬ রান করেও বোলাররা যেভাবে জিতিয়েছে দলকে, তখন তারা সেমিফাইনাল, ফাইনালের স্বপ্ন দেখতেই পারে।সবাই ভেবেছিল, নাগপুরে ব্যাটিং উইকেট তৈরি করা হবে। তবে, আমার মনে হয় না ব্যাটিং উইকেট ছিল। এটা ছিল পুরোটাই স্পিনিং উইকেট। এখানে স্পিনাররা অনেক ভালো করেছে। আর ভারতের মাটিতে এসে নিউজিল্যান্ড যে স্পিনিং কম্বিনেশন দেখালো- তাতে অনেক দূর যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাদের। আর ওদের আরেকটা প্লাস পয়েন্ট হলো, সবগুলো ব্যাটসম্যানই মারমার কাটকাট। টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট। হাই স্ট্রাইক রেট।এই হারটাকেও আমি ভারতের জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। কারণ, শুরুতেই হেরেছে তারা। শিরোপা জিততে হলে, ভালো কিছু করতে হলে শুরুতেই হারা ভালো। তাহলে এ থেকে শিক্ষা নেয়া যায়। আমার মনে হয়, ভারতও এই হার থেকে শিক্ষা নেবে। নিজেদের ভুলগুলোও শুধরে নেবে। ফলে পরবর্তী ম্যাচে আর এই ভুলগুলো করবে না এবং ভালোভাবেই এগিয়ে যেতে পারবে। আর একটা শিক্ষা হবে তাদের জন্য যে, একতরফা স্পিনিং উইকেট বানালে নিজেদেরও বিপদে পড়তে হয়।লেখক: বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়কআইএইচএস/বিএ
Advertisement