গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে মালবেরি। কিছু সবুজ, কিছু লাল আর কিছু পেকে কালো হয়ে গেছে। পাতার চেয়ে ফলই যেন বেশি। উচ্চমূল্যের পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ বিদেশি এ ফল এখন চাষ হচ্ছে ঢাকার অদূরে গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায়। পরীক্ষামূলকভাবে বিভিন্ন দেশের ৩টি জাত সংগ্রহ করে প্রথমবারেই সাফল্য পেয়েছেন উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের চুপাইর গ্রামের মো. মোস্তফা মোল্লা (৪০)। পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করলেও ভালো ফলন দেখে বাণিজ্যিকভাবে চাষের পরিকল্পনা করছেন তিনি।
Advertisement
জানা গেছে, মোস্তফার মালবেরি গাছগুলোর পাতা ডিম্বাকার, চমৎকার খাঁজযুক্ত আর সূচালো অগ্রভাগ। আকারে আঙুরের চেয়ে কিছুটা ছোট এ ফল। প্রথমে ফলটি থাকে সবুজ, পরে লাল হয় ধীরে ধীরে। সম্পূর্ণ পেকে গেলে তা কালো রং ধারণ করে। দেখতে আকর্ষণীয় এ ফল পাকলে রসাল ও টক-মিষ্টি স্বাদের। প্রতিটি গাছ থেকে ৮-১০ কেজি সংগ্রহ করা যায়। তৈরি করা যায় চারাও। খুব সহজেই ছাদেও চাষ করা সম্ভব।
আরও পড়ুন: লবণাক্ত মাটিতে কেনাফ চাষে সফলতার আশা
মালবেরি চাষ সম্পর্কে কৃষক মোস্তফা বলেন, ‘ফলটি বিদেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষ এবং বাজারজাত করা হয়। বাজারে এর চাহিদাও ব্যাপক। আমি পরীক্ষামূলকভাবে থাইল্যান্ড, ভারত ও পাকিস্তান থেকে ৩টি জাত সংগ্রহ করে চাষ করেছি। পরীক্ষামূলক হলেও প্রতিটি গাছেই প্রচুর ফল ধরেছে।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘মালবেরি চাষে রোগবালাই খুবই কম। কীটনাশক তেমন লাগে না। উৎপাদন খরচও কম। শুধু জৈব সার দিলে প্রায় সারাবছরই ফল পাওয়া যায়। যেহেতু মালবেরি একটি আমদানি নির্ভর ফল, তাই বাজারেও এর প্রচুর চাহিদা আছে। ঢাকাসহ অন্য বিভাগীয় শহরের সুপারশপে বিক্রি হয় প্রায় ৪-৫ হাজার টাকা কেজি দরে।’
আরও পড়ুন: ভারতীয় মিষ্টি আঙুর চাষে সফল লাভলী
মোস্তফা আরও বলেন, ‘আমি ২৫টি চারা দিয়ে শুরু করি। তখন ৩শ টাকা করে চারা কুরিয়ারের মাধ্যমে সংগ্রহ করি। তবে আমি বেশি দামে চারা কিনলেও এখন তা মাত্র ৩০ টাকায় বিক্রি করছি। প্রাকৃতিক হরমোন পুরাতন মধুর মধ্যে চুবিয়ে মাটিতে পুতে রাখলেই হয়। সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে গাছ লাগানোর পরের মাসেই ফল পাওয়া যায়।’
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, মালবেরি অর্থাৎ তুঁত ফল স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য পাকা তুঁঁত ফল উপকারী। এ ছাড়া পাকা ফলের টক-মিষ্টি রস পিত্ত, দাহ, কফ ও জ্বর নাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তুঁত গাছের ছাল ও শিকড়ের রস কৃমিনাশক। এটি ঠান্ডা লেগে জ্বর কিংবা কাশি হলে অত্যন্ত উপকারী।’
Advertisement
আরও পড়ুন: শাপলা ও পদ্মফুল চাষে মাসে আয় ৫০ হাজার টাকা
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফারজানা তাসলিম বলেন, ‘মোস্তফা মোল্লা একজন সফল খামারি। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই সবুজ ঘাস চাষ করেন। পাশাপাশি শখের বসে ৩টি জাতের ২৫টি মালবেরি চারা রোপণ করেন। প্রতিটি গাছ থেকে ৮-১০ কেজির মতো ফল পাওয়া যাবে। তবে এ উপজেলার মাটি মালবেরি চাষের জন্য কতটুকু উপযোগী এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ গবেষণা করছে।’
আব্দুর রহমান আরমান/এসইউ/এমএস