দেশজুড়ে

কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি, কম খরচে লাভ বেশি

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার মাঠজুড়ে এখন চলছে রোপা আমন ধানের বীজতলা তৈরির কর্মযজ্ঞ। তবে আগের সনাতনী পদ্ধতির বদলে কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ায় কৃষকের কাজ যেমন সহজ হয়েছে তেমনি সাশ্রয় হচ্ছে অর্থেরও। এতে অধিক লাভের মুখ দেখছেন কৃষকরা।

Advertisement

জানা যায়, এই অঞ্চলে বোরো ধান ঘরে তোলার পর আষাঢ়ের শেষদিকে বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকেন কৃষকরা। বৃষ্টি হলে রোপা আমন ধান চাষে মাঠে নেমে পড়েন তারা।

শনিবার (৮ জুলাই) সরেজমিনে উপজেলার এগারসিন্দুর ইউনিয়নের আদিত্যপাশা বাগানবাড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, কৃষকরা আধুনিক পদ্ধতিতে রোপা আমন ধান চাষের জন্য পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে বীজতলা তৈরি করছেন। এবার ওই এলাকার কৃষকরা বেড ও ট্রে পদ্ধতিতে আমন ধানের বীজতলা তৈরি করছেন। এ এলাকার কৃষকরা বেড ও ট্রে পদ্ধতিতে এক টন বীজ বপন করেছেন। এখান থেকে প্রাপ্ত চারা দিয়ে এলাকার ১৫০ হেক্টর জমিতে ধান রোপণ করা যাবে। এ আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে এখানকার কৃষকরা একসঙ্গে ধান রোপণ এবং একসঙ্গে কাটতে পারবেন।

আরও পড়ুন: কৃষিতে স্মার্ট প্রযুক্তি: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এখনই সময়

Advertisement

উপজেলা কৃষি অফিসে তথ্যমতে, এবার পাকুন্দিয়া উপজেলায় সাড়ে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরইমধ্যে ৫২৫ হেক্টর বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। এবার ৭৫০ কৃষককে পাঁচ কেজি করে উফসি বীজ ও ২০ কেজি করে সার দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ১৮০ কৃষককে দুই কেজি করে হাইব্রিড বীজ প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।

চাষি শফিকুল ইসলাম বলেন, এ আধুনিক পদ্ধতিতে ধানের বীজতলা তৈরি করার কারণে আমরা একসঙ্গে ধান রোপণ এবং একসঙ্গে কাটতে পারবো। তাই আমাদের জমিতে পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হবে। এতে করে খরচ কম ও লাভ বেশি হবে।

শহীদ মিয়া বলেন, কৃষি অফিসের পরামর্শে আমরা এবার বেড পদ্ধতিতে ধানের চারা তৈরি করছি। এতে করে চারা তুলতে ও লাগাতে সুবিধা হয়। এছাড়া ধানের ফলনও ভালো হয়। এতে আমরা লাভবান হবো।

কৃষক খোকন মিয়া বলেন, সরকার ধান চাষে যে আধুনিক যন্ত্রপাতি এনেছে এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। কম খরচে ধান রোপণ করা যায়, কম খরচে ধান কাটা যায় ও বাড়িতে নেওয়া যায়। আগে যে জমির ধান চাষে দুই হাজার টাকা খরচ হতো এখন ৭০০-৮০০ টাকা হলেই হয়ে যায়।

Advertisement

আরও পড়ুন: কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহারে বাড়ছে উৎপাদন, কমছে খরচ 

আঙ্গিয়াদী ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ হামিমুল হক সোহাগ বলেন, এখানকার কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে কমিউনিটিভিত্তিক আধুনিক বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি যন্ত্রের মাধ্যমে ধান রোপণের জন্য ট্রেতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। এখানে ব্রি ধান ৯৪ ব্যবহার করা হয়েছে। এখানকার কৃষকরা সবাই একসঙ্গে ধান রোপণ করবে এবং একসঙ্গে ধান কর্তন করবে। এসব কাজ একসঙ্গে করার কারণে রোগবালাই কম হবে। ধানের পরিচর্যা করা সহজ হবে। পাশাপাশি এখানকার কৃষকরা স্বল্প খরচে ফসল ঘরে তুলতে পারবেন তাই তারা লাভবান হবেন। এরপরে এই জমিতে কৃষকরা খুব সহজে অন্য ফসল চাষ করতে পারবেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার নূর-ই-আলম বলেন, চলতি মৌসুমে পাকুন্দিয়া উপজেলার সাড়ে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরইমধ্যে ৫২৫ হেক্টর বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। এবার ৭৫০ কৃষককে পাঁচ কেজি করে উফসি বীজ ও ২০ কেজি করে সারে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ১৮০ কৃষককে দুই কেজি করে হাইব্রিড বীজ প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।

চলতি মৌসুমে রোপা আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে তিনি মনে করছেন।

এসকে রাসেল/এমআরআর/এমএস