বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশন নেতা শহিদুল ইসলামকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দুই সন্তান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তার স্ত্রী কাজলী বেগম।
Advertisement
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ি ইউনিয়নের মিটালু গ্রামে বাস করেন শহিদুল ইসলামের স্ত্রী ও নাবালক দুই ছেলে। ভিটে ছাড়া আর কোনো জমি নেই তাদের। আয়-উপার্জনেরও নেই কোনো পথ। শহিদুলের বড় তিন ভাইয়ের মধ্যে দুজন একটি কোম্পানিতে স্বল্পবেতনে চাকরি করেন। বড় ভাই বয়সের ভারে ন্যুব্জ। বর্তমান ভাইয়েরাই দেখাশোনা করছেন শহিদুলের স্ত্রী সন্তানদের। কিন্তু টাকার অভাবে চিকিৎসা থেমে আছে ক্যানসার আক্রান্ত কাজলী বেগমের।
কাজলী বেগম বলেন, ২০০২ সালে শহিদুলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তখন তারা ঢাকায় মালিবাগ চৌধুরী পাড়ায় বসবাস করতেন। কাজলী বেগমও আগে পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন আমার স্বামী। তাকে হারিয়ে অর্থ সংকটে পড়েছি। বড় ছেলে সাদিকুল ইসলাম (১৬) এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে আর ছোট ছেলে ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ (৫) প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। তিন মাস ধরে আমি ক্যানসার আক্রান্ত। নিজের টাকায় তিনটি কেমোথেরাপি দিয়েছি। আরও দুটি থেরাপি বাকি আছে। দিতে হবে ২৫টি রেডিও থেরাপিও। এর খরচ বহন করার মতো সামর্থ্য নেই। এমনকি ছেলেদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার মতো অবস্থাও নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে স্বামী হত্যা বিচার দাবি করছি।
Advertisement
কাজলী বেগমের অভিযোগ, স্বামী নিহত হওয়ার পরদিন অনেকেই তার বাড়িতে এসেছিলেন। এরপর থেকে কেউ তার খোঁজ নিচ্ছেন না। বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি কল্পনা আক্তার খোঁজ রাখছেন। তাকে বিভিন্নভাবে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। প্রশাসন, কারখানা মালিকপক্ষ বা দলীয় কোনো লোকজন তাদের খোঁজ নিচ্ছেন না।
আরও পড়ুন: গাজীপুরে দুর্বৃত্তদের হামলায় শ্রমিক নেতা নিহত
গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীতে শ্রমিক নেতা শহিদুল হত্যার ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি কল্পনা আক্তার। তার অভিযোগ, সংগঠনের জেলা কমিটির সভাপতি শহিদুল ইসলামকে হত্যার পর আমরা যাদের আসামি করতে বলেছিলাম পুলিশ সেই নামগুলো নেয়নি। হত্যাকাণ্ডের ১১ দিন পার হলেও পুলিশ কেবল এক আসামিকে গ্রেফতার করতে পেরেছে। অপর আসামিদের ধরতে পারছে না। এতে মামলার আসামি ধরা নিয়ে পুলিশের আন্তরিকতার অভাব আছে বলে মনে হচ্ছে।
কল্পনা আক্তার আরও বলেন, এ সংগঠনের আরেক নেতা আমিনুল ইসলাম ১১ বছর আগে ২০১২ সালের ৪ এপ্রিল আশুলিয়া থেকে নিখোঁজ হন। পরদিন তার ক্ষতবিক্ষত মরদেহ পাওয়া গিয়েছিল টাঙ্গাইলের ঘাটাইল থানা এলাকায়। এবার একই সংগঠনের নেতা শহিদুল ইসলামকেও প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
Advertisement
টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ আলম জাগো নিউজকে বলেন, আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। পুলিশের আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে। আশা করি শিগগির সব আসামি ধরা পড়বে।
ওসি বলেন, এ ঘটনায় কারখানার মালিক মো. সাইফুদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সাইফুদ্দিন দাবি করেছেন, তিনি এ হামলার বিষয়ে কিছুই জানেন না। এছাড়া কামরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে ছিলেন না, তিনি কারখানার সঙ্গে যুক্ত নন। মামলার বাদী আসামি হানিফের নামও জানতেন না। পুলিশই তাদের নাম জানিয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।
ওসি আরও বলেন, পুলিশের আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে। আশা করি শিগগিরই সব আসামি ধরা পড়বে।
ঈদের আগে কারখানার বেতন-ভাতা নিয়ে টঙ্গীর ‘প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার লিমিটেড’ নামক পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের সঙ্গে কারখানা কর্তৃপক্ষের অসন্তোষ চলছিল। ২৫ জুন বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের গাজীপুর জেলা শাখার সভাপতি শহিদুল ইসলাম শ্রমিকদের পক্ষে কথা বলতে এবং মধ্যস্থতা করতে ওই কারখানায় যায়। পরে গেট থেকে বের হওয়ার পর তার ওপর হামলা করে দুর্বৃত্তরা। আহতাবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতেই মারা যান।
এসজে/এমএস