ডুবোচর ও জাটকা সংরক্ষণ করতে না পারায় বর্ষার ভরা মৌসুমেও নদ-নদীতে মিলছে না ইলিশ। এ সময় প্রচুর পরিমাণে ধরা পড়ার কথা থাকলেও জালে উঠছে না কোনো ইলিশ। জেলেরা নিয়মিত নদীতে গেলেও ফিরছেন খালি হাতে। এতে বরিশালের ইলিশের আড়তে নেই চিরচেনা সেই হাঁকডাক।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) সকালে বরিশাল নগরীর পোর্টরোড ঘুরে দেখা যায়, ইলিশের পাইকারি আড়তগুলো ইলিশশূন্য। যতটুকু ইলিশ উঠছে, তার দাম অত্যধিক। এক কেজি ওজনের একটি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রায় দুই হাজার ৩৮২ টাকায়। ৬০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ১ হাজার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৮৫০ টাকা। ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজিও ১ হাজার ৫০০ টাকার ওপরে।
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত ১ জুলাই থেকে ইলিশ ধরার মৌসুম শুরু হয়েছে। বর্ষার চিরচেনা এই পরিবেশে নদ-নদীতে বেশি বেশি ইলিশ ধরা পড়ার উপযোগী সময়। সে অনুযায়ী এখন আড়তগুলো ইলিশে ভরপুর থাকার কথা। অথচ আড়তে কর্মরত শ্রমিকদের অলস সময় পার করতে দেখা গেছে।
পোর্ট রোডের শ্রমিক সফিক বলেন, বিগত দিনে এমন সময় ইলিশে আড়ত সয়লাব থাকতো। কাজের চাপে আমরা ভাত খাওয়ার সময় পর্যন্ত পেতাম না। অথচ এখন মাছ না থাকায় অলস সময় পার করতে হচ্ছে। যে মাছ আসছে তা দিয়ে ভাত খাওয়ার খরচও ওঠে না।
Advertisement
শ্রমিক ইকবাল বলেন, ইলিশের ভরা মৌসুমেও আড়তে কোনো মাছ নেই, তাই বসে বসে লুডু ও ক্যারম খেলে সময় কাটাতে হচ্ছে।
বরিশাল সদর উপজেলার চন্দ্রমোহন ইউনিয়নের টুমচরের জেলে নেতা আবদুল সালাম বলেন, আষাঢ় মাসে ইলিশের এত আকাল আগে দেখিনি।
তার দাবি, বাড়ির পাশে কালাবদর নদীতে এখন ডুবোচর জাগায় জেলেদের জাল ফেলার জায়গা নেই। অনেক জায়গায় চর জেগেছে।
পোর্ট রোডের ইলিশ আড়তদার মেসার্স দুলাল ফিশ’র ম্যানেজার মো. রবিন জাগো নিউজকে বলেন, সরকারের নিষেধাজ্ঞা ঠিক আছে, কিন্তু নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কিছু অসাধু জেলে প্রশাসন ম্যানেজ করে জাটকা ধরে বাজারে বিক্রি করে। ফলে ইলিশের সিজনে আড়তে মাছ পাই না। ইলিশের ভরা মৌসুমেও ইলিশ না থাকায় প্রশাসনকেই দায়ী করেন তিনি।
Advertisement
আড়তদার জাহাঙ্গীর কবির বলেন, সারা বছর দেখে আসছি আষাঢ় মাস এলেই ইলিশে সয়লাব হয়ে যেত পোর্টরোডের মোকাম। অথচ ইলিশের ভরা মৌসুমের এক সপ্তাহ পার হলেও আশানুরূপ মাছ পাচ্ছি না।
এদিকে আড়তে ইলিশ না থাকায় বরফ উৎপাদনও কমে গেছে বলে জানান বরফকল মালিকরা।
পোর্টরোডের বরফকল চিশতি এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. শহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বিগত মৌসুমে এমন দিনে বরফ উৎপাদন করে শেষ করতে পারতাম না। এবার মাছ না থাকায় বরফ উৎপাদন বন্ধ। যে পরিমাণ মাছ আসছে তাতে বরফকল চালিয়ে পোষায় না।
বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা (ইলিশ) ড. বিমল চন্দ্র দাস জাগো নিউজকে বলেন, ইলিশ সংকটের এ চিত্র এখন দক্ষিণাঞ্চলের সব নদ-নদীতে। যার বিরূপ প্রভাব পড়েছে বাজারে। সরবরাহ না থাকায় ইলিশের দাম সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে।
তিনি আরও বলেন, সাগরে মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে আগামী ২০ জুলাই। তাই স্থানীয় নদ-নদীই এখন ইলিশ পাওয়ার একমাত্র ভরসা। কিন্তু নদীতেও কাঙ্ক্ষিত ইলিশ মিলছে না। তবে টানা বৃষ্টি শুরু হয়েছে, পূর্ণিমার জো চলছে। এর পর বোঝা যাবে ইলিশের অবস্থা।
হিজলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা এম এম পারভেজ জানান, মেঘনায় অনেক জায়গায় চর পড়ে পানির গভীরতা কমে গেছে। বিশেষ করে সাগর মোহনায় নদীর মুখ চর পড়ে বন্ধ হয়ে গেছে। নদীর গতিপথও পরিবর্তন হয়েছে। যে কারণে ভরা মৌসুমেও নদীতে ইলিশ আসছে না। এছাড়া এরজন্য নদীদূষণও দায়ী।
মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালক আনিসুর রহমান তালুকদার জাগো নিউজকে বলেন, নদীতে ডুবোচর জাগার কারণে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে। আর ইলিশ গভীর পানির মাছ। ফলে হয়তো স্থান পরিবর্তন করছে ইলিশ। তবে আমাদের নদ-নদীতে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ রয়েছে। বিগত দিনের চেয়ে বেশি ইলিশ পাওয়া যাবে।
তিনি আরও বলেন, ইলিশ সম্পদ রক্ষায় নদী খনন জরুরি। তবে এটা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এটা কীভাবে সমাধান করা যায় সে বিষয়ে কাজ করা হবে।
এফএ/এএইচ/এসজে