ধর্ম

স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর আচরণ কেমন হবে?

পারিবারিক জীবনে স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর আচরণ কেমন হবে? নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি তাঁর স্ত্রীদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করতেন? স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর আচরণ কেমন ছিল? স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর আচরণ সম্পর্কে কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনাই বা কী?

Advertisement

আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে স্বামী-স্ত্রীকে পরস্পর এক বলে সম্বোধন করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

فَاسۡتَجَابَ لَهُمۡ رَبُّهُمۡ اَنِّیۡ لَاۤ اُضِیۡعُ عَمَلَ عَامِلٍ مِّنۡکُمۡ مِّنۡ ذَکَرٍ اَوۡ اُنۡثٰی ۚ بَعۡضُکُمۡ مِّنۡۢ بَعۡضٍ

‘এরপর তাদের প্রভু তাদের দোয়া (এই বলে) কবুল করে নিলেন যে, আমি তোমাদের কোনো পরিশ্রমকারীর পরিশ্রমই বিনষ্ট করি না, তা সে পুরুষ হোক কিংবা স্ত্রীলোক। তোমরা পরস্পর এক।’ (সুরা ইমরান : আয়াত ১৯৫)

Advertisement

নারীর প্রতি পুরুষের আচরণ এবং পুরুষের প্রতি নারীর আচরণ হবে সুন্দর ও সযোগিতাপূর্ণ। কেউ কারো প্রতি বিরূপ আচরণ করবে না। এভাবেই স্বামী-স্ত্রীর মাঝে তৈরি হবে সুসম্পর্ক ও মধুর বন্ধন। এ লক্ষ্যে স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে যথাযথ মর্যাদা দেবে।

অনেক সময় স্বামীর কাছে স্ত্রীরা যথাযথ মর্যাদা পায় না। আবার কোনো কোনো সময় স্ত্রীরাও তাদের স্বামীদের যথাযথ মর্যাদা দেয় না। যার ফলে পারিবারিক জীবনে অশান্তি শুরু হয়। এমনটি কোনোভাবেই কাম্য নয়।

তাই নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ আচরণ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উম্মতের জন্য একান্ত আবশ্যক এবং সুন্নত। তিনি তাঁর স্ত্রীদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করতেন। স্ত্রীদের সঙ্গে উত্তম আচরণে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন এক অনুকরণীয় আদর্শ। হাদিসের একাধিক বর্ণনা থেকেই তা প্রমাণিত।

একবার হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করা হলো- নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি ঘরে (স্ত্রীদের সহযোগিতায়) কাজ করতেন? উত্তরে হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরের মানুষদের সেবায় নানা কাজে অংশ নিতেন। নামাজের সময় হলে বেরিয়ে যেতেন।’ (বুখারি)

Advertisement

আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানি বলেন, উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ হাতে তাঁর কাপড় সেলাই করতেন; নিজের জুতা মেরামত করতেন এবং সাংসারিক যাবতীয় কাজে অংশ গ্রহণ করতেন।’ (ফতহুল বারি)

স্ত্রীর প্রতি স্বামীর আচরণ

স্ত্রীর প্রতি সদাচরণ করাই স্বামীর সবচেয়ে বড় গুণ। স্ত্রীকে তার কাজে সহযোগিতা ও সম্মান করা। বিশেষ করে স্ত্রীর সঙ্গে স্বামী আচরণগুলো হওয়া উচিত এমন-

১. স্ত্রীর সঙ্গে সবসময় ভালো আচরণ করা।

২. স্ত্রীর কথা-কাজে কষ্ট পেলে ধৈর্য ধারণ করা।

৩. স্ত্রীর অন্যায়ভাবে চলাফেরা করলে তাকে বারবার কোমল ভাষায় বোঝানো।

৪. সামান্য অজুহাতে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ না করা। কথায় কথায় ধমক না দেওয়া এবং রাগ না করা।

৫. স্ত্রীর আত্মমর্যাদায় আঘাত আসে এমন কথা না বলা।

৬. সন্দেহবশতঃ স্ত্রীর প্রতি কুধারণা না করা।

৭. স্ত্রীর দায়িত্ব পালনে উদাসীন না থাকা।

৮. সামর্থ্যানুযায়ী স্ত্রীকে খোরপোষ দেওয়া। খোরপোষের নামে যেন অপচয় না হয় সে দিকেও লক্ষ্য রাখা।

৯. নামাজ এবং দ্বীনি আহকাম মেনে চলতে স্ত্রীকে উৎসাহিত করা এবং বোঝানো।

১০.  দাম্পত্য জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা ও নিয়ম-কানুনগুলো স্ত্রীকে শেখানোর ব্যবস্থা করা। ইসলামি শরিয়তের পরিপন্থী কাজ থেকে বিরত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করা।

১১. একাধিক স্ত্রী থাকলে সবসময় সবার মাঝে সমতা রক্ষার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।

১২. স্ত্রীর চাহিদানুযায়ী তাদের সময় দেওয়া। মেলামেশা ও ওঠা-বসায় তাদের চাহিদার প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া। এমনকি তাদের মতামতের ব্যাপারেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক।

১৩. স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া (মেলামেশায়) আজল না করা। অর্থাৎ মেলামেশার সময় শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত স্বাভাবিক স্থান ত্যাগ না করা।

১৪. স্ত্রীকে তালাক না দেওয়া। কেননা ইসলামে সবচেয়ে নিকৃষ্ট বৈধ কাজ হলো তালাক। যদি তালাক দিতেই হয় তবে ইসলামি শরিয়তের আলোকে তালাক প্রদান করা।

১৫. স্ত্রীর স্বাভাবিক চাহিদা অনুযায়ী থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা। সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে এ দায়িত্ব পালন করা।

১৬. স্ত্রীকে নিয়ে মাঝে মাঝে স্ত্রীর নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত করতে যাওয়া। স্বামী যদি একান্তই সময় না পায় তবে অন্তত স্ত্রীকে তার আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের সুযোগ করে দেওয়া।

১৭. কোনোভাবেই স্ত্রীর ব্যাপারে কিংবা দাম্পত্য জীবনে স্ত্রীর সঙ্গে মেলামেশার বর্ণনা বা চিত্র অন্য কারো কাছে প্রকাশ না করা স্বামীর একান্ত কর্তব্য।

১৮. স্ত্রীর অধিকারের প্রতি সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার পরও যদি স্ত্রী বেপরোয়া হয় তবে প্রয়োজনে স্ত্রীকে প্রথমে বারবার সতর্ক করা। এরপর ইসলামের নির্দেশনা অনুসারে হালকা শাসন করা। তবে ইসলামি শরীয়ত যতটুকু অনুমতি দিয়েছে তার চেয়ে বেশি শাসন না করা। সর্বোপরি প্রয়োজনে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে একে অপর থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া।

সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য স্বামীর উচিত, স্ত্রীদের কাজের মৌখিক স্বীকৃতি ও প্রশংসার পাশাপাশি সাংসারিক কাজে সামান্য সময়ের জন্য হলেও স্ত্রীকে সহযোগিতা করা। তবেই স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর সুসম্পর্ক গড়ে ওঠবে। পারিবারিক জীবনে অনিন্দ্য সুন্দর শান্তিপূর্ণ সংসারের প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠবে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব স্বামীকে তাদের স্ত্রীর প্রতি সদাচরণ, সহযোগিতা ও সম্মান করার তাওফিক দান করুন। শান্তিপূর্ণ পরিবার গঠনে স্ত্রীর প্রতি সার্বিক সমর্থন, সদাচরণ ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম