আইন-আদালত

যে তিন অভিযোগে চূড়ান্ত রায়ে নিজমীর মৃত্যুদণ্ড

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর করা আপিলে মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে আপিল বিভাগের দেয়া পূণাঁঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের রজিস্ট্রার কার্যালয়ের সূত্র মঙ্গলবার বিকেলে বিচারকদের সই করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদেরকে রায় প্রকাশের কথাটি জানান।তার আগে নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের পূণাঁঙ্গ রায়ে স্বাক্ষর করেন বিচারপতিরা। রায়ে স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে এখন পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ এবং দণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশের পাশাপাশি এই রায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে। ট্রাইব্যুনাল থেকে রায়ের কপি পাঠানো হবে কারা কর্তৃপক্ষ ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে। পরে নিয়ম অনুসারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও রায় প্রকাশের বিষয়টি জানানো হবে।যে তিন অভিযোগ নিজামীর মৃত্যুদণ্ড বহাল :অভিযোগ-২ : একাত্তর সালের ১০ মে বেলা ১১টার দিকে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বাউশগাড়ি গ্রামের রূপসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় শান্তি কমিটির সদস্য ও রাজাকারদের উপস্থিতিতে ওই সভায় নিজামী বক্তৃতায় বলেন, শিগগিরই পাকিস্তানি সেনারা শান্তি রক্ষার জন্য আসবে। ওই সভার পরিকল্পনা অনুসারে পরে ১৪ মে ভোর সাড়ে ৬টার দিকে বাউশগাড়ি, ডেমরা ও রূপসী গ্রামের প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষকে পাকিস্তানি সেনারা হত্যা করে। প্রায় ৩০-৪০ জন নারীকে সেদিন ধর্ষণ করে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা।অভিযোগ-৬ : ১৯৭১ সালের ২৭ নভেম্বর পাবনার ধুলাউড়ি গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজতে যায় পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসর রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা। তারা গ্রামের ডা. আব্দুল আউয়াল ও তার আশেপাশের বাড়িতে হামলা চালিয়ে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ৫২ জনকে হত্যার অভিযোগ ছিল নিজামীর বিরুদ্ধে।অভিযোগ-১৬ : মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয়ের ঊষালগ্নে অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে আলবদর বাহিনী। দেশের বুদ্ধিজীবী শ্রেণীকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার জন্য পরিকল্পিতভাবে আলবদর সদস্যরা ওই গণহত্যা ঘটায়। জামায়াতের তৎকালীন ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ ও আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে ওই গণহত্যার দায় নিজামীর বিরুদ্ধে।এই তিনটি অভিযোগে নিজামীকে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।  মানবতাবিরোধী অপরাধীদের দায়েরকৃত ছয়টি আপিলের ওপর চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হয়েছে। আপিল বিভাগের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াতের শীর্ষ নেতা আলী আহসান মো. মুজাহিদ, আব্দুল কাদের মোল্লা ও এম কামারুজ্জামান এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায় ইতোমধ্যে কার্যকর করেছে সরকার। এছাড়া ট্রাইব্যুনাল জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দিলেও আপিলে তার সাজা পরিবর্তন করে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং নিজামীর আপিল আংশিক মঞ্জুর করে মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। আপিল বিচারাধীন থাকাবস্থায় মারা গেছেন জামায়াত নেতা গোলাম আযম ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীম। পরে এসব আপিল অকার্যকর ঘোষণা করেন আদালত।এফএইচ/এসএইচএস/এমএস

Advertisement