দেশজুড়ে

পাপিয়ার নির্যাতনে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন রুনা লায়লা

গাজীপুরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিছানায় অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্যাতনের শিকার রুনা লায়লা। শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন এখনো দৃশ্যমান। নির্যাতনে পুরো পা ও শরীরের বিভিন্ন স্থান কালো হয়ে গেছে। শরীরের ব্যথায় একপাশ থেকে অন্যপাশে কাত হতে পারছেন না।

Advertisement

অসুস্থ রুনা লায়লাকে দেখতে হাসপাতালে যান মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেল সুপার ওবায়দুর রহমান। তিনি এ ঘটনার জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন।

সোমবার (৩ জুলাই) রাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রুনা লায়লাকে দেখতে গেলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। বর্ণনা দেন তার ওপর নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র।

রুনা লায়লা বলেন, ‘আমার কাছে ৭ হাজার ৪০০ টাকা ছিল। সেই টাকা কেড়ে নেওয়ার জন্য কারাগারের হাজতি যুব মহিলা লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নুর পাপিয়াসহ তার সহযোগীরা সিসি ক্যামেরা নেই এমন স্থানে নিয়ে যায়। টাকা না দিতে চাইলে তারা জোর করে সেই টাকা নিয়ে যায়। পরে পাপিয়া ও তার সহযোগীরা শিকল দিয়ে হাত-পা বেঁধে অমানবিকভাবে আমাকে মারধর করে। আমাকে না মারার জন্য পাপিয়ার হাতে-পায়ে ধরেছি। কিন্তু সে আমার কথা শোনেনি। আরও বেশি করে আমারে মেরেছে।’

Advertisement

তিনি বলেন, ‘আমি তাদের কাছে পানি চাইলে ময়লা পানি দেয়। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার আগে পাপিয়া ভয় দেখিয়ে বলে, কাউকে বললে আবারও জেলে আসতে হবে। তখন আরও নির্যাতন করবো। আমার জামিন হয়ে যেতো, তোর কারণে আমি আবার ঝামেলায় পড়লাম।’

রুনা লায়লা আরও বলেন, ‘আমি উকিল জানার পর একজন কিছু টাকা দেয় কিন্তু সেটি পিসিতে জমা দিতে হবে এটা তারা বুঝতে পারেনি। সেই টাকা নেওয়ার জন্য তারা মারধর করে এবং কম্বল চাপা দিয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। পাপিয়া নিজেও মেরেছে। তার সহযোগী (কারাগারের আসামি) দিয়েও মারধর করিয়েছে।’

এদিকে যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী পাপিয়াকে সোমবার রাতে কুমিল্লা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় শোকজ করা হয়েছে কাশিমপুর কারাগারের জেলার ফারহানা আক্তার, ডেপুটি জেলার জান্নাতুল তায়েবা ও মেট্রন হাবিলদার ফাতেমাকে। ঘটনাটি তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

গত ১৯ জুন কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে এ ঘটনা ঘটে। পরে বন্দি রুনা লায়লার ভাই আব্দুল করিম বাদী হয়ে ২৫ জুন গাজীপুরের জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।

Advertisement

রুনা লায়লা গাজীপুরের কাপাসিয়া থানার কড়িহাতা গ্রামের আবদুল হাইয়ের মেয়ে এবং এ কে এম মাহমুদুল হকের স্ত্রী। তিনি ঢাকার কোতোয়ালি থানার ৭৩৫ নম্বর মামলার আসামি। গত ১৬ জুন থেকে তিনি গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন। ২৭ জুন জামিনে মুক্তি পান।

রুনা লায়লার ছোট ভাই আবদুল করিম বলেন, তার বোন নির্যাতনের কথা মনে করে প্রায়ই ভয়ে আঁতকে ওঠেন। আবোলতাবোল বলা শুরু করেন। তাকে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘আমার বোনের সারা শরীরে কালো দাগ হয়ে আছে। এগুলো সবই আঘাতের চিহ্ন। কারা কর্তৃপক্ষ তাকে হাসপাতালে দেখতেও এসেছিল।’

মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেল সুপার ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘যেহেতু কারাগারে ঘটনাটি ঘটেছে, তাই মানবিক কারণে তাকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম। তার বর্তমানে অবস্থার খোঁজখবর নিয়েছি।’

কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, নথি চুরির একটি মামলায় শিক্ষানবিশ আইনজীবী রুনা লায়লাকে ১৬ জুন কাশিমপুর মহিলা কারাগারে আনা হয়। কারাগারের সাধারণ ওয়ার্ডে নেওয়ার পর রুনার দেহ তল্লাশি করে কর্তব্যরত মেট্রন তার কাছে ৭ হাজার ৪০০ টাকা পান। ওই টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য পাপিয়া ও তার সহযোগীরা ১৯ জুন রুনাকে নির্যাতন শুরু করেন বলে অভিযোগ তার পরিবারের। একপর্যায়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় রুনাকে মেঝেতে ফেলে রাখা হয়। এ নিয়ে কারাগারের ভেতরে কেস টেবিল বা সালিস বসে। সেখানে ত্রিমুখী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বন্দি ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে পাপিয়ার ভয়ে সাধারণ কয়েদিরা রুনা লায়লার ওপর অমানবিক নির্যাতনের প্রতিবাদ করতে পারেননি।

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম বলেন, ওই নারীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা চলছে।

কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের (ভারপ্রাপ্ত) জেল সুপার ওবায়দুর রহমান বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত প্রতিবেদন জমা হলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আমিনুল ইসলাম/এসআর/জিকেএস