ফজল-এ-খোদা ছিলেন একজন বাংলাদেশি কবি, গীতিকার, ছড়াকার ও পত্রিকা সম্পাদক। ১৯৪১ সালের ৯ মার্চ পাবনার বেড়া থানার বনগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তৎকালীন পাকিস্তান বেতারের তালিকাভুক্ত গীতিকার হিসেবে ১৯৬৩ সাল থেকে কর্মজীবন শুরু করেন। পরের বছর তিনি পাকিস্তান টেলিভিশনেও তালিকাভুক্ত হন। ১৯৭১-এ অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে তার লেখা গণসংগীত ‘সংগ্রাম, সংগ্রাম, সংগ্রাম চলবে, দিন রাত অবিরাম’ গানটি তৎকালীন টেলিভিশন প্রচার করে।
Advertisement
ফজল-এ-খোদার লেখা এবং মোহাম্মদ আবদুল জব্বারের সুরারোপ করা ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ গানটি ২০০৬ সালে বিবিসির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাংলা গানের সেরা ২০ গানের তালিকায় ১২তম স্থান পায়। এছাড়াও লেখা উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছে, ‘যে দেশেতে শাপলা শালুক ঝিলের জলে ভাসে’, ‘ভালোবাসার মূল্য কত আমি কিছু জানি না’, ‘কলসি কাঁধে ঘাটে যায় কোন রূপসী’, বাসন্তী রং শাড়ি পরে কোন রমণী চলে যায়’, আমি প্রদীপের মতো রাত জেগে জেগে’, ‘প্রেমের এক নাম জীবন’, ‘ভাবনা আমার আহত পাখির মতো, পথের ধুলোয় লুটোবে’, ‘বউ কথা কও পাখির ডাকে ঘুম ভাঙরে’, ‘খোকনমণি রাগ করে না’ ইত্যাদি।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার শিকার যখন, তখনো তিনি বেতারে কাজ করেন। বাংলাদেশ বেতার হয়ে গেল রেডিও বাংলাদেশ। সরকারি কর্মচারী হয়েও ফজল-এ-খোদা লিখলেন এক কাব্যিক প্রতিবাদ ‘এমন তো কথা ছিল না...’।
বশীর আহমেদের সুর আর মোহাম্মদ আবদুল জব্বারের গাওয়া ফজল-এ-খোদার সেই গানটি ছিল ‘ভাবনা আমার আহত পাখির মতো/ পথের ধুলোয় লুটোবে/ সাত রঙে রাঙা স্বপ্ন-বিহঙ্গ/ সহসা পাখনা লুটোবে/ এমন তো কথা ছিল না’। ১৯৭৬ সালের জানুয়ারি মাসে রচিত এবং প্রচারিত এই গানটি বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা ও গাওয়া প্রথম গান। বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে তার হত্যায় ব্যথিত হয়ে ফজল-এ-খোদা নিজের দুঃখ-কষ্ট-ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই গানের মাধ্যমে।
Advertisement
ফজল-এ-খোদা ছড়াকার, সংগঠক ছিলেন। শিশু কিশোর সংগঠন শাপলা শালুকের আসরের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। সত্তর দশকে তিনি শিশু কিশোরদের মাসিক পত্রিকা ‘শাপলা শালুক’ সম্পাদনা করতেন। তার লেখা ১০টি ছড়াগ্রন্থ, ৫টির কবিতার গ্রন্থসহ তার মোট ৩৩টি বই প্রকাশিত হয়।
তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ: নামে যার কেঁপে ওঠে, সূর্য স্বর্ণ দ্বীপ, বিতর্কিত জ্যোৎস্না, নির্জন পঙক্তিমালা, তাড়া করে অশুভ সময়, সভ্যতার চন্দ্রবিন্দু, জাগল বাঙালি জাগল। ছড়া: সানাই, আড়ি, টুনটুনি, জয় ছড়ার জয়, বাংলার ছড়া বাঙালির ছড়া ইত্যাদি।
সংগীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০২৩ সালে তাকে একুশে পদক প্রদান করে। ২০২১ সালের ৪ জুলাই তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
কেএসকে/জিকেএস
Advertisement