এপ্রিল থেকে জুন বা বাংলা মাস চৈত্র থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত বজ্রপাত বেশি হয়। বজ্রপাতে প্রাণহানীর আশঙ্কা রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বজ্রপাতে মৃত্যু বেড়েই চলেছে।
Advertisement
বজ্রপাতের নির্দিষ্ট সময় না থাকলেও ঝড়-বৃষ্টির সময় এর সম্ভাবনা থাকে শতভাগ। এ সময় আশপাশের কেউ বজ্রপাতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলে তাৎক্ষণিক যা করবেন-
বজ্রপাতে কেউ আহত হলে বৈদ্যুতিক শকে আহতদের মতো করেই চিকিৎসা করতে হবে। বজ্রাঘাতে আহত হওয়ার পরবর্তী ১৫ মিনিট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওই সময়ের মধ্যেই সঠিক পদ্ধতিতে সিপিআর চালু করতে হবে। হাসপাতাল দূরে হলে আগেই সিপিআর চালু করুন। সঠিক চিকিৎসা হলে ও আহত ব্যক্তি বজ্রাঘাতের আঘাত সামলে নিতে পারেন এবং সঠিক সময় তার চিকিৎসাও শুরু হয় তাহলে বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ।
অনেকেই মনে করেন বজ্রাঘাতে আহত ব্যক্তিকে স্পর্শ করলে তড়িৎস্পৃষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। কারণ বজ্রপাতে ডিসি কারেন্ট থাকে। যিনি বজ্রাহত হয়েছেন তিনি তড়িৎবাহক হন না। কিন্তু ইলেকট্রিক কারেন্টে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া আলাদা ব্যাপার। তখন শরীরের মধ্যে দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হয়।
Advertisement
আরও পড়ুন: বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার ১৫ উপায়
বজ্রাহত হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা করা জরুরি। অনেক সময়ে বাজ পড়ে জ্ঞান হারালে ধরেই নেওয়া হয় তিনি মৃত। এটা সবচেয়ে বড় ভুল। তাছাড়া বজ্রাহত হলে সেই ব্যক্তিকে কেউ স্পর্শ করতে চান না। ফলে দ্রুত চিকিৎসাও শুরু হয় না। বিশেষজ্ঞদের মতে, বজ্রাহত হলে দেরি না করেই সিপিআর (কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন) চালু করতে হবে। তারপর যত দ্রুত সম্ভব, সঠিক পদ্ধতি মেনে তাকে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। আহতকে চিত হওয়া অবস্থায় দেহ এবং ঘাড় সোজা রেখে নিয়ে যেতে হবে হাসপাতালে।
বজ্রপাত কেন হয়?বজ্রগর্ভ মেঘের নীচের অংশে জলীয় বাষ্প ও তুষারকণার পরিমাণ বেশি থাকে। সেখানে জলকণায় সংঘর্ষ বেশি হয়, তুলনায় উপরের দিকে কম হয়। ফলে মেঘের নীচের দিকে নেগেটিভ চার্জের পরিমাণ বেশি থাকে, আর উপরের দিকে থাকে পজিটিভ চার্জ। এই দুই বিপরীতধর্মী চার্জের প্রতিক্রিয়ায় শক্তিশালী বিদ্যুৎ ক্ষেত্র তৈরি করে। তবে এই বিদ্যুৎ ক্ষেত্র মেঘের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।
বজ্রপাত মূলত মেঘের মধ্যে যখন তড়িৎ ঋণাত্মক বা ইলেকট্রন চার্জের পরিমাণ বেড়ে যায়, বিপরীতে মাটিতে তড়িৎ ধণাত্মক চার্জ জমা হয়। বজ্রগর্ভ মেঘ ও মাটিতে তৈরি হওয়া দুই বিপরীত ধর্মী চার্জের পরিমাণ বাড়লে মাঝের বাতাসের বাধা অতিক্রম করে একটি লাইন তৈরি হয়, যাকে বলে স্টেপড লিডার। মেঘে যে শক্তিশালী ক্ষেত্র তৈরি হয় তার প্রতি ইঞ্চিতে প্রায় ১০ হাজার ভোল্ট বিদ্যুৎ শক্তি থাকে। ফলে চারপাশের বাতাসও আয়নিত হয়ে যায়। ফলে এই পথেই মেঘ থেকে বিদ্যুৎ শক্তি মাটিতে নেমে আসে। তখন আমরা বলি বজ্রপাত হয়েছে। সাধারণত গাছপালা, উঁচু বাড়ি, টাওয়ার ইত্যাদি বেয়ে মাটি থেকে তড়িৎ ধণাত্মক চার্জ ওপরে উঠে মেঘের তড়িৎ ঋণাত্মক চার্জের সঙ্গে ওই লাইন তৈরি করে। এর মাঝে কোনো মানুষ, প্রাণী চলে এলে হাজার হাজার ভোল্ট কারেন্ট লাগে শরীরে।
Advertisement
কেএসকে/জেআইএম