তার পুরো নাম ক্রিস্টিয়ান ফ্রিডরিখ স্যামুয়েল হ্যানিম্যান। যিনি জার্মানির একজন বিখ্যাত চিকিৎসক ছিলেন। তবে তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার আবিষ্কারক হিসেবে।
Advertisement
স্যামুয়েল হ্যানিম্যান জার্মানির সাক্সনী রাজ্যের ড্রেসড্রেন শহরের কাছে মিশেনে ১৭৫৫ সালের ১০ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। লেখাপড়ায় হাতে খড়ি হয় বাবা-মায়ের কাছ থেকে। ১২ বছর বয়সে তাকে মিসেনের টাউন স্কুলে ভর্তি করা হয়। অতঃপর তিনি ১৯ বছর বয়সে ফার্স্টেন অ্যাডল্যান্ডে স্কুল সেন্ট আফ্রা স্কুলে ভর্তি হন। এখানে তিনি হিপোক্র্যাটিসের লেখার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পাশাপাশি ল্যাটিন, গ্রীক ও হিব্রু ভাষা এবং ইতিহাস, পদার্থবিদ্যা ও উদ্ভিদবিদ্যা শিক্ষা করেন।
চিকিৎসা বিদ্যা ছিল তার প্রিয় বিষয়। ১৭৭৫ সনে বিশ বছর বয়সে তিনি লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হন। কিন্তু তিনি এ প্রতিষ্ঠানের অব্যবস্থাপনা ও কম সুযোগ সুবিধার জন্য অস্বস্তি বোধ করেন। মেডিসিন শিক্ষার্থীদের জন্য লিপজিগ না ছিল ক্লিনিক, না ছিল হাসপাতাল। হ্যানিম্যান লিপজিগ এ ঔষধ নিয়ে দুই বছর পড়াশোনা করেন। তার আয় কম থাকার কারণে তিনি অর্থের বিনিময়ে ইংরেজি হতে বই অনুবাদ এবং ধনী গ্রীকদেরকে ফ্রেঞ্চ ভাষা শিখানোর কাজ শুরু করেন। এভাবেই হ্যানিম্যান এর নিয়মিত ছাত্রজীবনের ইতি ঘটে।
তবে হ্যানিম্যান ২২ বছর বয়সে ১১টি ভাষায় সুপন্ডিত হন, যেমন-জার্মান, গ্রীক, ল্যাটিন, ইংরেজি, ইতালীয়, হিব্রু, সিরিয়ান, আরবি, স্প্যানিশ, ফরাসি ও চ্যাডউইক। তিনি একজন নামকরা অনুবাদক ছিলেন। বিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসা বিজ্ঞান, কৃষিবিদ্যা, দর্শন, সাধারণ সাহিত্যকর্ম বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন ভাষা হতে জার্মান ভাষায় অসংখ্য বই পত্র অনুবাদ করেন। যেমন-ইংরেজি ভাষা হতে ১৫ টি বইয়ের মোট ২১ খণ্ড, ফ্রেঞ্চ বা ফরাসি ভাষা হতে ৬ টি বইয়ের মোট ৯টি খণ্ড, ইতালিয় ভাষা হতে ১ টি ও ল্যাটিন হতে ১ টি বই। তার এ অসাধারণ ভাষাজ্ঞান ও অনুবাদ-কর্ম পরবর্তী কালে নিজের অসংখ্য লেখার উপর প্রভাব বিস্তার করেছিল। নিজেও তা থেকে ব্যাপক জ্ঞান লাভ করেন।
Advertisement
হ্যানিম্যান ১৮০৫ সালে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা চালু করেন। ১৮১০ সালে চিকিৎসা নিয়মাবলী সংক্রান্ত গ্রন্থ ‘অর্গানন অব রেসনাল হেলিং আর্ট’ জার্মানি ভাষায় প্রকাশ করেন। যা পরবর্তীকালে ‘অর্গানন অব মেডিসিন’ নামে প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে তিনি ১৮১২ থেকে ১৮২১ সাল পর্যন্ত লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে হোমিওপ্যাথি বিষয়ে শিক্ষা দান করেন। ১৮৩৫ সালের জুন মাসে জার্মানি ছেড়ে প্যারিসে বসবাস শুরু করেন। সেখানেই ১৮৪৩ সালের ২ জুলাই প্যারিসেই মৃত্যুবরণ করেন। কেএসকে/এমএস