দেশজুড়ে

বেশি দামে চামড়া কিনে বিপাকে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা

বাড়তি দামে চামড়া কিনে বিপাকে পড়েছেন মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা। তাও আবার লবণের উচ্চমূল্য। দুইয়ে মিলে মাথায় হাত মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। তারা বলছেন, আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কম মূল্যে চামড়া কিনছেন। ফলে তারা ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন।

Advertisement

আড়তদাররা বলেছেন উল্টো কথা। তারা বলছেন, চামড়ার মান যাচাই না করেই বাড়তি দামে কিনে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা লোকসানের শিকার হচ্ছেন।

দেশের অন্যতম চামড়ার মোকাম যশোরের রাজারহাট। শনিবার ঈদ পরবর্তীতে প্রথম হাটে চামড়া বেচাকেনা করতে যান বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীরা। এই মোকামে যাওয়া মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবারও বাড়তি দামে চামড়া কিনে বিপাকে পড়েছেন তারা। তাদের লোকসান আরও বাড়িয়েছে লবণের চড়া দাম। ফলে প্রতি চামড়ায় মোটা অঙ্কের লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।

আরও পড়ুন> অধিক বৃষ্টি-গরমে ১০ শতাংশ চামড়া নষ্ট হওয়ার শঙ্কা

Advertisement

তবে আড়তদার ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা বলছেন, মানভেদে সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রি হচ্ছে। ট্যানারি মালিকদের ওপর নির্ভর করছে চামড়ার বাজারের ভবিষ্যৎ।

যদিও আগামি সপ্তাহে আরও জমজমাট হবে মোকাম দাবি করছেন চামড়া সংশ্লিষ্টরা।

শনিবার সরেজমিনে চামড়ার মোকামে দেখা গেছে, যশোরসহ খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা হাটে চামড়া নিয়ে যান। সেসব চামড়া তারা ছাগল ও গরুর পৃথক করে স্তুপ করে রেখেছেন। সেই সব স্তুপ করা চামড়া দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পাইকার ও ট্যানারি শিল্পের প্রতিনিধিরা ঘুরে ঘুরে দেখছেন।

পছন্দ অনুযায়ী চামড়া ক্রয় করছেন স্থানীয় ও বাইরের আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তবে চামড়ার বাজার দরে হতাশ মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, গ্রাম গঞ্জ থেকে কেনা চামড়া সংরক্ষণে লবণ খরচ বেড়েছে। ক্রয়মূল্য ও লবণ যোগ করে একটি চামড়ার যে দাম দাঁড়িয়েছে সেই দামে বিক্রি করতে পারছেন তারা।

Advertisement

দেখা গেছে, ছাগলের চামড়া ৫ টাকা থেকে ৪৫ টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি হয়েছে। আর গরুর চামড়া ৪০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। লবণ ও শ্রমিক খরচ বাড়তি হওয়ায় অনেকের পুঁজি বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়েছে বলে দাবি করেছেন।

আরও পড়ুন> সারাদেশে এক কোটি ৪১ হাজার পশু কোরবানি

নড়াইলের জয়ন্ত কুমার নামে মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী বলেন, সরকার চামড়ার ফুট নির্ধারণ করেছে ৪৮ টাকা। আমরা ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে কাঁচা চামড়া কিনেছি। সেই চামড়া লবণ, শ্রমিক দিয়ে ৪৫ টাকা খরচ হয়েছে। ঈদের দুই দিন পর চামড়া হাটে নিয়ে এসে দাম পাচ্ছি ২৫-৩০ টাকা। প্রতি চামড়াতেই ১৫ থেকে ২০ টাকা লোকসান হচ্ছে। লোকসান করে তো ব্যবসা করা যায় না।

তিনি আরও বলেন, চামড়া শিল্প আজ ধংসের পথে। চামড়া শিল্পকে রক্ষা করতে হলে সরকারকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। চামড়া শিল্পের সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে।আর আমাদের ন্যায্য দামেই চামড়ার মূল্য দিতে হবে।

যশোরের অভয়নগর উপজেলা থেকে আসা মহাদেব বিশ্বাস বলেন, এবার ৪০০ পিস গরুর চামড়া কিনেছি। আজকের হাটে ২০০ পিস গরু ও ১০০টি ছাগলের চামড়া এনেছি। গরুর চামড়া ৭০০ টাকা দরে আর ছাগলের চামড়া ২০-২৫ টাকা দরে বিক্রি করেছি। গরুর চামড়াপ্রতি খরচ বাদ দিয়ে ১০০ টাকা করে গচ্চা গেছে। গড়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকা লোকসান হবে আমার। পরের হাটে দাম না পেলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।

নড়াইলের ব্যবসায়ী হরেন বিশ্বাস বলেন, হাটে ৫০০ পিস গরুর চামড়া এনেছি। প্রতিটি চামড়া কিনেছি ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে। লবণ, শ্রমিক খরচ ও পরিবহন বাবদ প্রতিটি চামড়ায় আরও ২০০ টাকা করে খরচ হয়েছে। আজকের হাটে বড় চামড়া বিক্রি করেছি ৮০০ টাকা এবং ছোটগুলো ৪০০ টাকা দরে। এর মধ্যে ৫০টি চামড়াও বিক্রি হয়নি।

আরও পড়ুন> বিটিএর চিঠি সংরক্ষণ ত্রুটিতে প্রতিবছর ৩০ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়

এদিকে, পাইকারী ব্যবসায়ীদের দাবি, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা অদক্ষতার কারণেই লোকসান গুনছেন। খারাপ মানের চামড়া বেশি দামে ক্রয় করায় মোকামে এসে ধরা খাচ্ছেন। বাজার মন্দ নয়, সরকারি নির্ধারিত দামেই চামড়া বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় আড়তদাররা বলছেন, সরকারি চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিলেও চামড়ার মান নির্ধারণ করে দেননি। এজন্য পাইকারি ব্যবসায়ীরা মান যাচাই করেই চামড়ার দাম নির্ধারণ করছেন। যারা ভালো মানের চামড়া এনেছেন, তারা দামও ভাল পাচ্ছেন।

আড়তদার গিয়াস উদ্দীন বলেন, ঈদের দিন দুপুর থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত ৩ হাজার গরুর চামড়া কিনেছি। মানভেদে ২০০ থেকে ১ হাজার টাকা দরে চামড়া কিনেছি। ৩০ ফুটের একটি গরুর চামড়া সংরক্ষণ করতে ৫ কেজি লবণ লাগে। এ বছর লবণের দাম বেশি। সংরক্ষণ খরচ বেশি পড়ে যাচ্ছে। ট্যানারির মালিকরা তো বেশি দাম দেবে না। যে কারণে বেশি দামে চামড়া কেনাও যাচ্ছে না।

যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দীন মুকুল বলেন, ঈদের দিন দুপুর ও শুক্রবার ১ কোটি টাকার কাঁচা চামড়া বিক্রি হয়েছে। আর শনিবার ১০ হাজার গরু ও ৩০ হাজার ছাগলের চামড়া এসেছে, যা প্রায় কোটি টাকায় বেচাকেনা হয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও দাবি করেন, বাজারে কোন সিন্ডিকেট নেই। প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই বেচাকেনা হচ্ছে। চামড়া ভারতে পাচার হওয়ারও কোন সুযোগও নেই। প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছে। চামড়া খাতকে চাঙা করতে হলে ব্লু চামড়া রপ্তানি করতে হবে।

এই হাটে ঈদ মৌসুমে ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকার অধিক চামড়া বেচাকেনা হয়।

এসএনআর/এমএস