পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছের বিকল্প নেই। সাম্প্রতিক তাপমাত্রা সেটাই স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। অথচ আমরা বিভিন্ন স্থাপনার অজুহাতে অকাতরে কেটে ফেলছি গাছ। শহর কিংবা গ্রামে গাছ কাটার হিড়িক আমাদের ভাবতে বাধ্য করেছে। কমে যাচ্ছে ফসলি জমি। বাড়ছে তাপমাত্রা। যে পরিমাণ গাছ কাটা হচ্ছে, সে পরিমাণ গাছ কিন্তু লাগানো হচ্ছে না।
Advertisement
জানা যায়, একটি দেশের মোট ভূখণ্ডের কমপক্ষে ২৫ ভাগ বনভূমি দরকার। বাংলাদেশে সে তুলনায় অনেক কম। পর্যাপ্ত বনভূমি না থাকায় প্রতিনিয়ত বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে। মরুভূমিতে রূপান্তর হচ্ছে। কাবর্ন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়েছে। গাছ কমায় আবহাওয়ার আচরণও বদলে গেছে। গরমের সময় অতিরিক্ত গরম, ঠান্ডার সময় কখনো অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম পরিলক্ষিত হচ্ছে। এছাড়া কৃষি উৎপাদনও হ্রাস পেয়েছে। তাই পরিবেশ-প্রকৃতি বাঁচাতে গাছ লাগানোর কোনো বিকল্প নেই।
আরও পড়ুন: কৃষ্ণচূড়ার রঙে প্রকৃতি যেন নবরূপে
ঈদুল আজহার ছুটিতেই অনেকেই গ্রামের বাড়িতে আছেন। কেউ কেউ স্থাপনার কাজে হাত দিয়েছেন। বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার করছেন। এ কাজ করতে গিয়ে অবশ্যই গাছ কাটবেন না। প্রয়োজনে বাড়ির আশেপাশে, রাস্তার পাশে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, পরিত্যক্ত জায়গায় বেশি বেশি গাছ লাগাতে পারেন। বাড়ি নির্মাণের প্রয়োজনে বয়স্ক একটি গাছ কাটলে অন্তত দশটি গাছ রোপণ করবেন।
Advertisement
গবেষণায় দেখা গেছে, ৫০ বছর বেঁচে থাকা একটি গাছ বিভিন্নভাবে আমাদের উপকৃত করছে। বায়ুদূষণ থেকে পরিবেশ রক্ষায় ১০ লাখ টাকা, জীবন রক্ষাকারী অক্সিজেন দেয় ৫ লাখ টাকা, বৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে বাঁচায় ৫ লাখ টাকা, মাটির ক্ষয়রোধ ও উর্বর শক্তি বাড়িয়ে বাঁচায় ৫ লাখ টাকা, গাছে বাস করা প্রাণীদের খাদ্য ও আশ্রয় দিয়ে বাঁচায় ৫ লাখ টাকা, আসবাবপত্র, জ্বালানি কাঠ ও ফল সরবরাহ করে বাঁচায় ৫ লাখ টাকা, জীব-জন্তুর খাদ্য জোগান দিয়ে বাঁচায় ৪০ হাজার টাকা। ফলে একটি গাছের আর্থিক সুবিধার মূল্য দাঁড়ায় ৩৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
আরও পড়ুন: গাছ যেভাবে মানুষের উপকার করে
সুতরাং আমাদের পরিবেশ আমাদেরই রক্ষা করতে হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে হলে আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। গ্রামের তরুণরা মিলেও বৃৃক্ষরোপণ কর্মসূচি হাতে নিতে পারেন। গ্রামের যেখানেই ফাঁকা জায়গা দেখবেন, জমির মালিকের অনুমতি নিয়ে গাছ লাগিয়ে দিতে পারেন। গাছের ফল বা সুবিধা কে ভোগ করবেন, সেটা বিবেচ্য না হওয়াই ভালো। এ ক্ষেত্রে স্থানভেদে ফলদ, বনজ ও ওষুধি গাছ লাগাতে পারেন।
আমাদের পরিবেশ আমরাই নিরাপদ করে তুলতে পারি। দরকার শুধু সদিচ্ছার। যেহেতু গাছ আমাদের রক্ষা করে, তাই আমাদেরও উচিত গাছকে রক্ষা করা। কেননা বাড়ির আশপাশের গাছ আমাদের ঘরকে ঝড়-তুফানের হাত থেকে রক্ষা করে। তাই আমাদেরও গাছের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। শুভ কাজে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই একটি সুন্দর-নির্মল পরিবেশ গড়ে তুলতে পারবো। পরিবেশ রক্ষা করাই হবে আমাদের ব্রত।
Advertisement
এসইউ/এএসএম