ভ্রমণ

ঈদে পরিবার-প্রিয়জন নিয়ে ঘুরে আসুন ‘ঠিকানায়’

শফিকুল ইসলাম শফিক

Advertisement

ঢাকায় ইট পাথরের ভিড়ে নতুন এক গ্রামের খোঁজ মিলেছে। যেখানে পাবেন গ্রামীণ পরিবেশ ও ফুলের রাজ্য। চারদিকে ফুলের ঘ্রাণ ও প্রাকৃতিক দৃশ্য মন কারবে সবার।

রাজধানীর বুকে গ্রামীণ পরিবেশে দাঁড়িয়ে আছে কাঠ ও তিন দিয়ে তৈরি দোতলা এক কফিশপ, পুরো নাম ঠিকানা ডে আউটার্স। এটি সবার কাছে ঠিকানা নামেই পরিচিত। ছুটির দিনগুলোতে অতিথি ও দর্শনার্থীরা ভিড় করেন ঠিকানায়। এজন্য আগে থেকে ফোন করে বুকিং করে রাখতে হয়।

আরও পড়ুন: বর্ষায় সিলেট ভ্রমণে ঘুরে আসুন ৩ স্পট

Advertisement

এর প্রতিষ্ঠাতা তায়্যেবা আফরিন নামক একজন নারী উদ্যোক্তা। তিনি বর্তমানে কফিশটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করছেন। এটি ঢাকা জেলার বাড্ডা থানার বড় বেরাইদ বালু নদীর তীরে অবস্থিত। ঠিকানা ডে আউটার্স প্রতিষ্ঠার পূর্বে এখানে তায়্যেবা আফরিনের বাবা-মায়ের খান কিচেন নামে একটি প্রতিষ্ঠান ছিল। বাবা-মায়ের সঙ্গে প্রায় সময় এখানে আসতেন তিনি।

কিচেনের পাশে থাকা জঙ্গল, সবুজ প্রান্তর আর নিরিবিলি পরিবেশ মুগ্ধ করতো তাকে। তাই তিনি এখানে গ্রামীণ পরিবেশের আদলে এখানে একটি কফিশপ করার উদ্যোগ নেন। যা হবে আর পাঁচটি কফিশপ থেকে ভিন্ন ও কাঠের তৈরি কর। তিনি এই বিষয়ে তার বাবাকে জানালেন, মেয়ের স্বপ্ন পূরণে বাবা হাত বাড়িয়ে দেন।

এরপর একদিন তায়্যেবা আফরিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুরের রেজিয়া বেগমের অদ্ভুদ বাড়ির ভিডিও দেখেন। বাবাকে দেখালেন আফরিন। এরপর তার বাবা বিক্রমপুরে যোগাযোগ করেন ও বাড়ির নকশা দেন। এ অনুযারী অল্প সময়ের মধ্যে কাঠ ও টিন দিয়ে তৈরি এই কফিশপ নির্মিত হয়। যার নাম রাখা হয় ‘ঠিকানা ডে আউটার্স’।

আরও পড়ুন: কম খরচে ভুটান ভ্রমণ করতে চাইলে সঙ্গে নিন ডলার!

Advertisement

এভাবেই তায়্যেবা আফরিনের প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা, সবুজের সঙ্গে মিশে থাকার মধ্য দিয়ে শুরু হয় বাণিজ্যিকভাবে স্বপ্ন পূরণের পথচলা। উদ্যোক্তা আফরিনের পছন্দের ফুল পিটুনিয়া আর ফুলের প্রতি ভালোবাসা থাকার কারণে ঠিকানা ডে আউটার্সকে সাজাতে দেশ ও বিদেশ থেকে সংগ্রহ করেন কিছু ফুলের জাত।

সংগ্রহ করা সেই ফুলের জাতের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল হাইব্রিড ও তার নিজস্ব নার্সারিতে বীজ বপন করে চারা তৈরি করেন ও সেই ফুলের চারা দিয়ে কফিশপটি সাজিয়ে তোলেন। সাজানো ফুলের চারাগুলো মূলত সিজনাল ফুটে থাকে আর ফোঁটার সঙ্গ সঙ্গে কফিশপটির সম্পূর্ণ রূপ প্রকাশ পায়।

বিশেষ করে পিটুনিয়া যেন ঠিকানা ডে আউটার্স এর সৌন্দর্যের অলংকার। এছাড়া তায়্যেবা আফরিন এখানে শহীদের প্রতি স্মরণে ২২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩৪ ফুট প্রস্থের ৪৫ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট একটি শহীদ মিনার গড়ে তোলেন। তার লক্ষ্য নতুন প্রজন্মের কাছে ভাষার ইতিহাস ও গুরুত্ব তুলে ধরা।

আরও পড়ুন: হারিয়ে যাওয়া টাইটানে যে ধরনের সুবিধা ও নিরাপত্তা ছিল

শহীদ মিনারটি তৈরি করতে সময় লেগেছে ২০ জনের প্রায় এক মাস। প্রায় ১২-১৩ হাজার ফুলের টপের সমন্বয়ে সাজিয়ে তোলা হয়েছে শহীদ মিনারটি। ঠিকানায় বিবাহের অনুষ্ঠান, গায়ে হলুদ, জন্মদিন ও পিকনিকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য রয়েছে বুকিংয়ের ব্যবস্থা। এছাড়া আছে মাটির চুলায় রান্না করা সুস্বাদু বাংলা খাবার।

এছাড়া ব্রাজিল থেকে বিন এনে তৈরি করা হয় ঠিকানার কফি। নিয়ম অনুযায়ী ঠিকানায় যেতে হলে অগ্রিম বুকিং দিতে হবে। তবে সরাসরি বুকিংয়ের ব্যবস্থাও আছে। ঠিকানায় প্রবেশের সময় সঙ্গে বাইরের খাবার নিয়ে যাওয়ার অনুমতি নেই।

তবে খাবারের প্যাকেজ নিলে ভেতরে প্রবেশের জন্য প্রবেশমূল্য পরিশোধ করতে হবে না। খাবার অর্ডার না করলে জনপ্রতি ৩০০ টাকা দিয়ে টিকিট সংগ্রহ করে প্রবেশ করতে হয়।

আরও পড়ুন: ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসুন ‘বাংলার কাশ্মীর ও দার্জিলিংয়ে’

ঠিকানায় ঢুকে প্রথম গেইট পেরিয়ে আছে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। প্রবেশের শুরুতেই বাহারি ফুলের সুবাস। ফুলের চাদরে মোড়ানো তিন ও কাঠের তৈরি কফিশপ। কাঠের সিঁড়ি বেয়ে উপরে যেতেই বিছিয়ে রাখা টেবিল চেয়ার আর প্রচুর মানুষের সমাগম আর দখিনা বাতাসে দুলছে রং-বেরঙের ফুল।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, কাঠ ও টিন দিয়ে তৈরি কফিশপটির ভেতর ও বারান্দায় ঝুলছে বাঁশ দিয়ে তৈরি লাইটশিটগুলো। আর বেলকনি দিয়ে তাকালে দেখা যায়, বালু নদী আর ঠিকানা ডে আউটার্স কফিশপটির চারপাশের সৌন্দর্য।

পাশেই আছে ছোটদের খেলার মাঠ আর খেলার স্থাপনা। চায়ের দোকানগুলোতে পাওয়া যায় দুধ চা ও মালাই চা। আর একটু সামনে যেতেই সবুজ ঘাসের এক মাঠ পাশে দুলছে কয়েকটি দোলনা, তার সঙ্গে পুকুর ঘাট, ফুল দিয়ে সাজানো নৌকা। এখানে আছে নৌকা ও সাম্পান ভ্রমণের আয়োজন। সন্ধ্যার পর কফিশপটির জমকালো রূপ দেখতে ছুটে আসে দর্শনার্থীরা।

আরও পড়ুন: যে দেশে কনে যায় বিয়ে করতে, ধূমপান করলেই হয় জেল

খাবারের তালিকা- রসোনাবিলাসীদের জন্য এখানে আছে দেশি-বিদেশি বাহারি খাবারের আয়োজন। খাবারের তালিকায় রয়েছে সাদা ভাত, কাটারি ভোগ, দেশি মোরগ, দেশি গরু, আলুর ঝোল, ছোট মাছের কারি, সবজি কারি, ঘন ঢাল, ফিঙ্গার ফুড, ফিশ ফিঙ্গার, বার্গার, সেন্ডুইজ, পিঠা, কফি, শরবত ও আইস্ক্রিমসহ বাহারি রকমের খাবার।

ঠিকানায় গিয়ে যে বিষয়ে সতর্ক থাকবেন

১. গাছে হাত দিয়ে ছবি তোলা বা ফুল ছেঁড়া নিষেধ। গাছের কোনো ক্ষতি হলে ৫০০০ টাকা জরিমানা গুনতে হবে। তাই বিশেষভাবে বাচ্চাদের প্রতি খেয়াল রাখা জরুরি।

২. আপনার ব্যবহৃত পানির বোতল বা টিস্যু যেখানে সেখানে না ফেলে নিজ দায়িত্বে নির্ধারিত ডাস্টবিনে ফেলুন।

৩. ফুটবল বা ক্রিকেট খেলতে গিয়ে খেয়াল রাখবেন যেন গাছের ক্ষতি না হয়।

৪. যেখানে-সেখানে ধূমপান নিষেধ তাই নির্দিষ্ট জায়গায় ধূমপান করুন।

কীভাবে যাবেন ঠিকানায়?

ঢাকা সদরঘাট হয়ে ভাটারা নতুন বাজার নামবেন। আর এয়ারপোর্ট বা বিশ্বরোড হয়ে আসলেও নতুন বাজার নামতে হবে। নতুন বাজার নেমে কিছুটা সামনে এগুলোই বিভিন্ন রিকশা বা লেগুনা পেয়ে যাবেন।

তারপর সেখান থেকে রিকশা বা লেগুনার ড্রাইভারকে বললেই নিয়ে আসবে ঠিকানা ডে আউটার্সে। চাইলে ‘ঠিকানা ডে আউটার্স’ goo.gl/maps এর গুগল ম্যাপ দেখেও সেখানে যেতে পারেন।

জেএমএস/জেআইএম