‘তোমার বাড়ির রঙের মেলায় দেখেছিলাম বায়োস্কোপ/বায়োস্কোপের নেশা আমায় ছাড়ে না’ গানটি বাজাতে বাজাতে ধানমন্ডি লেকের পাশে বায়োস্কোপ দেখাচ্ছিলেন এক যুবক। পড়নে রংবেরঙের পোশাক। মাথায় রঙিন চুল, মুখে জোকারের মুখোশ। অনলাইন অ্যাপস বায়োস্কোপ নয়, বাংলা থেকে বিলুপ্তপ্রায় ঐতিহ্য বায়োস্কোপের কথা বলছিলাম।
Advertisement
বায়োস্কোপ এমন একটি বাক্স যার ভেতর চোখ রেখে দেখা যেত নানা ঘটনাবলি। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য, সুখ-দুঃখের ইতিহাস, মজার ঘটনা গানের তালে তালে ব্যাখ্যা করার পাশাপাশি একের পর এক ছবি আসতে থাকতো। বায়োস্কোপের চারখানা ফুটোয় চোখ লাগিয়ে সিনেমার মতো উপভোগ করত ছোট বাচ্চারা। বাদ যেত না বড়রাও। সেই সঙ্গে বায়োস্কোপ চালনাকারীর মুখের নানান ছন্দ।
একসময় গ্রামাঞ্চলে ও শহরে বায়োস্কোপের ব্যাপক প্রচলন ছিল। কাঁধে বায়োস্কোপের বাক্স ঝুলিয়ে ডুগডুগি বাজাতে বাজাতে যেত বায়োস্কোপ চালনাকারী। হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো পেছন পেছন ছুটতো শিশু-কিশোররা। চাল বা সামান্য কিছু টাকা দিলেই দেখাতেন বায়োস্কোপ।
আরও পড়ুন: সেই হাঁক-ডাক নেই কটকটি বিক্রেতাদের
Advertisement
বর্তমানে শহর তো দূরের কথা গ্রামেও বায়োস্কোপের দেখা পাওয়া মুশকিল। বলা চলে এটি বিলুপ্ত! তবে বায়োস্কোপের পতনে প্রথমত দায়ী টেলিভিশন। টেলিভিশন আসার পর থেকে বায়োস্কোপের দৌরাত্ম্য কমতে শুরু করছে। রঙিন টেলিভিশন, স্যাটেলাইট চ্যানেল বায়োস্কোপের পতনকে ত্বরান্বিত করেছে। বর্তমানে জাদুঘরে রাখার পরিস্থিতিতে এটি।
এদিকে স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের যুগে বায়োস্কোপ অ্যাপসের নামই শুনেছে বর্তমান প্রজন্ম। যা সাবস্ক্রিপশন ভিত্তিক ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম। যেখানে লাইভ টিভি ও পছন্দের ভিডিও দেখে তারা। তবে বায়োস্কোপ নামে যে হারিয়ে যাওয়া একটি ঐতিহ্য ছিল তা নতুন প্রজন্মের অনেকেই হয়তো জানেন না।
গ্রাম-গঞ্জে, হাটে, মেলায়, অনুষ্ঠান ছাড়াও পাড়া-মহল্লায় বায়োস্কোপ দেখানো হতো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিকায়নে বায়োস্কোপ এখন বিলীন। তবে পুরোনো স্মৃতি ধরে রাখতে এখনো কেউ কেউ বায়োস্কোপ দেখিয়ে বেড়ায়। উদ্যোক্তা মেলা, লোকশিল্প মেলা, কারুশিল্প মেলায় প্রায় সময় বায়োস্কোপ দেখানো লোকেদের ডাক পড়ে। তখন বর্তমান প্রজন্মের কেউ কেউ শখের বসে বায়োস্কোপ দেখে। আর প্রবীণরা খোঁজেন শৈশবের স্মৃতি।
কেএসকে/এমএস
Advertisement