জাতীয়

কোরবানির পশু পরিবহনে বাধা দিলেই কঠোর ব্যবস্থা

ঈদুল আজহা দোরগোড়ায়। আর দুদিন চলবে কোরবানির পশু কেনাবেচা-পরিবহন। দেশজুড়ে প্রান্তিক খামারিরা শ্রম-ঘামে কোরবানিযোগ্য করে তোলেন কোরবানির পশু। ভালো দামের আশায় বেশিরভাগ খামারিই হন শহরমুখী। এক্ষেত্রে তাদের সবচেয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় গবাদি পশু পরিবহনে। এবার পরিবহন, রাস্তা-ঘাটে চাঁদাবাজি, অবৈধ হাসিল, হাটে পশু নামানোয় বাধাসহ যে কোনো সমস্যার সমাধানে কঠোর অবস্থানে প্রশাসন। এ সংক্রান্ত ফোনে জরুরি সেবার ৯৯৯-ও রাখবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

Advertisement

সম্প্রতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে কোরবানির পশুর চাহিদা নিরূপণ, সরবরাহ ও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোরবানির পশুর অবাধ পরিবহন নিশ্চিতে প্রস্তুতিমূলক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সংশ্লিষ্টদের নিয়ে এসব বিষয়ে দিকনির্দেশনামূলক আলোচনা করা হয়। এতে জানানো হয়, ঈদুল আজহা উদযাপনে সরকারের অন্য দপ্তর-সংস্থার পাশাপাশি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ও কাজ করবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা দেশে প্রাণিসম্পদ উৎপাদন বেড়েছে। তাই কোনোভাবেই বাইরের প্রাণীর ওপর নির্ভরশীল হওয়া যাবে না। দেশের খামারি ও উৎপাদনকারীদের রক্ষায় কোনোভাবেই অবৈধ গবাদিপশুর অনুপ্রবেশ যাতে না ঘটে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকতে হবে।

আরও পড়ুন>> দেশি গরুতে ভর্তি সীমান্ত হাট, কম ক্রেতায় হতাশা

সভায় জানানো হয়, এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে যাতে গবাদি পশু পরিবহন করা যায়, বিক্রেতারা স্বাধীনভাবে যেন হাটে প্রবেশ করতে পারেন এবং সড়ক বা সেতুতে কোরবানির পশুবাহী গাড়ি প্রাধান্য দিতে হবে, যাতে রাস্তায় পশু আটকে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি না হয়। এক্ষেত্রে ৯৯৯ ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিকারের ব্যবস্থাসহ পশু কোরবানির ক্ষেত্রে কোনো রকম সমস্যা যাতে না হয়, সেজন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে। মহাসড়কে বা যেখানে হাট বসালে যান চলাচল বাধাগ্রস্ত হতে পারে এমন কিছু যাতে না হয় এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সতর্ক থাকবে।

Advertisement

বিগত বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও কোনো খামারি নিজ বাড়ি থেকে পশু বিক্রি করলে তাকে হাসিল দিতে হবে না। কোনো খামারি তার পশু দূরবর্তী হাটে নিতে চাইলে রাস্তাঘাটে জোর করে নামাতে বাধ্য করা যাবে না। এক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় সরকারের ইউনিট তথ্য পৌরসভা, উপজেলা বা ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি করপোরেশনে বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

হাটে আনার পথে কেউ পশু বিক্রি করলে তার কাছ থেকে ইজারা গ্রাহক জোর করে চাঁদা বা হাসিল নিতে পারবেন না। নগদ টাকা বহন না করে বিকল্প উপায়ে স্মার্ট পদ্ধতিতে খামারিরা যাতে আর্থিক লেনদেন করতে পারেন সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে ডিজিটাল লেনদেন কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

সভায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, অনলাইনে গত বছর গবাদিপশু বিক্রি হয়েছিল। এবছরও এ পদ্ধতি অব্যাহত থাকবে, যা ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের জন্য সুখকর অবস্থা তৈরি করবে। অনলাইনে কেনা গরু পছন্দ না হলে টাকা ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থাও এবছর সংযোজন করা হচ্ছে। যাতে ক্রেতারা কোনোভাবেই প্রতারিত না হন। হাটে স্টেরয়েড মুক্ত গবাদিপশু ক্রেতারা যাতে কিনতে পারেন সেজন্য ভেটেরিনারি টিম ভূমিকা পালন করবে।

আরও পড়ুন>> ঈদের আগে সক্রিয় জাল টাকা চক্র, টার্গেট পশুর হাট

Advertisement

সভায় জননিরাপত্তা বিভাগের উপ-সচিব মো. শামীম হাসান কোরবানির পশু পরিবহনসহ যে কোনো সমস্যায় জরুরি সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ৯৯৯ নম্বরে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানান।

এসময় ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকা বিভাগীয় কমিশনাররা কোরবানির পশু পরিবহনের ক্ষেত্রে যাতে কোনো চাঁদাবাজি না হয় সেদিকে নজরদারির পাশাপাশি সঠিক পদ্ধতিতে কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।

বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ ইমরান বলেন, সারাদেশে এবারের প্রস্তুতি সন্তোষজনক। ঢাকা শহরে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে গবাদি পশুর বড় একটি অংশ সরবরাহ হয়। কোরবানির পশু সরবরাহ নিশ্চিতে পরিবহনে হয়রানি বন্ধ, ফেরি পারাপারে অগ্রাধিকার, ইজারাদারদের অনৈতিক হাসিল আদায় বন্ধ করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে গত বছর ছয়টি পশুর হাটে ৩৩ কোটি টাকার ডিজিটাল লেনদেন হয়। এবছর এ কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হয়েছে। হাটে বিভিন্ন ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং সুবিধা বিদ্যমান থাকবে। খামারি যাতে নিরাপদে ব্যাংকিং চ্যানেলে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন সে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জাল নোট শনাক্তকরণে হাটে ডিভাইসসহ জনবল থাকবে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবছর কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা এক কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৩টি, যা গত বছরের চেয়ে চার লাখ ১১ হাজার ৯৪৪টি বেশি। এবছর কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর মধ্যে ৪৮ লাখ ৪৩ হাজার ৭৫২টি গরু-মহিষ, ৭৬ লাখ ৯০ হাজার ছাগল-ভেড়া এবং দুই হাজার ৫৮১টি অন্য প্রজাতির গবাদিপশু। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে আট লাখ ৯৫ হাজার ৪৫৪টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ২০ লাখ ৫৩ হাজার ১২৮টি, রাজশাহী বিভাগে ৪৫ লাখ ১১ হাজার ৬১৪টি, খুলনা বিভাগে ১৫ লাখ ১১ হাজার ৭০৮টি, বরিশাল বিভাগে চার লাখ ৯৩ হাজার ২০৬টি, সিলেট বিভাগে চার লাখ ১০ হাজার ২২৫টি, রংপুর বিভাগে ১৯ লাখ ৬২ হাজার ৯৫১টি এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ছয় লাখ ৯৮ হাজার ৪৭টি কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু রয়েছে। এবছর কোরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা এক কোটি ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭৩৯টি। সে হিসাবে এবছর পশুর ২১ লাখ ৪১ হাজার ৫৯৪টি পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে।

আরও পড়ুন>> ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পশুহাট, দুর্ভোগে যাত্রী-চালক

গত বছর কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ছিল এক কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি এবং কোরবানি করা গবাদিপশুর সংখ্যা ছিল ৯৯ লাখ ২১ হাজার ৯৪১টি।

সার্বিক বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবারও কোনো খামারি নিজ বাড়ি থেকে পশু বিক্রি করলে তাকে হাসিল দিতে হবে না। কোনো খামারি তার পশু দূরবর্তী হাটে নিতে চাইলে রাস্তাঘাটে জোর করে নামাতে বাধ্য করা যাবে না। এক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় সরকার ইউনিট তথা পৌরসভা, উপজেলা বা ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি করপোরেশন এ বিষয়টি নিশ্চিত করবে।’

‘হাটে আনার পথে কেউ পশু বিক্রি করলে তার কাছ থেকে ইজারা গ্রাহক জোর করে চাঁদা বা হাসিল আদায় করতে পারবে না। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে ৯৯৯-এ অথবা স্থানীয় প্রশাসনকে জানানোর সঙ্গে সঙ্গেই তারা ব্যবস্থা নেবেন। তবে যারা পথ থেকে বা বাড়ি থেকে বিক্রি বা কিনবেন তাদের একটি ডকুমেন্টস সঙ্গে রাখতে হবে, যাতে কেউ বলতে না পারে যে এটা বাজার থেকে কেনা, হাসিল দিতে হবে।’

মন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে বিগত বছর ছয়টি পশুর হাটে ৩৩ কোটি টাকার ডিজিটাল লেনদেন হয়। এবছর ঢাকা ও চট্টগ্রামের পশুর হাটগুলোতে ক্যাশলেস বা নগদ টাকাবিহীন লেনদেনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কোরবানির পশুর হাটগুলোতে কিউআর কোড, স্মার্ট অ্যাপ, এটিএম বুথ, পয়েন্ট অব সেলস মেশিন, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস), এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন করা হবে। এছাড়া প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহায়তায় ২৬টি জেলায় ১০টি ব্যাংক ও তিনটি মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রোভাইডারের মাধ্যমে ডিজিটাল লেনদেনের কার্যক্রম শুরু করেছে। এবার পশুর দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই থাকবে।

৯৯৯-এর পুলিশ পরিদর্শক (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেসন্স অফিসার) আনোয়ার সাত্তার জাগো নিউজকে বলেন, ‘পশু হাটে আনার পথে কোনো ধরনের সমস্যা হলে সংশ্লিষ্ট থানাকে জানাতে বলা হয়েছে। ৯৯৯-এ নির্ধারিত স্থান থেকে কল এলে সেটা আমরা তাৎক্ষণিক সংশ্লিষ্ট থানার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেই এবং মনিটরিং করি। ইদানীং আমরা আলাদাভাবে মনিটরিং করছি এ সংক্রান্ত কতগুলো কল আসছে। অনেক ক্ষেত্রে পশুর হাট সংশ্লিষ্টদের সঙ্গেও আমরা ভুক্তভোগীদের যোগাযোগ করিয়ে দেই। শুধু যোগাযোগ করিয়ে দিয়েই নয়, অভিযোগের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যিনি অভিযোগকারী তিনি সন্তুষ্ট কি না- এগুলোও আমরা মনিটর করি।

তিনি আরও বলেন, ঈদের সময় আমরা আলাদাভাবে কোরবানির পশুর বিষয়টি নিয়ে কাজ করি। এরই মধ্যে আমাদের কাছে এ সংক্রান্ত অনেক কল এসেছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ অভিযোগই গরুর ট্রাক গন্তব্যে যেতে না দিয়ে অন্য হাটে আটকে রাখার। এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে হাটে পশু নামানো হয়, সেই হাটে ক্রেতা কম থাকলে বিক্রেতারা জমজমাট কোনো হাটে পশুটি ওঠাতে চান। এক্ষেত্রে অনেক সময় তাদের গরুগুলো হাট থেকে বের হতে দেওয়া হয় না। আমরা সেসব সমস্যা সমাধান করেছি।

আইএইচআর/এএসএ/এমএস