সীমান্ত দিয়ে এখনো প্রবেশ করতে পারেনি ভারতীয় গরু। ফলে যশোরের শার্শা উপজেলার পশুহাটে দেশের গরুই শোভা পাচ্ছে। দেশি গরু ও ছাগলে ভর্তি সীমান্তবর্তী এসব হাট। তবে ক্রেতা কম থাকায় হতাশ বিক্রেতা ও হাট ইজারাদারা।
Advertisement
খামারিরা বলছেন, হাটে এখনো ভারতীয় গরু আসেনি। তাই দেশি গরুতে হাটভর্তি। গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় দাম কিছুটা বেশি। কিন্তু ক্রেতা নাই। স্বাস্থ্য পরীক্ষায় তদারকি থাকায় এবার পুষ্টিমান সম্পন্ন পশু পাওয়া যাচ্ছে বলে দাবি উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেনাপোল থেকে শার্শার রুদ্রপুর পর্যন্ত সীমান্তের ইছামতী নদীর অংশটুকু বাদে বেশিরভাগ স্থানে কাঁটাতারের বেড়া। পাশাপাশি সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে বিজিবি-বিএসএফের যৌথ নজরদারি আছে। বিজিবির পক্ষ থেকে সীমান্তে মতবিনিময় সভা করে ভারতীয় গরু না আনার আহ্বান জানানো হয়েছে। ফলে এ সীমান্ত দিয়ে গরু আনা এখন কঠিন ব্যাপার।
উপজেলার সাতমাইল হাটে পশুর ব্যাপক সমাগম ঘটেছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তায় হাট ইজারাদার তাদের নিজস্ব লোকজন প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন। হাটে দেশি, শাহীওয়াল, ফ্রিজিয়ানসহ বিভিন্ন জাতের গরুর পাশাপাশি ছাগলও বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহে সাধারণত দুদিন শনিবার ও মঙ্গলবার এখানে হাট বসলে এবার ঈদের আগের দিন পর্যন্ত হাট চলবে বলে জানিয়েছেন ইজারাদার। সাতমাইল পশু হাট থেকে গরু কিনে নিয়ে যান ঢাকা, রংপুর, চট্টগ্রাম, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা।
Advertisement
উপজেলার পুটখালি গ্রামের খামারি নাসির উদ্দিন বলেন, গো- খাদ্যের দাম বেশি। কিন্তু ক্রেতারা যে দাম বলছেন, তাতে করে প্রতি গরুতে দেখা যাচ্ছে ২০ হাজার টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে।
পশু বিক্রি না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে আরেক খামারি বলেন, হাটে হাজার হাজার কোরবানির পশু আছে। ক্রেতাও আছেন হাজারো। কিন্তু এরপরও পশু বিক্রি হচ্ছে কম।
একাধিক ক্রেতা জানান, বিগত সময়ের চেয়ে এ বছর গরুর দাম বেশি। তবে বিক্রেতাদের দাবি গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় পশুপালনে খরচ বেড়েছে। ফলে হাটে পশুর যে দাম উঠেছে তাতে লোকসানের সংখ্যা দেখছেন তারা।
গরু ব্যবসায়ী আবদুল আজিজ বলেন, উপজেলার এ হাটে এবার বিভিন্ন এলাকা থেকে বেশি পশু আসছে। হাটভর্তি গরু। এ হাটে গত কয়েক হাটের তুলনায় বিক্রিও অনেক বেশি। মাঝারি সাইজের গরুর চাহিদা বেশি।
Advertisement
সাতমাইল গরু হাট ইজারাদার আবু তালেব জাগো নিউজকে বলেন, হাটের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ক্রেতা ও বিক্রেতারা যাতে প্রতারিত না হন, এ জন্য মাইকে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ঈদের আগে আর দুটি হাট আছে। বিক্রি না বাড়লে বড় ধরনের লোকসানের শিকার হতে।
শার্শা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বিনয় কৃষ্ণ মন্ডল জাগো নিউজকে বলেন, এ বছর উপজেলায় কোরবানি জন্য এক হাজার ৩২২টি খামারের ১৫ হাজার ৩০০টি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে গরু. ছাগল, ভেড়া ও মহিষ। চলতি বছর উপজেলায় কোরবানি পশুর চাহিদা আছে ৯ হাজার ১২০টি। চাহিদার বেশি কোরবানির পশু বাইরের জেলায় সরবরাহ করা যাবে।
তিনি আরও বলেন, সাতমাইল হাটে কোরবানির পশু বেচাকেনার সময় মেডিকেল টিম কাজ করছে। কোনো পশু রোগাক্রান্ত হলে তা শনাক্তে কাজ করছে মেডিকেল টিম। একই সঙ্গে হাটে থাকছে ক্যাশলেস ব্যবস্থা। ক্রেতারা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পশু কিনতে পারবেন।
সাতমাইল পশুহাটের সাধারণ সম্পাদক ও বাগআঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইলিয়াস কবীর বকুল জাগো নিউজকে বলেন, ঐতিহ্যবাহী বাগআঁচড়া সাতমাইল পশুহাটে ব্যাপকহারে পশু আমদানি হয়েছে। কিন্তু বেচাকেনা কম। এবার ভারতীয় গরু আসার কোনো সুযোগ নেই। বেচাকেনা বাড়লে এবার দেশীয় খামারিরা অনেকটা লাভের মুখ দেখবে। আমরা গরু হাটটি ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য উপযুক্ত। আমাদের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক বাজার মনিটরিং অব্যাহত আছে।
এসজে/এমএস