দেশ ভাগোত্তর বাংলা কথাসাহিত্যে কিংবদন্তিতুল্য একজন, পশ্চিমবঙ্গের দেবেশ রায়। এই প্রবন্ধ গ্রন্থে দেবেশ রায় কথা পেড়েছেন অনেক বিষয়েই। আমাদের ভালো থাকা নিয়ে, কখনওবা খুব মশকরার ছলে ‘আমরা যে আসলে ভালো নেই’ বা পৃথিবী নামক রঙ্গমঞ্চে ভালো থাকার অভিনয় সং সেজে করে যাই, তারই চিত্রায়ন করেছেন। ষাটের দশকে, ‘কী বলবো’ আর ‘কীভাবে বলবো’ নিয়ে এক তর্ক ওঠে। দেবেশ রায়, ‘কীভাবে বলবো’ এই শর্ত মাথায় নিয়েই হয়তো স্টাইলে এতো ভিন্নতা নিয়ে খেলেছেন। শব্দ, বাক্য গঠনে ভাষাকে যে ভাবে ভারী করেছেন, আমার কতক জায়গায় দু'তিন বার পড়তে হয়েছে এর গুরার্থ উদ্ধার করতে।
Advertisement
তারই সমসাময়িক এই বাংলার কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক তাই বলেছেন… ‘ভাবনার চিত্রণ, অনুভবের চিত্রণ, উপলব্ধির চিত্রণ, বোধের চিত্রণ! এত দায় কি ভাষা নিতে পারবে? ভাষাকে দিয়েই তিনি এই অসাধ্য সাধন করিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন।
লেখক জীবনে দেবেশ যতই এগোচ্ছেন ততই তাঁর লেখা ঘোর জটিল হয়ে উঠছে। সরল বাক্যও তাঁর সহজতার সীমানা পার হয়ে প্রায় অবোধ্য একটা জটিলতার দিকে চলে যাচ্ছে। কখনো কখনো মনে হয় দেবেশ রায়ের একে একটি বাক্য যা ধরতে পারে, তার অতিরিক্ত ভার নিয়ে অনেক সময় টলমল করতে থাকে। আমার নিজের ধারণা, এটাকেই হয়তো আয়েশি পাঠক ভারাক্লিষ্টতা বলে মনে করে।’
সামান্য অমান্যতা’য় তার হাসান ভাইয়ের উদ্দেশ্যে চিঠিও ছিল। ‘নামাজ আমার আদায় হইল না’ এ ব্যক্ত ছিল ‘সেলিম আল দীন’কে হারানোর বেদনা।
Advertisement
‘আধুনিকতা, আমাদের আধুনিকতা ও অন্য আধুনিকতা’ প্রবন্ধে পোস্টমর্ডানিজমকে নিয়ে ছিল প্রশ্ন।
... ‘আধুনিকতার পরের যে নতুন আধুনিকতার কথা আমি ভাবছি- তা কোনো খোঁড়া তত্ত্ব নয়, তা কেন্দ্রিকতাকে অস্বীকার করা এক পরিধিকে সত্য করে তোলার সক্রিয়তা। কেন্দ্রহীন পরিধি- এমন কল্পনার মধ্যে স্ববিরোধিতা আছে। সেই স্ববিরোধী দ্বন্দ্বকেই আমি খুঁজছি। আমাদের এই এখনকার, এই বর্তমানের দ্বান্দ্বিকতা।’সুখ পাঠ্য।
বই: অল্প কিছু আলো লেখক: দেবেশ রায়প্রকাশনা: অভিযান পাবলিশার্স
এইচআর/জেআইএম
Advertisement