ঈদযাত্রায় আন্তঃনগর ট্রেনের শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি করছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে বেসরকারিভাবে চলাচল করা ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে কাউন্টার থেকেই। আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রীদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে এবারের ঈদে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে কমিউটার ট্রেনের টিকিট কাউন্টার স্থানান্তর করেছে স্টেশন কতৃপক্ষ। কমিউটার ট্রেনের টিকিট দেওয়া হচ্ছে শহরতলী আট নম্বর প্ল্যাটফর্মের টিকিট কাউন্টার থেকে। অর্থাৎ যেখান থেকে নারায়ণগঞ্জের ট্রেনের টিকিট পাওয়া যেত, ওই কাউন্টারে এখন পাওয়া যাচ্ছে কমিউটার ট্রেনের টিকিট। ঈদযাত্রার প্রথম দিন শনিবার সকালে এই টিকিট কাউন্টার স্থানান্তর করা হয়। এতে কাউন্টার খুঁজে পেতে সমস্যাসহ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন কমিউটার ট্রেনের টিকিট প্রত্যাশীরা।
Advertisement
রোববার (২৫ জুন) ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, যাত্রীদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে বাঁশের ছয়টি গেট তৈরি করেছে স্টেশন কর্তৃপক্ষ। সেখানে চেক করা হচ্ছে ট্রেনের টিকিট ও এনআইডি কার্ড। ওই বাঁশের গেটের পেছনে রয়েছে কমিউটার ট্রেনের টিকিট কাউন্টার। কাউন্টারের ওপরে লাল রঙের ব্যানারে লেখা- ‘কমিউটার ট্রেনের টিকিট নারায়ণগঞ্জ (শহরতলী) ট্রেনের টিকিট বিক্রয় কাউন্টার থেকে দেওয়া হচ্ছে’। শহরতলীর স্টেশন থেকে দেওয়া হচ্ছে আটটি কমিউটার ট্রেনের টিকিট।
আন্তঃনগর ট্রেনের শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি হওয়ায় অনেকেই কমিউটার ট্রেনে যাতায়াত করেন। স্টেশনে এসে কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে যান নির্ধারিত গন্তব্যে। তবে বর্তমান টিকিট চেকিং তল্লাশি পেরিয়ে যাত্রীদের কমিউটার ট্রেনের টিকিট কাউন্টারে আসার সুযোগ নেই। তাই যাত্রীরা টিকিট চেকিং তল্লাশি স্থানের সামনে এসে আবার ফিরে যাচ্ছেন আট নম্বর শহরতলী প্ল্যাটফর্মের দিকে। এতে অন্তত তাদের ২০০ থেকে ২৫০ মিটার পথ ঘুরতে হচ্ছে। শনিবার থেকেই এই ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রীরা। এ বিষয়ে গতকাল স্টেশন কর্তৃপক্ষের আগাম জানানোর কোনো ব্যবস্থা না থাকলেও আজ প্রবেশ মুখে মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ।
স্ত্রী-সন্তানকে বাড়ি পাঠাতে তাদের নিয়ে স্টেশনে আসেন মনিরুজ্জামান। মাইকে কমিউটার ট্রেনের টিকিটের তথ্য পেয়ে স্ত্রী-সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে কাউন্টারে আসেন। এসময় জাগো নিউজকে মনিরুজ্জামান বলেন, সবসময় স্টেশনের বাইরে বাম পাশেই কমিউটার ট্রেনের টিকিট কাটতাম। এবার এসে শুনি সেখানে কোনো টিকিট বিক্রি হচ্ছে না। আগে থেকে এটা জানিও না। এটা আগে জানালে ব্যাগ-বাচ্চা নিয়ে আর এত ঘুরতে হতো না।
Advertisement
দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার ট্রেনের যাত্রী রমজান আলী জাগো নিউজকে বলেন, কমিউটার ট্রেনের কাউন্টার নারায়ণগঞ্জ প্ল্যাটফর্মে স্থানান্তর করা হয়েছে। এখান থেকে শহরতলী কাউন্টারে যাওয়ার সহজ কোনো ব্যবস্থা নেই। সেই অনেকটা পথ ঘুরে ওই কাউন্টারে যেতে হয়। এটা আগে থেকে চিনতাম না। হঠাৎ করে এরকম পরিবর্তন করায় খুঁজে পেতে কষ্ট হয়েছে।
আরেক যাত্রী ফয়সাল আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, কাউন্টার এত দূরে না এনে পাশেই অন্য একটা ব্যবস্থা করতে পারতো।
তবে গন্তব্যের টিকিট মিলছে না বলেও অনেকে অভিযোগ করেছেন। নরসিংদী যাবেন বাচ্চু মিয়া, কিন্তু তাকে ফেনীর ট্রেনের টিকিট কাটতে বলা হয়। অর্থাৎ গন্তব্যের স্টেশন থেকে আরও অনেক দূরের গন্তব্যের টিকিট কিনতে বলছেন টিকিট বুকিংয়ের দায়িত্বরতরা। মূলত যাত্রীদের বিভ্রান্ত করতেই ঈদের আগে তারা এসব কাজ করছেন বলে অভিযোগ। বাচ্চু মিয়া বলেন, আগের জায়গা থেকে ঘুরে এখানে এসে টিকিট কাটতে আসলাম। কাউন্টার থেকে বলে ফেনীর টিকিট কাটতে। ১০০ টাকা ছাড়া টিকিট নাই।
এ বিষয়ে কমিউটার ট্রেনের কাউন্টারে থাকা এক বুকিং সহকারী নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, স্টেশন কর্তৃপক্ষ আমাদের বলেছে আমরা যেন শহরতলী প্ল্যাটফর্মের টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট বিক্রি করি। ঈদযাত্রা শেষ হলে আমরা আবারও আগের টিকিট কাউন্টারে ফিরে যাবো।
Advertisement
নির্দিষ্ট গন্তব্যের টিকিট না দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এরকম কোনো বিষয় নেই। আসলে তারা যেসব গন্তব্যের টিকিট চাচ্ছেন, সেসব টিকিট শেষ হয়ে গেছে। আমাদের কাছে যেসব গন্তব্যের টিকিট অবশিষ্ট আছে, সেটাই তাদের জানিয়েছি আমরা।
কাউন্টার স্থানান্তরের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার সাংবাদিকদের বলেন, গতবারের অভিজ্ঞতা থেকে এবার কমিউটার ট্রেনের কাউন্টার সরানো হয়েছে। গতবার আমরা স্টেশন ব্যবস্থা শক্ত করেছিলাম। কিন্তু কমিউটার ট্রেনের টিকিট কাউন্টার আগের জায়গায় ছিল। গতবার ঈদের আগের দিন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছিল। প্রচুর মানুষ প্ল্যাটফর্মে ঢুকে যান। এবার যেন এমনটা না হয়, সেই বিড়ম্বনা এড়াতে শহরতলী প্ল্যাটফর্মের কাউন্টারে স্থানান্তর করা হয়েছে।
আরএসএম/কেএসআর/এমএস