দেশজুড়ে

বদলেছে কুয়াকাটার চিত্র, পর্যটক দ্বিগুণ

কুয়াকাটা, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি সমুদ্র সৈকত ও পর্যটনকেন্দ্র। ১৯৯৮ সালে পর্যটন নগরী ঘোষণার পরপরই ভ্রমণপিপাসুদের কাছে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ সৈকত ‘সাগরকন্যা’ হিসেবে পরিচিত। এটি বাংলাদেশের একমাত্র সৈকত, যেখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত উপভোগ করা যায়।

Advertisement

পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণার দুই যুগ পর পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে এ পর্যটন নগরীতে তৈরি হয়েছে নতুন মাইলফলক। বদলে যাচ্ছে কুয়াকাটার চিত্র। বিগত বছরের তুলনায় গত বছর এ সৈকতে দ্বিগুণ পর্যটকদের সমাগম হয়েছে। ২০২২ সালের ২৫ জুন সেতু উদ্বোধনের পর পর্যটকদের ঢল নামে কুয়াকাটায়। সাধারণত মৌসুমে পর্যটকের যে আগমন ঘটে তার কয়েকগুণ বেশি পর্যটক কুয়াকাটায় এসেছেন বলে জানিয়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন>> ঈদের ছুটিতে পর্যটকে মুখরিত কুয়াকাটা সৈকত

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরপরই কুয়াকাটায় পর্যটকদের আগমন বাড়তে থাকে। এর কল্যাণে পর্যটন ব্যবসায়ী, ট্যুর অপারেটরস, ট্যুর গাইডসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট ১৬টি পেশার সঙ্গে জড়িতদের ব্যবস্ততা বেড়ে যায়। বছরজুড়েই পর্যটকের আনাগোনা ছিল এ সৈকতে।

Advertisement

তবে, পদ্মা সেতুর কল্যাণে পর্যটক বাড়লেও তাদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।ব্যবসায়ীরা বলছেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর কুয়াকাটায় আগত বিনিয়োগকারীদের জন্য জমি ক্রয় ও স্থাপনা নির্মাণে অনুমতি জটিলতায় পর্যটকদের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

আরও পড়ুন>> কুয়াকাটায় পর্যটকদের চাহিদা এবার বিমানবন্দর

ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা নাহিদ সাব্বির জাগো নিউজকে বলেন, পরিবার নিয়ে প্রথমবার কুয়াকাটা এসেছেন। পদ্মা সেতুর কল্যাণে কম সময়ে এসে ভালো লাগছে। তবে, সৈকতের সৌন্দর্য বাড়াতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে এখন কক্সবাজার থেকে কুয়াকাটায় ভ্রমণ করা সহজ।

কুয়াকাটা ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কে এম বাচ্চু বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরে পর্যটকদের দ্বিগুণ সাড়া পাচ্ছি। তবে, তুলনামূলক সুযোগ-সুবিধা দিতে না পারায় মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন পর্যটকরা। সরকারের কাছে অনুরোধ থাকবে পর্যটকদের বিষয়টি চিন্তা করে যেন প্রযোজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

Advertisement

আরও পড়ুন>> কুয়াকাটার মাস্টারপ্ল্যানে যুক্ত হচ্ছে সেন্টমার্টিন-সুন্দরবন

কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল এম এ মোতালেব শরীফ বলেন, কুয়াকাটায় বর্তমানে ১৭০টি আবাসিক হোটেল রয়েছে। যার ধারণক্ষমতা প্রায় ২০ হাজার মানুষ। তবে, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর ছুটির দিনগুলোতে ৫০ হাজারের অধিক পর্যটকের আগমন ঘটে এখানে। যে কারণে আশপাশের বাসাবাড়িতে অবস্থান নিতে হয় পর্যটকদের। পদ্মা সেতু কুয়াকাটাবাসীর জন্য আশীর্বাদ। পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধার কথা বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় নেওয়া দরকার।

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা (টোয়াক) প্রেসিডেন্ট রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, আগে কুয়াকাটা- খুলনা, ঝিনাইদহ ও যশোরসহ উত্তরাঞ্চলের পর্যটকদের ওপর বেশি নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু পদ্মা সেতুর কল্যাণে বর্তমানে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলার সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হয়েছে। এখন সব জেলার মানুষজন কুয়াকাটা ভ্রমণে আসছেন। আগে ঢাকা থেকে কুয়াকাটা আসতে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা সময় লাগতো, এখন পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা সময় লাগে। তাই এখন বছরজুড়ে পর্যটক পাচ্ছেন কুয়াকাটার ব্যবসায়ীরা।

আরও পড়ুন>> কুয়াকাটায় ঘোড়দৌড় দেখতে মানুষের ভিড়

কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্যসচিব ও কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক চাকা আরও শক্তিশালী করছে। বিশেষ করে কুয়াকাটা তার ফলভোগ করছে। আগের তুলনায় কুয়াকাটায় এখন দ্বিগুণ পর্যটকের সমাগম ঘটে। তবে, সরকারের মাস্টারপ্ল্যানের কাজ চলমান থাকায় কিছু প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে, যা শিগগির সমাধান হয়ে যাবে।

এমএএইচ/এমএস