আন্তর্জাতিক

কারা এই ওয়াগনার, কেনইবা পুতিনের বিরুদ্ধে গেলো তারা?

ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার হয়ে সবচেয়ে বড় শক্তি হিসেবে লড়াই করার মধ্যেই পুতিন প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক আলোচনায় এসেছে ওয়াগনার গ্রুপ। অথচ সম্প্রতি ইউক্রেনের বাখমুত শহরের দখল নিতে দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল লড়াইয়ে এ গ্রুপের যোদ্ধারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

Advertisement

নিজেদের বেসরকারি সামরিক বাহিনী হিসেবে দাবি করা এই গ্রুপটি রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করলেও পুতিন প্রশাসন এখন এর লাগাম টানার পদক্ষেপ নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু ওয়াগনার আসলে কী, কারা এই গ্রুপে কাজ করে ও কী কাজ করে থাকে তারা। আর কেনই বা রাশিয়া এখন গ্রুপটিকে নিজেদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিতে চাচ্ছে সেটা জেনে নেওয়া যাক।

ওয়াগনার বাহিনী কারা?

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক অনুসন্ধানে বলা হয়েছে, চেচনিয়ায় যুদ্ধ করা রুশ সেনা কর্মকর্তা দিমিত্রি উটকিন সম্ভবত এই বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তবে বর্তমানে এর প্রধান হলেন, ধনী ব্যবসায়ী ইয়েভজেনি প্রিগোজিন, যাকে পুতিনের রাঁধুনী বলা হয়। কারণ একসময় তিনি ক্রেমলিনের জন্য খাবার সরবরাহ করতেন।

Advertisement

ক্রিমিয়া দখলের জন্য ২০১৪ সালের যুদ্ধে ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধারা রাশিয়ার হয়ে প্রথম ভুমিকা পালন করেন। তখনই এ বাহিনীর অস্তিত্ব টের পায় পুরো বিশ্ব। এরপর ২০১৫ সালে সিরিয়াতে সরকার সমর্থিত বাহিনীর পাশে থেকে যুদ্ধ করে ওয়াগনার বাহিনী। সেসময় সিরিয়ার তেলের খনিগুলো পাহারা দিতেন এই বাহিনীর সদস্যরা ।

বর্তমানে ওয়াগনার বাহিনীর সৈন্যরা লিবিয়ায় জেনারেল খলিফা হাফতারের সহযোগী হিসেবে ও মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে হীরার খনি পাহারায় কাজ করছেন। এমনকি, পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালির সরকার ইসলামি জঙ্গী গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ওয়াগনার বাহিনীকে কাজে লাগাচ্ছে বলেও জানা গেছে।

ধারণা করা হয়, সুদানে সোনার খনি পাহারা দেওয়ারও কাজ করছে ওয়াগনার বাহিনীর যোদ্ধারা। মার্কিন সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, ইউক্রেনে যুদ্ধরত রুশ বাহিনীর প্রায় ১০ শতাংশই ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধা। তাদের মধ্যে হাজার হাজার যোদ্ধা এসেছেন রাশিয়ার কারাগারগুলোতে থাকা বন্দীদের মধ্যে থেকে।

প্রথমদিকে এই গ্রুপের সৈন্যসংখ্যা ছিল মাত্র পাঁচ হাজার, যাদের অধিকাংশই ছিল বিভিন্ন রেজিমেন্টের সাবেক সৈন্য। তবে যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তারা বলেন, ক্রেমলিন নিয়মিত বাহিনীর জন্য লোক পেতে সমস্যায় পড়ার পর এই ওয়াগনার বাহিনী বড় সংখ্যায় সেনা নিয়োগ শুরু করে। বর্তমানে তাদের সৈন্যসংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার, যার ৮০ শতাংশই এসেছেন রাশিয়ার কারাবন্দীদের মধ্য থেকে।

Advertisement

কীভাবে রাশিয়ার সামরিক কমান্ডারদের সঙ্গে সংঘাতে জড়ালো ওয়াগনার?

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ওয়াগনার প্রধান প্রিগোজিন বারবারই রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু ও ইউক্রেইনে নিযুক্ত রুশ বাহিনীর প্রধান জেনারেল ভ্যালেরি গেরাসিমোভের বিরুদ্ধে অদক্ষতা ও ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়াগনার যোদ্ধাদের কম করে ইউক্রেনে পাঠানোর অভিযোগ জানিয়ে আসছিলেন।

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যখন থেকে ওয়াগনার যুক্ত হয়েছে, তখন থেকেই মূলত রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে প্রিগোজিনের একটা বিরোধ দেখা দেয়। এটি প্রকট হয়ে ওঠে বাখমুতের যুদ্ধ থেকে।

রাশিয়ার সেনাবাহিনী যখন বাখমুতে সুবিধা করে উঠতে পারছিল না, তখন ওয়াগনার গ্রুপ ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ দনবাস অঞ্চলের ওই শহর দখল করে। সেসময় প্রিগোজিন রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে অসহযোগিতা ও পর্যাপ্ত অস্ত্র সরবরাহ না করার অভিযোগ তোলেন।

তবে ওয়াগনারের এসব অভিযোগ কানে না নিয়েই ইউক্রেনে কাজ করা ‘স্বেচ্ছাসেবক কাঠামোগুলোকে’ জুন মাস শেষ হওয়ার আগেই সরকারের সঙ্গে চুক্তি সই করতে হবে বলে জানায় রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

সরকারের এ ঘোষণায় সরাসরি ওয়াগনার গ্রুপের নাম না থাকলেও, এ উদ্যোগকে সংগঠনটির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হিসেবেই দেখছেন প্রিগোজিন। এক বিবৃতিতে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ক্রেমলিনের সঙ্গে সব চুক্তি বয়কট করবে ওয়াগনার।

শুক্রবার (২৩ মে) প্রিগোজিন দাবি করেন, ইউক্রেনে যুদ্ধ করার মূল কারণ হলো, শোইগু যাতে মার্শাল হতে পারেন। তবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রিগোজিন যেসব তথ্য ছড়াচ্ছেন ও ওয়াগনার গ্রুপের উপর রুশ বাহিনীর হামলা নিয়ে যা বলছেন, তা সত্যি নয়। তার এসব বক্তব্য জনমনে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে।

এদিকে, রুশ সেনাবাহিনীর ডেপুটি প্রধান জেনারেল সের্গেই সুরুভিকিন প্রিগোজেনের প্রতি মস্কোগামী বহর থামিয়ে নিজেদের ঘাঁটিতে ফেরত যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

সূত্র: বিবিসি, ডয়েচে ভেলে

এসএএইচ