এক রাতের মধ্যে পাল্টে গেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দৃশ্যপট। আলোচনায় এখন রাশিয়ার গৃহযুদ্ধ। এই পটপরিবর্তনে যে বাহিনীটি কাজ করছে তার নাম ওয়াগনার বাহিনী। রাশিয়ার এই বেসরকারি ভাড়াটে বাহিনী শুরু থেকেই ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সামনের সারিতে যুদ্ধ করছে। অথচ এখন তারা অবস্থান নিয়েছে নিজ দেশের সেনার বিরুদ্ধে। এতে নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।
Advertisement
এত দিন রাশিয়ার সেনাবাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের সদস্যদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ইউক্রেন বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করেছে। দখল করেছে ইউক্রেনের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ইউক্রেনের সেনাদের সঙ্গে প্রত্যেক জায়গায় শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে এই ওয়াগনার গ্রুপ। ইউক্রেনের অঞ্চল দখল করে বুঝিয়ে দিয়েছে রুশ সেনাদের কাছে। এরপর অন্য কোথাও যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছে রাশিয়ার এই ভারাটে বাহিনী। তাদের সফলতার প্রশংসা করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিজেও।
আরও পড়ুন>রাশিয়ায় সেনা সদর দপ্তরের কাছাকাছি বিকট বিস্ফোরণ
যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার শক্তির অন্যতম এই উৎস আজ ঘরের শত্রুতে পরিণত হয়েছে। রুশ সেনার নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে তারা। অর্থাৎ ইউক্রেন ছেড়ে এখন নিজ সেনাদের বিরুদ্ধেই লড়াই করার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়ার এই বাহিনী। আপতদৃষ্টে মনে হচ্ছে রুশ এই দুই বাহিনী যেকোনো সময় সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে।
Advertisement
এদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ওয়াগনার বাহিনীর বিদ্রোহকে বিশ্বাসঘাতকতার সঙ্গে তুলনা করে শাস্তির ঘোষণা দিয়েছেন। এতে ওয়াগনার বাহিনী আরও ক্ষুব্ধ হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে রাশিয়ার রস্তব অঞ্চল দখলে নেওয়ার দাবি করেছে ওয়াগনার বাহিনীর প্রধান। সেখানের একটি সেনা সদর দপ্তরের কাছাকাছি বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে এরই মধ্যে। ঘটনাস্থল থেকে অনেক লোক পালিয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন>রাশিয়ায় তেলের ডিপোতে আগুন
এমন পরিস্থিতিতে আগামী ২৪ ঘণ্টাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। যদি রুশ কর্তৃপক্ষ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে পারে তাহলে প্রাণে বাঁচবে দুই পক্ষের অসংখ্য সেনা। তা না হলে অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে রাশিয়ার। ছড়িয়ে পড়তে পারে সংঘাত।
যদি সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে সেক্ষেত্রে সুযোগ নিতে পারে ইউক্রেনসহ রাশিয়ার শত্রুরা। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা। ইউক্রেনের যেসব অঞ্চল বর্তমানে রাশিয়ার দখলে সেখানে হামলা জোরদার করতে পারেন জেলেনস্কি। নিজেদের ভূখণ্ড উদ্ধারে মরিয়ে তিনি। তাছাড়া গত কয়েক মাস ধরেই পাল্টা হামলার পরিকল্পনা করে আসছে ইউক্রেনের সেনারা। এক্ষেত্রে অর্থ ও সামরিক সহায়তা অব্যাহত রেখেছে পশ্চিমা বিশ্ব। এমন পরিস্থিতিতে পিছু হাঁটতে বাধ্য হবে রাশিয়া।
Advertisement
অন্যদিকে পুতিন যদি নিজের ঘরেও কোণঠাসা হয়ে পড়েন তাহলে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারেন। ওয়াগনারের বিরুদ্ধে অভিযানের পাশাপাশি ইউক্রেনে হামলা আরও জোরদার করতে পারেন। এতে যেমন প্রাণহানি বাড়বে তেমনি চলবে ধ্বংসযজ্ঞ।
আরও পড়ুন>সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে ইউরোপ-ন্যাটো
এদিকে রাশিয়ার অভ্যন্তরে ওয়াগনার বাহিনীর বিদ্রোহ নিয়ে মুখ খুলেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কিও। এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, রাশিয়ার দুর্বলতা স্পষ্ট। জেলেনস্কি বলেন, মস্কো যত দীর্ঘ সময় ইউক্রেনে তাদের সেনা ও ভাড়াটে বাহিনীকে নিয়োজিত রাখবে তত বেশি নিজেদের দেশে বিশৃঙ্খলা দেখবে।
তাছাড়া গোটা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য ও ন্যাটোসহ তাদের মিত্ররা। তারা স্বাভাবিকভাবেই রুশ সংকটকে ত্বরান্বিত করতে চাইবেন। উসকে দিতে পারে ওয়াগনার বাহিনীকে। পুতিন যদি তার বিচক্ষণতা কাজে লাগিয়ে ওয়াগনার প্রধানকে নিবৃত্ত করতে পারেন তাহলে হয়তো এই যাত্রায় বেঁচে যাবেন। নয়তো ক্ষমতা হারিয়ে বিপর্যয়ের মুখে পড়বেন।
এমএসএম