সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আসছে বড় নিয়োগ। সারাদেশে নিয়োগ দেওয়া হবে দুই হাজার শিক্ষক। সব সরকারি বিদ্যালয়ের বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের শূন্য তালিকা মাঠ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হচ্ছে। ঈদের পর এ তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। আগস্টে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে শুরু করা হবে নিয়োগ প্রক্রিয়া।
Advertisement
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (সরকারি বিদ্যালয়) খালেদা আক্তার এবং মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (বিদ্যালয়) মো. বেলাল হোসাইন জাগো নিউজকে বিষয়টি জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের পার্বত্য অঞ্চল, উপকূলীয় এলাকা, চরাঞ্চল ও অধিকাংশ উপজেলার সরকারি স্কুলে শিক্ষক সংকট চরমে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) যথাযথ পদক্ষেপের অভাব, নতুন শিক্ষক নিয়োগের পরও জেলা ও মহানগরে পোস্টিং এর জন্য দায়ী। রাজধানীসহ মহানগরী ও জেলা পর্যায়ের সরকারি স্কুলগুলোতেও একই অবস্থা।
আরও পড়ুন>> ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির নতুন কারিকুলামে পিছিয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা
Advertisement
ঢাকার তেজগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষকের সংখ্যা ৫১ জন। বিধি অনুযায়ী এখানে ২৫ জন সিনিয়র শিক্ষক ও ২৫ জন সহকারী শিক্ষক থাকবেন। কিন্তু স্কুলটিতে আছেন মাত্র ১০ জন সহকারী শিক্ষক। বাকি ৪০ জনই সিনিয়র শিক্ষক। শুধু তাই নয়, প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বে আছেন নুরুন্নাহার। তিনি শুধুই একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক নন, একটি জেলার শিক্ষা কর্মকর্তাও।
জানতে চাইলে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (বিদ্যালয়) মো. বেলাল হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, সারাদেশে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুই হাজারের মতো শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। জেলা পর্যায়ে এ সংখ্যা আরও বেশি। সে কারণে দ্রুত শিক্ষক সংকট নিরসনে আমরা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সারাদেশে কোথায় কোন বিষয়ের শিক্ষক সংকট সে তালিকা মন্ত্রণালয় থেকে চাওয়া হয়। বর্তমানে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সে তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ঈদের আগে সারাদেশের শূন্যপদের তালিকা পাওয়া যেতে পারে। সেটি পেলে আমরা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর জন্য সুপারিশ করবো। যদি বিসিএস পরীক্ষার নন-ক্যাডর থেকে নিয়োগ দেওয়া হয় তবে শিক্ষক সংকট পূরণে অধিক সময় লেগে যেতে পারে। সে কারণে বিশেষভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে সুপারিশ করা হবে। তবে আপাতত শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিসিএস প্যানেল থেকে শিক্ষক নিয়োগের জন্য পিএসসিতে আবেদন করার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুন>> শুরু হচ্ছে কার্যক্রম, অপেক্ষা ঘুচবে সাড়ে ৩ হাজার প্রতিষ্ঠানের
Advertisement
মাউশি থেকে জানা যায়, দেশে ৩৫১টি সরকারি মাধ্যমিক স্কুল আছে। এসব স্কুলে সহকারী শিক্ষকের পদে কর্মরত শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার। সহকারী শিক্ষকের পদ সাড়ে ১২ হাজার। এর মধ্যে প্রায় দুই হাজার পদ শূন্য। প্রতিদিন গড়ে ৩০-৪০ জন শিক্ষক অবসরে যাচ্ছেন। সবশেষ ২০২২ সালে সরকারি মাধ্যমিকে দুই হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু এসব শিক্ষককে শহর অঞ্চলে পোস্টিং দেওয়ায় সমস্যা কমার পরিবর্তে আরও বেড়েছে। ফলে সরকারি মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে।
জানা যায়, অদৃশ্য কারণে ঢাকার সব সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে ৮০ শতাংশই সিনিয়র শিক্ষক। তিন বছর পর বদলির নিয়ম হলেও যুগের পর যুগ একই স্কুলে শিক্ষকতা করছেন তারা। বদলি ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ার কারণেই এমন পরিস্থিতি দিনের পর দিন চলে আসছে।
মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, নতুন শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক সমন্বয় করতে গিয়ে শিক্ষক সংকটের সমাধান হয়নি। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকটের তালিকা চেয়েছে। এই তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। বছরে দুবার এ তালিকা তৈরি করে দ্রুত নিয়োগ দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মাউশি জানায়, ২০২১ সালের ৩০ জুন সরকারি মাধ্যমিকের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার শিক্ষককে নবম গ্রেডে পদোন্নতি দিয়ে সিনিয়র শিক্ষক করা হয়। পিএসসির মাধ্যমে যিনি সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদে যোগদান করছেন তার পদও নবম গ্রেড। মূলত সিনিয়র শিক্ষক পদ ও সহকারী প্রধান শিক্ষক পদের গ্রেড একই হওয়ায় সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি আটকে আছে। সে কারণে শিক্ষক পদোন্নতির নীতিমালায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
সহাকারী শিক্ষকরা জানান, সরকারি মাধ্যমিকের সংকট সমাধানে একটি স্বতন্ত্র অধিদপ্তর স্থাপন করা প্রয়োজন। কিন্তু এ ধরনের উদ্যোগ না থাকায় মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হয়েও চাকরি বদল করছেন।
আরও পড়ুন>> স্কুল-কলেজে ৮০ হাজার শিক্ষক পদ শূন্য, স্থগিত নিয়োগও
তারা জানান, চলতি বছর ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের আলোকে নতুন পাঠ্যপুস্তক ও শিখন কার্যক্রমের বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে নতুন কারিকুলামে শিক্ষকদের ভূমিকা অনেক বেশি রাখতে হচ্ছে। অথচ বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট থাকায় সেটি ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষক সংকট থাকায় এক বিষয়ের শিক্ষক অন্য বিষয়ে পাঠ দিচ্ছেন। গণিতের শিক্ষক বাংলা পড়ান, ধর্মের শিক্ষক ইংরেজি পড়াচ্ছেন। শিক্ষক সংকট অব্যাহত থাকলে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন অসম্ভব বলে মনে করেন শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সারাদেশের বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক শূন্যপদের সংখ্যা জুন মাসের মধ্যে দিতে বলা হয়েছে। এ তালিকা পাওয়ার পর নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে পিএসসিতে পাঠানো হবে। আগস্টের মধ্যে দুই হাজার শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।
এ বিষয়ে কথা হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (সরকারি বিদ্যালয়) খালেদা আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, সারাদেশে অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট রয়েছে। মাউশি থেকে শিক্ষক নিয়োগের প্রস্তাব পাঠানোর পর সেটি গুরুত্ব দিয়ে সারাদেশের সৃষ্টপদে শিক্ষকের শূন্য তালিকা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। দ্রুতসময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
তিনি আরও বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষকদের ভূমিকা অনেক বেশি রাখতে হবে। বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট বা বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক না থাকলে শিক্ষার মান বাড়ানো কঠিন হয়ে পড়বে। এসব বিষয় গুরুত্ব দিয়ে শূন্য থাকা বিদ্যালয়ে দ্রুত শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এমএইচএম/এএসএ/এমএস