আন্তর্জাতিক

মাকে মুক্তি দেওয়ার অনুরোধ জানালেন অং সান সু চির ছেলে

মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চিকে মুক্তি দিতে দেশটির সেনাবাহিনীকে অনুরোধ জানিয়েছেন তার ছোট ছেলে কিম অ্যারিস। তাছাড়া তিনি তার মাকে সাহায্য করার জন্য বিশ্ব মোড়লদের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন। ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে বর্তমানে কারাভোগ করছেন সু চি।

Advertisement

শুক্রবার (২৩ জুন) এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, লন্ডনে বিবিসি বার্মিজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কিম অ্যারিস তার মাকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমি আমার মাকে কারাগারে থাকতে দিতে পারি না। বিশ্বের উচিত আমার মাকে সাহায্য করা।

ব্রিটিশ নাগরিক কিম অ্যারিসের দাবি, সেনাবাহিনী তাকে তার মায়ের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে কোনো তথ্য দেয়নি। তিনি বার্মিজ দূতাবাস, ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু কেউ-ই তাকে সাহায্য করতে পারেনি।

আরও পড়ুন: গলে যাচ্ছে হিমালয়ের বরফ, ঝুঁকিতে বাংলাদেশসহ এশিয়ার ২০০ কোটি মানুষ

Advertisement

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে দেওয়া নিজের প্রথম সাক্ষাৎকারে অ্যারিস বলেন, এর আগে আমি গণমাধ্যমের সামনে কথা বলতে চাইনি বা খুব বেশি যুক্ত হতে চাইনি। এমনকি, ১৯৮৯ সাল থেকে ২০১০ সালের মধ্যে প্রায় ১৫ বছর ধরে তার মাকে আটকে রাখার সময়ও অ্যারিস কোনো সংবাদমাধ্যমে কথা বলেননি।

কিম অ্যারিস বলেন, রাজনীতি থেকে দূরে থাকাটাই আমার জন্য ভালো। আমি রাজনীতিতে জড়িত হই সেটা আমার মা কখনোই চাননি। কিন্তু এখন যেহেতু তাকে আবারও দীর্ঘ দিনের সাজা দেওয়া হয়েছে এবং সেনাবাহিনী পরিষ্কারভাবে অযৌক্তিক কাজ করে যাচ্ছে, সেহেতু এখন আমার কথা বলা উচিত।

বিবিসি বলছে, সামরিক অভ্যুত্থানের আগে তার মায়ের বিরুদ্ধে সৃষ্ট নানা সমালোচনা সম্পর্কে করা প্রশ্নের জবাব দেননি অ্যারিস। এর পরিবর্তে তিনি বারবার তার মায়ের বর্তমান দুর্দশার কথা তুলে ধরছিলেন।

আরও পড়ুন: অভ্যুত্থানের পর থেকে ১০০ কোটি ডলারের অস্ত্র কিনেছে মিয়ানমার

Advertisement

সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে গৃহবন্দি থাকলেও অং সান সু চিকে গত বছর রাজধানীর একটি নির্জন কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। গত দুই বছর তার প্রায় কোনো খবরই পাওয়া যায়নি। তিনি অসুস্থ ছিলেন বলে গুঞ্জন শোনা গেলেও সামরিক বাহিনী এ তথ্য অস্বীকার করে।

এমন পরিস্থিতিতে কিম অ্যারিস মিয়ানমারের সংকট সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই কিছু করতে হবে। এর মধ্যে সামরিক বাহিনীর ওপর যথাযথ অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও যারা সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করার চেষ্টা করছে তাদের সহায়তা করতে হবে।

অবশ্য ক্ষমতা দখলের পর থেকেই মিয়ানমারের জান্তা সরকারের ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে চলেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশ। এরপরও মিয়ানমার অস্ত্র আমদানি ও অস্ত্র তৈরির কাঁচামাল আমদানি করে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন: মোদী-বাইডেনের আসন্ন বৈঠক কেন গুরুত্বপূর্ণ, বাংলাদেশের সম্পর্ক কী?

নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া অং সান সু চি ছিলেন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় গণতন্ত্রের আইকনদের একজন। প্রায় ১৫ বছর আটক থাকার পর ২০১০ সালে তার মুক্তি মিয়ানমার ও সারাবিশ্বে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। পরবর্তীতে মিয়ানমারের ক্ষমতায় থাকাকালীন তার সরকারের বিরুদ্ধে দেশটির মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নৃশংসতার অভিযোগ ওঠে।

নির্যাতিত এসব রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রায় ১০ লাখ মানুষ মিয়ানমার থেকে পালিয়েছে ও বর্তমানে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে বসবাস করছে।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক বাহিনী। এরপর বন্দি করা হয় অং সান সু চি ও তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) বিভিন্ন স্তরের কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে।

আরও পড়ুন: পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত

বিবিসি বলছে, সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পরপরই মিয়ানমারের সামরিক আদালত সু চিকে বেশ কয়েকটি অভিযোগে অন্তত ৩৩ বছরের সাজা দেন। তখন থেকেই দেশটি গৃহযুদ্ধের দিকে চলে গেছে। সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে প্রাণ হারিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ।

সূত্র: বিবিসি

এসএএইচ/টিটিএন