মতামত

জনশক্তি রফতানিতে ধাক্কা

‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে জনশক্তি রফতানির বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে মালয়েশিয়ার চুক্তি বাতিল এক্ষেত্রে একটি বড় ধাক্কা। দুই দেশের জন্যই এটি অনাকাঙ্খিত। প্রশ্ন উঠেছে চুক্তির পূর্বাপর নিয়ে অদূরদর্শিতা ও অদক্ষতারও। পর্যাপ্ত প্রস্তুতি  না নিয়েই চুক্তি করা হয়েছিল- এমন অভিযোগও উঠছে। বিশেষ করে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের জন্য শ্রমবাজার কতোটা উন্মুক্ত বা সেখানে শ্রমিকের চাহিদা কেমন সে বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া উচিত ছিল। এছাড়া মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বিপুল সংখ্যক শ্রমিক যারা প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের অভাবে ‘অবৈধ’ হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে তাদের বিষয়টিও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় নিতে পারতো বাংলাদেশ। এটা হলে হয়তো জিটুজি প্লাস চুক্তির এভাবে অপমৃত্যু ঘটতো না। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণই হচ্ছে এই মুহূর্তের করণীয়। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি  বাংলাদেশ থেকে ১৫ লাখ শ্রমিক নেওয়ার জন্য মালয়েশিয়ার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।  রাজধানীর ইস্কাটনে প্রবাসী কল্যাণ ভবনে বাংলাদেশের পক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি ও মালয়েশিয়ার পক্ষে দেশটির মানবসম্পদমন্ত্রী রিচার্ড রায়ট আনক জিম চুক্তিতে সই করেন। এ চুক্তির ফলে তিন বছরে বাংলাদেশ থেকে ১৫ লাখ কর্মী নেওয়ার কথা ছিল মালয়েশিয়ার। নির্মাণ খাত, সেবা খাত, মালি ও উৎপাদন খাতেই শ্রমিক নিয়োগের কথা বলেছিল দেশটি।  কিন্তু গত শনিবার মালয়েশিয়া সরকার একতরফাভাবে সেই চুক্তি বাতিল করেছে। এটা খুবই দুঃখজনক যে, মালয়েশিয়া বন্ধুপ্রতিম দেশ হলেও জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে দেশটির কাছ থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। ২০০৯ সালে দেশটিতে বাংলাদেশি শ্রমিক রফতানি বন্ধ থাকার পর ২০১২ সালে নতুন চুক্তি হলেও সেখানেও তেমন সহযোগিতা মেলেনি। আর এবার তো চুক্তি বাস্তবায়নের আগেই  তারা একতরফাভাবে তা বাতিল করে দিল। এটি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এটা দু`টি দেশের বন্ধুত্বসুলভ আচরণেরও পরিপন্থি। তবে জনশক্তি রফতানির দায়টা বেশি বাংলাদেশের। এ কারণে শুধু চুক্তি করলেই হবে না, সেটি যাতে বাস্তবায়ন হয় তার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েই ভবিষ্যতের কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে হবে। বাংলাদেশে সিংহভাগ বৈদেশিক মুদ্রা আসে জনশক্তি রফতানি খাত থেকে। এক্ষেত্রে মালয়েশিয়া বাংলাদেশিদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে। কিন্তু রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতারণা, জাল-জালিয়াতিসহ নানাবিধ কারণে মালয়েশিয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে জনশক্তি রফতানি কাঙ্খিত মাত্রায় সম্ভব হয়নি। এমনকি জিটুজি যুক্তি করেও তা বাস্তবায়ন মাঝপথেই থেমে যায়। এ ব্যাপারে নানাদিক থেকেই অসহযোগিতা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। এ কারণে এবার ‘জিটুজি প্লাস’ চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু সেটিও মালয়েশিয়া সরকার কর্তৃক বাতিল হওয়ার মধ্য দিয়ে নতুন করে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হলো। এ অচলাবস্থা নিরসন অত্যন্ত জরুরি। মালয়েশিয়া সরকারকেও এ ব্যাপারে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারসহ জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে সার্বিক একটি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হলে এক্ষেত্রে উভয় পক্ষকেই আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। এইচআর/এমএস

Advertisement