জাতীয়

রোহিঙ্গারা টাইম বোমার মতো, বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে পারে

‘রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে জঙ্গিবাদ, মাদক কারবার, সশস্ত্র গ্রুপসহ নানা সমস্যা বিরাজমান। এটি একটি টাইম বোমার মতো। বাংলাদেশকে এটা ধ্বংস করে দিতে পারে- এমন দিনও আসতে পারে।’

Advertisement

‘আন্তর্জাতিক শরণার্থী দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ।

মঙ্গলবার (২০ জুন) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আর সি মজুমদার আর্টস মিলনায়তনে ‘এই জনপদে শরণার্থী সমস্যা: অতীত ও বর্তমান’ শীর্ষক এ সভা হয়। বাংলাদেশ সোসাইটি ফর কালচারাল অ্যান্ড সোশ্যাল স্টাডিজ (বিএসসিএসএস) এ আলোচনা সভা আয়োজন করে।

অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ‘রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ভালো থাকার জন্য আসেনি। প্রাণরক্ষার জন্য, নিরাপত্তার জন্য এসেছে। যদি বাংলাদেশ তাদের ঢুকতে না দিতো, তাহলে হয়তো অনেক রোহিঙ্গার প্রাণহানি ঘটতো। তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়ে চীন সেখানে রপ্তানির জন্য শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলছে।’

Advertisement

তিনি আরও বলেন, ‘যুগে যুগে বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতির শিকার হচ্ছেন শরণার্থীরা। এ সমস্যা সমাধানে সবার আগে পরাশক্তি দেশগুলোকে মানবিক মূল্যবোধ ধারণ করে কাজ করতে হবে। যুদ্ধ-বিগ্রহ বন্ধের মাধ্যমে আধিপত্য বিস্তারের প্রচেষ্টা পরিহার করতে হবে। এছাড়া স্থানীয়ভাবে শরণার্থীদের সাহায্য-সহযোগিতা করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সম্মিলিতভাবে এ সমস্যার সমাধানে কাজ করতে হবে।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএসসিএসএস’র সভাপতি ডা. সারওয়ার আলী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম। আলোচনায় অংশ নেন সাবেক সচিব ড. মিহির কান্তি মজুমদার। বিএসসিএসএস’র কোষাধ্যক্ষ অনুপম রায়ও এতে বক্তব্য রাখেন।

মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বৃহৎ শরণার্থী ব্যবস্থাপনা ও প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রে অনেক সফল উদাহরণ থাকলেও ২০১৭ সালে বাংলাদেশের ঘাড়ে চেপে বসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তন নিয়ে কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। মানবেতর জীবনযাপন করলেও মিয়ানমার সরকার তাদের সম্মানের সঙ্গে নিজ ভূমিতে ফিরে যেতে কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বিশ্ব সম্প্রদায় বিশেষ করে বৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্রসমূহ অনেকটা নীরব।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী ৬৮ মিলিয়ন শরণার্থী রয়েছে। তাদের মধ্যে এক মিলিয়ন আমাদের নিজস্ব উঠানে বসবাস করছে। বছরের পর বছর পার হলেও অনেক ক্ষেত্রে তারা মানবেতর জীবন অতিবাহিত করছে। বিশ্বে আজ ১৪০ জনের একজন শরণার্থী হিসেবে জীবনযাপন করেছে। রোহিঙ্গারা রাখাইনে নিজ ভূমিতে প্রত্যাবর্তন করলেই এ সমস্যার একটা টেকসই সমাধান হবে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, মুসলিম দেশ ও ইউরোপভিত্তিক কিছু দেশ বলছে, রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারের মানুষের সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। যাতে চলাচল ও কাজের সুযোগ পায়। এটা কখনোই সম্ভব না। বরং নতুন ধরণের সংঘাত তৈরি করবে।’

Advertisement

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতের ভূমিকার কথা তুলে ধরে বাংলাদেশ সোসাইটি ফর কালাচারাল অ্যান্ড সোশ্যাল স্টাডিজের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘১৯৭১ সালে প্রায় এক কোটি শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। তখন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো মুখে দরদ দেখিয়ে কোনো সাহায্য করেনি। ভারত একটা দরিদ্র রাষ্ট্র হিসেবে তখনকার সময়ে নানা সমস্যার পরেও বাংলাদেশি শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে তাদের অর্থনীতি ও অখণ্ডতা হুমকির মুখে পড়েছিল। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারও প্রচণ্ড চাপে পড়ে গিয়েছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক শরণার্থী দিবসটি নিয়ে আমাদের এখানে খুব একটা আলোচনা হয় না। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী- বর্তমানে প্রায় ৯ কোটি মানুষ শরণার্থী হিসেবে আছে। বাংলাদেশ নিজেও ১২ লাখের মতো শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। শরণার্থী সমস্যাকে মানিবক সমস্যা বলা হলেও এর সঙ্গে রাজনীতি জড়িত। রাজনীতি-নির্ভর এসব মানবিক সমস্যায় মানবিকতার চাইতেও রাজনীতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সেই রাজনীতি সমস্যাকে সমাধানের অযোগ্য করে তোলে।’

এএএইচ/এএসএম