ঈদুল আজহার আগে ২২ জুন থেকে চিনির দাম কেজিতে সর্বোচ্চ ২৫ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে চিনি কল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন। প্রস্তাবটির খবর গতকাল (সোমবার) এসেছে। তবে এক দিনের মধ্যেই আরও অস্থির হয়ে উঠছে চিনির বাজার। খুচরায় চিনি আরও বাড়তি দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
Advertisement
বর্তমানে সরকারিভাবে খুচরায় প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনি ১২৫ টাকা ও খোলা চিনির দাম ১২০ টাকা বেঁধে দেওয়া রয়েছে। কিন্তু সরকার নির্ধারিত এ দামে বাজারে চিনি পাওয়া যায় না। এক কেজি খোলা চিনির জন্য ভোক্তাকে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা গুনতে হয়েছে এতদিন। প্যাকেটজাত চিনির সরবরাহ নেই বললেই চলে। কালেভদ্রে দু-এক প্যাকেট মিললেও গুনতে হয় ১৪০ টাকা বা তারও বেশি।
এদিকে চিনির দাম বাড়ানোর নতুন প্রস্তাবের একদিন পর মঙ্গলবার খিলগাঁও তালতলা, রামপুরা ও বাড্ডা বাজারে আরও চিনির দাম বাড়তে দেখা গেছে। রামপুরা কাঁচাবাজারের গলিতে প্রায় ৭-৮টি মুদি দোকান রয়েছে। সেখানে সবগুলোতেই চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়, যা একদিন আগেও ১৩৫ টাকার মধ্যে ছিল।
একই অবস্থা অন্য দুই বাজারের দোকানেও। এর মধ্যে খুব কম সংখ্যক দোকানে আগের দামে চিনি বিক্রি হতে দেখা গেছে।
Advertisement
তালতলা বাজারে মুদি দোকানি এহসান বলেন, চিনির দাম বাড়ার প্রস্তাবের পর থেকে পাইকারি বাজারে চিনির দাম বস্তাপ্রতি একশ টাকা বেড়েছে। সে কারণে সবাই দাম কিছুটা বাড়িয়ে বিক্রি করছে।
আরও পড়ুন>>> চিনির দাম কেজিতে ২৫ টাকা বাড়াতে মিলমালিকদের চিঠি
জানা গেছে, সোমবার মিল মালিকদের সংগঠনটি বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে (বিটিটিসি) চিঠি দিয়ে দাম বাড়ানোর এ কথা জানায়। এর আগে চিনির দাম বাড়ানোর প্রস্তাবও দিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে মঙ্গলবার একটি বৈঠকও রয়েছে বিটিটিসিতে। এরপর এ প্রস্তাব কার্যকর হবে কি না সে বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত জানানোর কথা। তবে সে ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত আসার আগে মিল মালিকরা মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দিলেন। যার প্রভাব এরই মধ্যে বাজারে পড়েছে।
ওই প্রস্তাবে কেজিপ্রতি প্যাকেটজাত চিনির দাম ১৫০ টাকা ও খোলা চিনি ১৪০ টাকা করার কথা বলা হয়েছে, যা আগামী বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকরের কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবটিতে। এখন সরকারিভাবে খুচরায় প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনি ১২৫ টাকা ও খোলা চিনির দাম ১২০ টাকা বেঁধে দেওয়া আছে।
Advertisement
কিন্তু এর আগেই কেন বাজারে দাম বাড়ছে এমন প্রশ্নের জবাবে রামপুরা বাজারে খুচরা চিনি বিক্রেতা বরিশাল স্টোরের খাদেমুল হাসান বলেন, ‘দাম বাড়ার খবর এলেই সেটা বেড়ে যায়। এ দেশে নির্ধারিত সময়ের পরেই যে বাড়বে এমন রেওয়াজ নেই। কারণ দাম বাড়বে সেটা কোম্পানির প্রতিনিধিরা অনেক আগেই জানিয়ে দেয়। এর পরপরই বাজারে সংকট তৈরি হয়। বাড়তি দামে কিনতে হয়।’
যদিও পাইকারি পর্যায়ে ভোগ্যপণ্য বিক্রেতাদের সংগঠন মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও চিনি ব্যবসায়ী গোলাম মাওলা জাগো নিউজকে বলেন, প্রস্তাব চূড়ান্ত হয়নি এখনো। সে কারণে মৌলভীবাজার ও বেগমবাজারে চিনির দাম বাড়েনি। বরং আগের প্রচুর চিনি মজুত রয়েছে। সেগুলো তিন-চারদিন একই দামে কেনা-বেচা হচ্ছে।
খুচরা বাজারে মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে এ ব্যবসায়ী বলেন, খুচরা বিক্রিতারা এখন নিজ নিজ বাজারে সিন্ডিকেট করে। তারা মূল্যবৃদ্ধির অজুহাত খোঁজে। কোনোকিছুর দাম বাড়ার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়িয়ে বিক্রি শুরু করে। কিন্তু কমলে, কমায় না।
আরও পড়ুন>>> তেলের দাম কমিয়েছে টিসিবি, বিক্রি শুরু মঙ্গলবার
এতদিন সরকার চিনির দর বেঁধে দিলেও খুচরা ব্যবসায়ী থেকে আমদানিকারক কেউই তা মানেননি। সরকারি নির্দেশনা ‘বুড়ো আঙুল’ দেখিয়ে কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেশি নিয়ে বিক্রি করে আসছিল। এখন মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের সঙ্গে সঙ্গে তা কার্যকর করতে শুরু হয়েছে বাজারে।
মূল্যবৃদ্ধির ব্যাপারে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব গোলাম রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক শীর্ষ কোম্পানির কর্মকর্তা বলেন, বিশ্ববাজারে চিনির দাম বেড়েছে। কিন্তু সরকার বর্ধিত দাম মেনে নিচ্ছে না। এর আগের কয়েক দফায় সরকারের সঙ্গে বসে দাম ঠিক করলেও মিল মালিকরা তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তখন অনেকটা বাধ্য হয়ে দাম মেনে নেন ব্যবসায়ীরা। সে কারণে কয়েক মাস বাদেই আবারো দাম সমন্বয় করতে হচ্ছে।
অন্যদিকে চিনির দাম না বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব। মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়।
ক্যাব জানায়, চিনিকল মালিকদের এ সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক ভোক্তা স্বার্থবিরোধী ও অন্যায় বলে মনে করে ক্যাব। এমন সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানায় সংগঠনটি। মিল মালিকদের এ ভোক্তা স্বার্থপরিপন্থি সিদ্ধান্ত কার্যকর না করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানায় ক্যাব।
এদিকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত বছর এ সময় প্রতি কেজি চিনি ৮০ থেকে ৮৪ টাকা ছিল। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে দেশে চিনির দাম প্রায় দ্বিগুণ হতে চলেছে, যা অস্বাভাবিক।
অন্যদিকে বিটিটিসির তথ্য বলছে, গত এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম বেড়েছে ২১ দশমিক ৯৬ শতাংশ। ২০২২ সালের ৮ জুন আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম ছিল ৫৫১ দশমিক ৯৫ মার্কিন ডলার। ২০২৩ সালের ৮ জুন তা বেড়ে হয় ৬৭৩ দশমিক ১৫ ডলারে।
এনএইচ/এমআইএইচএস/এমএস