তামিমের এই সেঞ্চুরিকে কী বিশেষণে বিশেষায়িত করা যায়! প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান যার ব্যাট তিন ফরম্যাটেই- ওয়ানডে, টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি, সেঞ্চুরির দেখা পেলো। শুধু সেঞ্চুরিই নয়, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তামিম এখন তিন ফরম্যাটেই সর্বাধিক রান সংগ্রাহক।তিনটা ম্যাচ বাদ দিলে, বিশ্বকাপের আগে টি-টোয়েন্টিতে তামিমের স্ট্রাইক রেটটা ঠিক তার সঙ্গে যাচ্ছিল না। টি-টোয়েন্টিতে স্ট্রাইক রেট ১০৭, এটা সে যে মানের ক্রিকেটার, সে মানের সঙ্গে কোনোভাবেই খাপ খাচ্ছিলো না। আগেও বলেছিলাম, বিশ্বকাপে ভালো করতে হলে আমাদের তামিম-সাকিব-মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ-মাশরাফি- যারা অভিজ্ঞ, অনেকদিন ধরেই দলের সঙ্গে রয়েছে, তাদের পারফরম্যান্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ।আর বিশ্বকাপ শুরুর আগেই বলেছি, ব্যাটসম্যানদের স্ট্রাইকরেটটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই ফরম্যাটে তামিমের স্ট্রাইক রেট হওয়া উচিৎ ১৩০, ১৪০ প্লাস। তার মতো ব্যাটসম্যানের এমন স্ট্রাইক রেট না থাকলে মানায় না। বিশ্বকাপ শুরুর সময়ও আমি বলেছিলাম, তামিমের স্ট্রাইক রেট বাড়ানো উচিৎ। এখন যেভাবে খেলছে, তাকে ঠিক এই রূপেই বেশি মানায়।আর বাংলাদেশ দলে আমি বলবো, তামিম অন্যদের চেয়ে একটু আলাদা। এ কারণে যে, সে যদি উইকেটে সেট হয়ে যেতে পারে, তাহলে লম্বা ইনিংস খেলে। ৮০-৯০ এ ধরনের স্কোর করে। এটা আমাদের জন্য একটা ইতিবাচক দিক। লম্বা ইনিংস যখন খেলে তখন তার স্ট্রাইক রেটটাও হাই থাকে। ১৪০, ১৫০- এ ধরনের।সবচেয়ে বড় কথা তামিম গত তিনটা ম্যাচেই চমৎকার খেললো। প্রথম ম্যাচেও একাই বলতে গেলে জিতিয়েছে বাংলাদেশকে। দ্বিতীয় ম্যাচেও দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছে। এক কথায়, খুবই চমৎকার ব্যটিং। আশা করবো তামিমের এমন ব্যাটিংয়ের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে পুরো টুর্নামেন্টেই।শুধু তামিমই নয়, পুরো দল যে প্ল্যান নিয়ে গত তিনটি ম্যাচে খেলেছে, সে প্ল্যান যেন বিশ্বকাপের মূল পর্বেও ধরে রাখে। আজ যেমন শুরুটা বাংলাদেশ একটু ‘স্লো’ই করেছিল। কারণ বৃষ্টি হওয়ার কারণে উইকেট আর্দ্র ছিল। এ কারণে বোলাররা সুবিধা পেয়েছে শুরুতে। প্রথম ৬ ওভার তো ওরা খুবই ভালো বল করেছে।এ সময় রান কম উঠলেও যেটা দেখলাম তামিম ঠিকই খেলতেছিল। সৌম্য সরকার কেমন যেন সেট হতে পারছিল না। কিন্তু তামিমকে প্রথম ওভার থেকেই মনে হচ্ছিলো- এটা তার দিন। যদিও প্রথম ওভারের ৫ বল থেকে মাত্র ১ রান নিয়েছিল; কিন্তু এরপরই নিজের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে শুরু করে সে।এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে বিশ্বকাপের মূল পর্বে আশা করি ভালো খেলতে পারবে বাংলাদেশ। গত দুটা বছর বাংলাদেশের বোলিং এবং ফিল্ডিং অসাধারণ। বিশ্বমানে পৌঁছে গেছে। বাংলাদেশের যতো সাফল্য এর পেছনে বোলারদের অবদানই সবচেয়ে বেশি। ফিল্ডিংও ভালো হচ্ছে বাংলাদেশের।দুশ্চিন্তা ছিল শুধু ব্যাটিং নিয়ে। এই অংশেও আমরা ভালো করছি (ওয়ানডে-টেস্ট)। তবুও টি-টোয়েন্টিতে যেন একটু ঘাটতি ছিল আমাদের। ঠিক টি-টোয়েন্টি মানের ব্যাটিং হচ্ছিলো না। হাই-স্ট্রাইক রেট নিয়ে খেলা যাচ্ছিলো না। তবে বিশ্বকাপে এসে তামিম অন্তত বুঝে ফেলছে কিভাবে টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটিং করতে হয়। সাব্বিরও ভালো খেলছে, মাহমুদুল্লাহরা ভালো খেলছে। সাকিবও ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছে। ৯ বলে ১৭ রান করেছে সে।বিদেশি ধারাভাষ্যকাররা বলছেন বাংলাদেশ এবার চমকে দেবে বিশ্বকাপে। আসলে সত্যি সত্যি কী চমকে দিতে পারবে বাংলাদেশ? আমার তো মনে হয় পারবে। কারণ, অভিজ্ঞার দিক দিয়ে বলুন আর বয়সে বলুন বাংলাদেশ দলের অনেক ক্রিকেটার যারা অনেকদিন ধরেই এক সঙ্গে খেলতেছে। তাদের এই অভিজ্ঞতা বিশ্বকাপে কাজে লাগাতে পারলে সেমিফাইনালে ওঠা তো কোনো ব্যাপার না।অন্য দলগুলোতে দেখবেন, অধিকাংশ ক্রিকেটারই তরুণ। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কিন্তু সবার চেয়ে এগিয়ে। টি-টোয়েন্টিতে পারফরম্যান্স হয়তো এতোটা ভালো হয়নি; কিন্তু আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে সমানই। বরং, এগিয়েও থাকবে কারও কারও চেয়ে। আর এভাবে যদি আমরা খেলতে থাকি, তাহলে সেমিফাইনাল খেলাটা অসম্ভব কিছু হবে না।তবে চিন্তার একটি বিষয়ও সরিয়ে রাখা যাচ্ছে না। সেটা হলা কন্ডিশনের চ্যালেঞ্জ। ঢাকা থেকে ধর্মশালায় গিয়ে সেখানকার একটা কন্ডিশনের সঙ্গে ইতিমধ্যে মানিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু সেখান থেকে আবার চলে আসতে হবে কলকাতায়। খুব ঠাণ্ডা থেকে গরমে। এটা বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের জন্য চিন্তার বিষয়।লেখক: বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়কআইএইচএস/বিএ
Advertisement