দেশজুড়ে

নাদিম হত্যা মামলায় বকশীগঞ্জ থানার ওসির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

জামালপুরের বকশীগঞ্জে সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যা মামলার সব আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহতের সহকর্মীরা।

Advertisement

এ ঘটনায় বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাকেও মামলায় সম্পৃক্ত করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

আরও পড়ুন: সাংবাদিক নাদিম হত্যায় চেয়ারম্যান বাবু ৫ দিনের রিমান্ডে

সোমবার (১৯ জুন) দুপুরে জামালপুর প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক নাদিম স্মরণে শোকসভা ও দোয়া মাহফিলে এ দাবি করেন সাংবাদিক নেতারা।

Advertisement

জামালপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাফিজ রায়হান সাদার সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় বিক্ষুব্ধ সাংবাদিকদের বক্তব্যে শোকসভাটি প্রতিবাদ সভায় পরিণত হয়।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক জামালপুর প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান বলেন, ‘রাজাকার পরিবারের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় গত ১১ এপ্রিল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহীনা বেগমের ইন্ধনে তার সন্ত্রাসী বাহিনী সাংবাদিক নাদিমের ওপর হামলা করেছিল। এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ এবং ভিডিওবার্তায় নিরাপত্তাহীনতার কথা বললেও ওসি সোহেল রানা সেসময় কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। গত ১৪ জুন ফের তিনি বাবু চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী হামলার শিকার হলে ঘটনাটি “চোখে সামান্য আঘাত লেগেছে” বলে ওসি মন্তব্য করেন এবং নাদিম নিহত হওয়ার পরও ওসির ভূমিকা রহস্যজনক।’

চ্যানেল ২৪ ও দৈনিক সমকালের স্টাফ রিপোর্টার আনোয়ার হোসেন মিন্টু বলেন, ‘নাদিম হত্যাকাণ্ডে এ পর্যন্ত ১৩ জন গ্রেফতার হলেও এজাহারভুক্ত আসামি গ্রেফতার হয়েছে মাত্র পাঁচজন। এরমধ্যে প্রধান আসামি বাবু চেয়ারম্যানসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। সাংবাদিক নাদিম হত্যাকাণ্ডে পুলিশের অভিযান ব্যর্থ।’

আরও পড়ুন: ‘নাদিমের মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করেন চেয়ারম্যানপুত্র রিফাত’

Advertisement

জামালপুর প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘সাংবাদিক নাদিমের হত্যাকারী বাবু চেয়ারম্যানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক তার চাচাতো ভাই সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেছুর রহমান পান্না এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহীনা বেগমের ইন্ধন থাকলে তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে।’

এ ঘটনায় ওসির ভূমিকা ‘রহস্যজনক’ দাবি করে তাকেই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা করায় সাংবাদিক নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তদন্ত কর্মকর্তা থেকে ওসিকে প্রত্যাহারসহ তাকেও হত্যা মামলায় আসামি করার দাবি জানান তারা। এসময় রাষ্ট্রকে নিহত সাংবাদিকের পরিবারের যাবতীয় দায়িত্ব গ্রহণ, সাংবাদিক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি করেন বক্তারা।

শোকসভায় সাংবাদিক নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম বলেন, আমি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করতে চাই। আমার স্বামী হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো সাংবাদিককে এভাবে প্রাণ দিতে না হয়।

আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চান সাংবাদিক নাদিমের স্ত্রী

এসময় জামালপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট শাহ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন, জামালপুর সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ৭১’র সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশীদ, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম খান সজিব, জামালপুর প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি অধ্যাপক মো. সুরুজ্জামান, কোষাধ্যক্ষ কাফি পারভেজ, দৈনিক সচেতন কণ্ঠের সম্পাদক বজলুর রহমান, জেলা জাসদের সভাপতি জুলফিকার মো. জাহিদ হাবিব, কালের কণ্ঠের প্রতিনিধি মোস্তফা মনজু, জামালপুর অনলাইন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শওকত জামান, সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া জাহাঙ্গীর প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সংবাদ প্রকাশের জেরে গত বুধবার (১৪ জুন) রাতে বকশীগঞ্জ বাজারের পাটহাটি এলাকায় বাবু চেয়ারম্যানের নির্দেশে হামলার শিকার হন বাংলা নিউজের জেলা প্রতিনিধি নাদিম। পরদিন বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে ৩টায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা যান তিনি।

এ ঘটনায় বাবু চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। পরে তার পাঁচদিনসহ গ্রেফতার অন্যদের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

মো. নাসিম উদ্দিন/এমআরআর/এমএস