ভুলে যাওয়া মানসিক দুর্বলতার একটি কারণ। কমবেশি সব মানুষের ক্ষেত্রেই তা হতে পারে। কিন্তু কোনো মানুষ যদি ভুলে কোনো ইবাদত ছেড়ে দেয় কিংবা ভুলে কোনো অন্যায় করে বসে তবে কি গুনাহ হবে? এ ক্ষেত্রে করণীয়ই বা কী?
Advertisement
ভুলে যাওয়া কোনো ফাসেকি কাজ নয় বরং এটি মানসিক রোগ। তাই কোনো মানুষ ভুলে যাওয়ার কারণে যদি কোনো গুনাহ করে ফেলে বা গুনাহ করার পর তা থেকে ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়টি ভুলে যায় আবার সময় মতো ইবাদত করার কথাও ভুলে যায় তবে মহান আল্লাহ তাআলা তাকে তার কৃত আমলের পরিণাম থেকে ক্ষমা করে দেবেন।
তবে কোনো ইবাদতের কথা ভুলে গেলে তা স্মরণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেরি না করে যথাযথ কাজ সম্পাদন করতে হবে। তা এমন-
> কেউ নামাজ পড়ার কথা ভুলে গেলে; তা মনে হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে (নিষিদ্ধ ওয়াক্ত ছাড়া) তা আদায় করে নেওয়া।
Advertisement
> কেউ ভুলে কোনো অন্যায়, হারাম বা পাপ কাজে নিয়োজিত থাকলে সঠিক কথা স্মরণে হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্যায়, হারাম বা নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
> যদি কোনো গুনাহ বা অন্যায় করার পর ক্ষমা প্রার্থনার আগেই ভুলে যায়; তবে স্মরণ আসার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।
মনে রাখতে হবে
অন্যায় তো অন্যায়ই। কেউ ভুলে করুক আর জেনে করুক; স্মরণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অবশ্যই ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। তওবা-ইসতেগয়ার করতে হবে। ক্ষমা প্রার্থনা না করলে অবশ্যই গুনাহগার হতে হবে।
Advertisement
স্মৃতিবিভ্রাট হলে ভিন্ন কথা
আল্লাহ তাআলা মানুষের ভুলে যাওয়ার কারণে সংঘটিত অন্যায়ের গুনাহ বান্দার আমলনামায় লেখেন না। সুতরাং ভুলে যাওয়ার কারণে ওই ব্যক্তি ফাসিক (পাপী) বলেও গণ্য হবে না। হাদিসে এসেছে-
১. হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
إنَّ اللَّهَ تَجَاوَزَ لِي عَنْ أُمَّتِي الْخَطَأَ وَالنِّسْيَانَ وَمَا اسْتُكْرِهُوا عَلَيْهِ
‘আমার উদ্দেশ্যে আল্লাহ আমার উম্মতের অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি ও ভুল ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং তার সে কাজ যা সে করতে সে বাধ্য হয়েছে।’ (ইবনে মাজাহ, বায়হাকি)
অর্থাৎ কেউ যদি ভুল বশত কিংবা স্মৃতি বিভ্রাটের কারণে কখনো কোনও অন্যায় করে ফেলে তাহলে তার স্মৃতি বিব্রাটকালীন সময়ের কোনো গুনাহ লেখা হবে না। তবে সে গুনাহ যদি চলতে থাকে; আর এ গুনাহের কাজের কথা কথা স্মরণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হারাম থেকে বিরত থাকতে হবে কিংবা ছুটে যাওয়া আমলটি বাস্তবায়ন করতে হবে।
২. হজরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল যে, এক ব্যক্তি নামাজের কথা ভুলে গেছে অথবা নামাজ না পড়েই ঘুমিয়ে পড়েছে। (তার করণীয় কী?) তিনি বললেন- يُصَلِّيهَا إِذَا ذَكَرَهَا
‘যখনই তার (নামাজের কথা) স্মরণে আসবে, তখনই সে ওই নামাজ পড়ে নেবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
৩. ভুলে কোনো অন্যায় হলে গেলে যে গুনাহ হয় না; এ হাদিসটিও একটি প্রমাণ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
مَنْ أَكَلَ نَاسِيًا وَهُوَ صَائِمٌ فَلْيُتِمَّ صَوْمَهُ فَإِنَّمَا أَطْعَمَهُ اللهُ وَسَقَاهُ
‘যে রোজাদার ব্যক্তি ভুলবশতঃ কিছু খায় সে যেন তার রোজা পূর্ণ করে (দিনের বাকি অংশ রোজা অব্যাহত রাখে)। কেননা আল্লাহ তাকে (ভুলে) পানাহার করিয়েছেন।’ (বুখারি)
সুতরাং ইচ্ছাকৃত না হয়ে শুধু ভুলের কারণে কোনো গুনাহ হয়ে গেলে কিংবা ভুলে নামাজ বা রোজার খেলাফ হলে তাতে গুনাহ হবে না। তবে ভুলে থাকা অবস্থায় অন্যায় হচ্ছে বলে মনে হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা থেকে ফিরে থাকা আবশ্যক। অন্যথায় গুনাহগার হতে হবে। যেমন-
ভুলে বা ঘুমে নামাজ পড়তে না পারলে সজাগ হওয়ার পর নামাজের কথা স্মরণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা আদায় করে নিতে হবে। অন্যথায় গুনাহ হবে। আবার রোজা থাকা অবস্থায় যদি কেউ খাবার খেয়ে ফেলে তবে স্মরণ হয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা থেকে বিরত থাকতে হবে। আর তা ইফতারের সময় পর্যন্ত। এ ভুলের কারণে সংঘটিত অন্যায় বা অপরাধে কোনো গুনাহ হবে না।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ভুলে গুনাহ হওয়ার কিংবা ইবাদত-বন্দেগির কথা ভুলে যাওয়া থেকে হেফাজত করুন। হাদিসের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। অযথা ভুলে গুনাহ হয়ে গেছে ভেবে দুঃশ্চিন্তা করা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এএসএম