ক্রিকেট মানেই তো তারুণের উচ্ছ্বাস। ক্রিকেট মানেই তো আবেগের ঘনঘটা। আর শাহবাগের ক্রিকেট! সে তো অন্যরকম আবেগের বহিঃপ্রকাশ। শাহবাগের বড় পর্দায় ক্রিকেট বলতেই যেন তারুণ্যের মিলনমেলা। যে মেলায় ক্রিকেট ভালোবাসার বন্ধনে সবাই যেন একাকার।রোববার সন্ধ্যার পর থেকেই দর্শকে দর্শকে ভরে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি-মোড় তথা শাহবাগ। বাংলাদেশের সঙ্গে ওমানের খেলা। তাতে কি? খেলা শুরুর পরপরই কানায় কানায় ভরে যায় শাহবাগ চত্বর। মনে হচ্ছিল শাহবাগ চত্বর-ই যেন ইন্ডিয়ার ধর্মশালার কোনো স্টেডিয়াম।সাধারণত ক্রিকেট খেলায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসিক হলের রুমগুলোয় তিল ধরার ঠাঁই থাকে না। ক্রিকেট উৎসবে মেতে ওঠে আবাসিক হলগুলোর শিক্ষার্থীরা। কয়েক বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর চিত্রও এর ব্যতিক্রম ছিল না। সময় পাল্টেছে। পাল্টেছে খেলা মুহূর্তের হলেরও চিত্রও। ক্রিকেট আনন্দ হলে বসে ভাগাভাগি করতে শিক্ষার্থীদের আর মন বসে না।ক্রিকেট খেলা শুরু হলেই শিক্ষার্থীরা যেন হল ছাড়া। খেলার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মোড় হয়ে ওঠে সকল শিক্ষার্থীদের নিশানা। কোনো ভেদাভেদ বা বয়সের ব্যবধানের বালাই থাকে না টিএসসি মোড়ের খেলার আড্ডায়। এখানে একে অপরের হাতে হাত রেখে ক্রিকেট বন্দনায় মশগুল। ক্রিকেট প্রেমে সবাই যেন সবার বন্ধু বনে যায়।শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই নয়, টিএসসি মোড়ের ক্রিকেট আনন্দ এখন সর্বসাধারণের। সাধারণ দর্শকের পাশাপাশি ঢাকা মেডিকেল কলেজ, বুয়েট এবং বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও এখানে যোগ দিতে দেখা যায়। মধ্য রাত পর্যন্ত খেলা দেখায় শরিক হন বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক হলগুলোর ছাত্রীরাও। এমনকি বন্ধুদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ, ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরাও টিএসসি মোড়ে ভিড় জমান।কয়েক বছর ধরে শাহবাগের টিএসসি মোড়, মিলন চত্বরে প্রজেক্টরের মাধ্যমে বড় পর্দায় খেলা দেখানো হয়। মাঝে মাঝে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনেও এমন আয়োজন করে খেলা দেখা চলে। সাধারণত বিশেষ কোনো সংগঠন বা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে এমন আয়োজন করা হলেও কখনও কখনও শিক্ষার্থীরা ব্যক্তি উদ্যোগেও এসব প্রজেক্টর সংযোজন করে থাকেন।আর তাতেই যেন শাহবাগের ক্রিকেট অন্যরকম পরিবেশ তৈরি করে চলেছে। কথা হয়, আবু তালহা শামীম নামের এক দর্শকের সঙ্গে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সাবেক ছাত্র। বর্তমানে হাতিরপুলে মেসে থাকেন। ক্রিকেট খেলা শুরু হলেই তার টিএসসি মোড়ে আসা চাই।শামীম বলছিলেন, ‘এমন আনন্দ তো ঘরে বসে পাওয়া ভার। টিএসসি মোড়ের ক্রিকেট খেলার আনন্দ হারাতে নেই। এখন সবাই অপরিচিত। তবুও খেলার মুহূর্তে সবার বন্ধু হয়ে যাই।’পাশেই ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের আবাসিক ছাত্রী খাদিজা সুলতানা। তিনি বলেন, ‘মেয়েদের হলে সান্ধ্য আইন আছে। তবে খেলার সময় আমরা সান্ধ্য আইনের ধার ধারি না। আর বাংলাদেশের খেলা হলে তো কথাই নেই। খেলা শেষ না করে কে ওঠে বলুন তো? এমন আনন্দ কি হলে মিলবে?কথা হয় ওয়ার্ল্ড বিশ্ববিদ্যলয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী লিমন শেখের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের খেলা হলে আমরা বন্ধুরা প্রায়ই এখানে আসি। আজও বাংলাদেশের খেলা দেখতে এখানে এসেছি। এখানে এসে খেলা দেখার মজাই আলাদা।’এএসএস/একে/বিএ
Advertisement