আলোচিত ‘জল্লাদ’ শাহজাহান মুক্তি পেয়েছেন। প্রায় ৩২ বছর কারাভোগের পর রোববার (১৮ জুন) বেলা ১১টা ৪৭ মিনিটে কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। মুক্তি পেয়ে তিনি বলেন, আমি অপরাধ করেছি, সেজন্য জেলে সাজা ভোগ করেছি। এখন আমি মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার মতো। আমি অতীতের সবকিছু ভুলে গেছি। এখন আমি আগামী দিনে কীভাবে চলবো, থাকবো সেটা হচ্ছে বিষয়।
Advertisement
এ সময় তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আমার বাড়ি, ঘর নেই। এত বছর জেল খাটার পর আমার কিছুই নেই। আমি এখন কারাগার থেকে বেরিয়ে নিজের বাড়িতেও যাচ্ছি না। আমি আরেকজনের বাড়িতে গিয়ে উঠছি এখন। আমি এখন কী করে খাবো? কোথায় যাবো? কি করবো? আমার এখন আর কিছু করার বয়স নেই।
আরও পড়ুন>>> মুক্তি পেলেন ২৬ জনের ফাঁসির দড়ি টানা ‘জল্লাদ’ শাহজাহান
জল্লাদ শাহজাহান আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার একটিই আবেদন, আমাকে যেনো বাড়ি-ঘর ও একটি কর্মসংস্থান দিয়ে চলার মতো কিছু করে দেন। এটিই প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন।
Advertisement
জল্লাদ শাহজাহানের পুরো নাম শাহজাহান ভূঁইয়া। তিনি নরসিংদী জেলার পলাশ থানার ইছাখালী গ্রামের প্রয়াত হাছেন আলীর ছেলে। ৭৩ বছর বয়সী শাহজাহান ব্যক্তিগত জীবনে অবিবাহিত। কারাগারে তার কয়েদি নম্বর ছিল ২৫৮৯/এ এবং মুক্তির আগ পর্যন্ত তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান জল্লাদ ছিলেন।
কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, শাহজাহান ভূইয়া ১৯৯১ সালে গ্রেফতার হন। তাকে মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে রাখা হয়। কারাগারে ভালো কাজ ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসির রায় কার্যকর করতে জল্লাদের দায়িত্ব পালনের জন্য তার সাজার মেয়াদ ১০ বছর মওকুফ (রেয়াত) করা হয়।
পাশাপাশি শাহজাহানের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় আবেদনের প্রেক্ষিতে কারা কর্তৃপক্ষ তার জরিমানার ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করে দিয়েছে। ফলে দীর্ঘ ৩১ বছর ছয়মাস দুইদিন কারাগারের চার দেয়ালের মধ্যে বন্দিজীবন কাটানোর পর এখন তিনি মুক্ত।
আরও পড়ুন>>> মুক্তির পর প্রধানমন্ত্রীর কাছে ঘর চাইলেন জল্লাদ শাহজাহান
Advertisement
কারাগারের তথ্যানুযায়ী, শাহজাহান ২০০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২৬ জনের ফাঁসির দড়ি টেনেছেন। যার মধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন ছয়জন। এছাড়া চারজন যুদ্ধাপরাধী, দুজন জেএমবি সদস্য ও অন্যান্য আলোচিত মামলার ১৪ আসামি।
টিটি/এমআইএইচএস/এমএস