ফিচার

তরুণদের আলোর দিশারী তানিম

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান

Advertisement

তিনি কুইন্স কমনওয়েলথ ট্রাস্টের একজন কমনওয়েলথ ইয়াং লিডার। তার নেতৃত্বে ইয়ুথ পার্লামেন্ট আন্তর্জাতিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পেয়েছেন ‘ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড’, ‘রানী এলিজাবেথের কমনওয়েলথ ইয়াং লিডার’, ‘ডিউক অব এডিনবার্গ পুরস্কার’, বাংলাদেশ স্কাউটস থেকে ‘ন্যাশনাল সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড’। মেধাবী এ তরুণের নাম সরকার তানভীর আহমেদ তানিম। জন্ম জয়পুরহাট, সেখানেই বেড়ে ওঠা। রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে অনার্স এবং মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন তিনি। এখন পিএইচডির পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা তার।

ছোটবেলা থেকেই তানিম পড়াশোনার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন। নাটক, আবৃত্তি, বিতর্ক, কারাতে চর্চায় বরাবরই ছিলেন সবার সেরা। ২০০৬ সালে আন্তর্জাতিক স্কাউটের সঙ্গে যুক্ত হন। তরুণদের সংসদীয় গণতন্ত্রচর্চা, সক্রিয় নাগরিকত্ব, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় অবদান রাখতে কাজ করছেন তিনি।

তরুণদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে, কাজের স্বীকৃতির মাধ্যমে অনুপ্রাণিত করতে প্রিন্সেস অব ওয়েলস ডায়ানার স্মৃতির প্রতি সম্মান জানাতে বিশ্বের উদীয়মান তরুণদের মাঝে বিশেষ স্বীকৃতিস্বরূপ প্রদান করা হয় ‘দ্য ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড’। আন্তর্জাতিক যুব পুরস্কারসমূহের মধ্যে একজন তরুণের কাছে এটি অন্যতম সম্মানসূচক অর্জন। তিনি ২০২১ সালে এ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে সারা ফাউন্ডেশন 

জাতীয় সংসদে তরুণদের প্রতিনিধিত্ব খুবই কম। তিনি চেয়েছেন প্রতীকীভাবে তরুণদের মধ্যে জাতীয় সংসদ চর্চার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সম্পন্ন প্রজন্ম গড়ে উঠুক। সে জন্য তিনি ইয়ুথ পার্লামেন্ট নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কাজ করে যাচ্ছেন। ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই জয়পুরহাট সুগার মিল থেকে ইয়ুথ পার্লামেন্টের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে সংগঠনটির সদস্যরা বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার ৮টি দেশ, ডি-এইটভুক্ত দেশসমূহ, ভারতসহ মোট ২৫টি দেশের তরুণ ও নারীদের সঙ্গে কাজ করছেন।

অপরদিকে কুইন্স কমনওয়েলথ ট্রাস্ট কমনওয়েলথভুক্ত ৫৪টি দেশের তরুণ নেতাদের একটি বৈশ্বিক পরিবার। তিনি এ পরিবারের একজন ইয়াং লিডার। কুইন্স কমনওয়েলথ ট্রাস্ট মূলত তরুণ কমনওয়েলথ ইয়াং লিডারদের তহবিল, ব্যবহারিক সরঞ্জাম, সহায়তা এবং প্রাণবন্ত নেটওয়ার্ক প্রদান করে। যা কৃষি ও খাদ্য, শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে পরিবর্তন করতে সহায়তা করে। বর্তমানে তানিম ওয়ান বাংলাদেশ, এশিয়ার নেটওয়ার্ক অব ইয়ুথ ভলেন্টিয়ারস ও বিশ্ব স্কাউটসের সঙ্গে যুক্ত আছেন।

এর আগে তিনি ওয়ার্ল্ড হিউম্যানিটি কমিশনের সঙ্গে পরিচালক হিসেবে যুক্ত ছিলেন। ব্যক্তিগত অর্জনের চেয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পছন্দ করেন। সম্প্রতি জাতিসংঘের ECOSOC পার্টনারশিপ ফোরামের অধিবেশনে অংশগ্রহণ করেছেন। ২০২১ সালে OHCHR জেনেভা অধিবেশনে অংশ নেওয়ার জন্য জাতিসংঘ থেকে অফিসিয়াল পাস পেয়েছিলেন। শুধু তা-ই নয়, ৩য় ও ৪র্থ আন্তর্জাতিক যুব সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী, জাতিসংঘের ৭৩তম অধিবেশনের সাবেক সভাপতি ও কর্মকর্তাদের ২৪ জনের একজন হিসেবে বক্তব্য দিয়ে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: দক্ষিণে আলো ছড়াচ্ছে উপকূল পাঠাগার 

তরুণরা যেন সংসদীয় কার্যক্রমে আগ্রহী হন, সে জন্য তিনি ২৪ জন তরুণ নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ পরিদর্শন করেন। তিনি ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ৪ জন তরুণ প্রতিনিধি নিয়ে দেখা করেন। ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূতকে তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করেন।

নিজের কর্মকাণ্ড ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তানিম বলেন, ‘পুরস্কার বা আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করা মানে অর্জন নয় বরং আমাকে বাংলাদেশের প্রতি আরও দায়বদ্ধ করেছে। গরিব, অসহায়, দুস্থদের জন্য আমার খুব মায়া হয়। সামর্থ অনুযায়ী তাদের সহায়তা করার চেষ্টা করছি।’

তানিমের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ইয়ুথ পার্লামেন্ট থেকে প্রতি বছর শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়। ২০১৫ সাল থেকে দুস্থদের মাঝে বস্ত্র, ঈদে খাদ্যসামগ্রী এবং এতিম শিশুদের শিক্ষাসামগ্রী বিতরণের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। তানিম বলেন, ‘আমার স্বপ্ন একদিন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের অধিবেশন কক্ষেও ইয়ুথ পার্লামেন্ট চর্চা হবে। জাতীয় সংসদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হিসেবে তরুণদের প্রাধান্য দেওয়া হবে।’

লেখক: প্রকৃতিপ্রেমী ও ফিচার লেখক।

এসইউ/জিকেএস