কাল পরীক্ষা। ১০ টায় ক্যাম্পাসে পৌঁছাতে হবে। মুঠোফোনে অ্যালার্ম সেট করলাম ৭টায়। পরীক্ষায় যেন দেরি না হয় তাই তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম। সকাল হতেই অ্যালার্মের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। ফোন হাতে নিয়ে ক্যাম্পাস গ্রুপে ঢুঁ মেরে আসলাম। পরীক্ষায় ফোন আনা নিষেধ হলেও, অনেকেই দেখছি ফোন নিয়ে আসার কথা বলছে। কারও বাড়ি দূরে তো কারও চাকরির স্বার্থে ফোন রাখা জরুরি। আমার বন্ধু আজাদও ফোন সঙ্গে আনছে। আমরা দুজনেই একটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী।
Advertisement
সকাল ৮টায় ক্যাম্পাসে পৌঁছালাম। এদিকে আরেক বন্ধু সজিবকে মেসেঞ্জারে ফোন করে দ্রুত আসার তাগাদা দিলাম। একটু পর সবাই ক্যাম্পাস মাঠে গোল হয়ে বসলাম। সবার হাতেই স্মার্টফোন। অথচ কেউ কারও সঙ্গে কথা বলছে না। কেউ ব্যস্ত ইনস্টাগ্রাম, কেউ টিকটক কেউবা আবার ফেসবুকে। দুইজনতো রীতিমতো ইয়ারবাডে গান শুনছে।
আরও পড়ুন: ডিজিটাল অগ্রগতির ১৪ বছর, স্বপ্ন এখন স্মার্ট বাংলাদেশের
এভাবেই স্মার্টফোনে দীর্ঘ সময় কাটছে প্রতিদিন। শুধু শিক্ষার্থী নয়, প্রয়োজনের বাইরে সময় পার করছেন অধিকাংশ তরুণ-তরুণী। নিঃসঙ্গতা, অবসাদ, বেকার সময় স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। বাস্তবিক বন্ধুদের থেকে ভার্চ্যুয়াল বন্ধুত্বে আসক্তি বাড়ছে। বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা। অতিরিক্ত ফোন চালিয়ে ক্ষতি হচ্ছে চোখের, মস্তিষ্কে পড়ছে প্রভাব।
Advertisement
অথচ আমাদের বাবা-মায়ের সময় স্মার্টফোনের ছিটে ফোঁটা ছিল না। তাদের সময়ে আড্ডা মানেই ছিল একসঙ্গে বসে গল্প করা। ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টনের মতো শারীরিক কসরতের খেলাধুলা করা। এতে যেমন বন্ধু-বান্ধব বৃদ্ধি পেত, তেমনি মন ও শরীর থাকতো সতেজ।
গুরুত্বপূর্ণ কোন খবর জানতে হলে ভিড় লেগে থাকতো পত্রিকায়। ইতিহাস সম্পর্কে জানতে করতেন লাইব্রেরিতে। এখন পত্রিকা, লাইব্রেরি চলে এসেছে স্মার্টফোনে। গুগল করেই পাওয়া যাচ্ছে সব। এতে কমছে বই ও পত্রিকা পড়ার প্রবণতা। মেধার বিকাশে হচ্ছে বাধার সৃষ্টি।
এতো সমস্যা থাকার পরও স্মার্টফোন জীবনের অংশ হয়ে ওঠেছে। অতিরিক্ত রাত জাগার কারণের মধ্যে অন্যতম একটি স্মার্টফোন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় যাচ্ছে, টের পাচ্ছে না কেউ। অনেকে তো আবার রাতের বদলে ঘুমাতে যাচ্ছে ভোররাতে। পরিবারের বন্ধনেও পড়েছে প্রভাব। স্মার্টফোন দৌরাত্ম্যে ভুলে যাচ্ছে খাবারের সময়। সবাই একসঙ্গে বসে খাবারের যেই রুটিন সেটি এখন প্রায় বিলুপ্ত। একে অপরের সঙ্গে আন্তরিকতা কমছে, বাড়ছে দূরত্ব। সামাজিক বন্ধন নেই বললেই চলে। বাড়ছে পরিবেশের অশান্তি। আগের মতো মা-বাবাকে প্রাণ খুলে বলতে পারছে না কিছু।
আরও পড়ুন: ভিডিওতে কত ভিউ হলে ইউটিউবে আয় করা যায়?
Advertisement
স্মার্টফোন হয়ে ওঠেছে গলার কাঁটা। না পারছেন কেউ গিলতে, না পারছেন কেউ ফেলতে। তবে স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। নাহলে নতুন প্রজন্ম হয়ে ওঠবে মেধাশূন্য। বই জ্ঞানের পরিধি বাড়ায়। অথচ স্মার্টফোন বই কম পড়ার জন্য প্রধানত দায়ী।
তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ওঠার আগে স্মার্টফোন নয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাড়াতে হবে সামাজিক সংগঠন। যেন শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন গুণে গুণান্বিত হয়ে ওঠে। উদ্যোগ নিতে হবে বিভিন্ন খেলাধুলার। পড়াশোনাকে করে তুলতে হবে মজাদার। সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানের আয়োজন করা, খেলার মাঠ বৃদ্ধি, চিত্তবিনোদনের বিকল্প ব্যবস্থা করা ইত্যাদি পারে তরুণ প্রজন্মকে স্মার্টফোনের হাত থেকে মুক্তি দিতে। তাহলেই বাড়বে সামজিকতা, পারিবারিক বন্ধন। মিলবে রোগ ও অবসাদ থেকে মুক্তি।
কেএসকে/জিকেএস