দেশজুড়ে

‘নাদিমের মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করেন চেয়ারম্যানপুত্র রিফাত’

‘সাংবাদিক গোলাম রাব্বানি নাদিমের মৃত্যু নিশ্চিত করতে টেনে-হিঁচড়ে এক অন্ধকার গলিতে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ইট দিয়ে নাদিমের মাথায় সজোরে আঘাত করেন ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদ আলম বাবুর ছেলে ফাহিম ফয়সাল রিফাত। এ সময় দেওয়ালের পেছনে দাঁড়িয়ে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন চেয়ারম্যান নিজেই।’

Advertisement

শুক্রবার (১৬ জুন) নাদিমের দাফন শেষে এমন অভিযোগ করেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সাংবাদিক মুজাহিদ বাবু। একই অভিযোগ করেছেন নিহত সাংবাদিক নাদিমের ছেলে আব্দুল্লাহ ও মেয়ে জান্নাত।

আরও পড়ুন: ‘আমার পোলাডারে বাবু চেয়ারম্যান মাইরা ফালাইছে’

প্রত্যক্ষদর্শী সহকর্মী আল মুজাহিদ বাবু বলেন, ‘বুধবার (১৪ জুন) রাত ১০টায় কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলাম আমি আর নাদিম। পাটহাটি এলাকায় পৌঁছালে সামনে থেকে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে ফেলে দেওয়া হয় নাদিমকে। ১০-১২ জন সন্ত্রাসী সড়ক থেকে তাকে মারতে মারতে টেনে-হিঁচড়ে এক অন্ধকার গলিতে নিয়ে যায়। সেখানে এলোপাতাড়ি আঘাত করা হয় তাকে। তাদের আটকাতে গেলে আমাকেও হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। লুঙ্গি পরিহিত এক ছেলে এক পর্যায়ে আমাকে মারধরও করেন। পরে ভয়ে কিছু করতে পারিনি।’

Advertisement

মুজাহিদ আরও বলেন, ‘যে গলিতে নাদিমকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেখানে ছোট একটি ইটের দেওয়াল ছিল। ইটের দেওয়ালের পেছনে চেয়ারম্যান মাহমুদ আলম বাবু দাঁড়িয়েছিলেন। আর তার ছেলে রিফাত সেই ইটের দেওয়াল লাথি দিয়ে ভেঙে একটি ইট হাতে নেন। সেই ইট দিয়ে নাদিমের মাথায় সজোরে আঘাত করেন। পরে নাদিম অচেতন হয়ে পড়লে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।’

আরও পড়ুন: দাদা-দাদির কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত সাংবাদিক নাদিম

কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিহত সাংবাদিকের মেয়ে জান্নাত বলেন, ‘আমার বাবা কখনো সত্য প্রকাশ করতে ভয় পেতেন না। সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র এর আগেও মারধরের শিকার হয়েছেন তিনি। সম্প্রতি সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু বাবার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। মামলাটি খারিজ হওয়ার পর চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে পরিকল্পিতভাবে বাবাকে হত্যা করেন। এ ঘটনায় তার ছেলে রিফাত সরাসরি অংশ নেন।’

এদিকে ঘটনার ৪২ ঘণ্টা পেরিয়ে গলেও এ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী গ্রেফতার না হওয়ায় স্থানীয় প্রশাসনের অজ্ঞতাকে দায়ী করছেন নিহতের পরিবার-পরিজনসহ স্থানীয়রা।

Advertisement

অভিযোগ প্রসঙ্গে বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোহেল রানা জাগো নিউজকে বলেন, ভিডিও ফুটেজে দেখে ছয়জনকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় যে বা যারাই জড়িত থাকুক তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

চেয়ারম্যান কিংবা চেয়ারম্যানপুত্রকে গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে তারা জড়িত থাকলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।

সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র করে সাংবাদিক গোলাম রাব্বানি নাদিম বুধবার রাত ১০টার দিকে বকশীগঞ্জ বাজারের পাটহাটি এলাকায় সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল আলম বাবুর সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলার শিকার হন।

বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে ৩টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ময়নাতদন্ত শেষে রাত ১০টায় তার মরদেহ পৌর শহরের বাসায় আসে। শুক্রবার সকাল ১০টায় বকশীগঞ্জ নুর মুহাম্মদ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে প্রথম জানাজা ও গুমেরচর জিগাতলা ঈদগাহ মাঠে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গ্রামের বাড়ি নিলাক্ষিয়া ইউনিয়নে গুমেরচরে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।

মো. নাসিম উদ্দিন/এসজে/এএসএম