আষাঢ় মাসে কোন ফসলের যত্ন কীভাবে নিতে হবে সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে কৃষি তথ্য সার্ভিস। পরামর্শগুলো নিচে তুলে ধরা হলো-
Advertisement
বোরো ধান
জমির ধান শতকরা ৮০ ভাগ পেকে গেলে রিপার/কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে কম খরচে স্বল্প সময়ে ধান সংগ্রহ করুন। কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৪ বিঘা জমির ধান কাটা ও মাড়াই করা যায়। রিপার দিয়ে সংগৃহীত ধান পাওয়ার প্রেসার দিয়ে মাড়াই করুন। এতে সময় ও খরচ বাঁচবে।
আউশ ধান
Advertisement
চারার বয়স ১২-১৫ দিন হলে ইউরিয়া সারের প্রথম কিস্তি হিসেবে একর প্রতি ১৮ কেজি ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করুন। এর ১৫ দিন পর একই মাত্রায় দ্বিতীয় কিস্তি উপরি প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া সারের কার্যকারিতা বাড়াতে জমিতে সার প্রয়োগের সময় ছিপছিপে পানি রাখাসহ জমি আগাছা মুক্ত রাখুন।
আমন ধান
এ মাসের মধ্যেই রোপা আমনের জন্য বীজতলা তৈরি করুন এবং বন্যার সময়ে চারা নষ্ট হয় বিধায় অধিক পরিমাণ চারা উৎপাদন করুন। জলমগ্ন এলাকার জন্য ব্রি ধান৫১, ব্রি ধান৫২, ব্রি ধান৭৯, খরা প্রবণ এলাকার জন্য ব্রি ধান৫৬. ব্রি ধান৭১: স্বল্পমেয়াদি হিসেবে ব্রি ধান৫৭, ব্রি ধান৭১, ব্রি ধান৭৫, ব্রি ধান৮৭, ব্রি ধান৯৫, ব্রি ধান১০৩, বিনা ধান ১৭ এবং বিনা ধান২২, জিংক সমৃদ্ধ ধানের জন্য ব্রি ধান৬২, ব্রি ধান৭২ এছাড়া অধিক ফলনের জন্য ব্রি হাইব্রিড ধান৪, ব্রি হাইব্রিড ধান৬ আবাদ করুন।
আরও পড়ুন: লোডশেডিং ও তাপপ্রবাহে কৃষিতে আশঙ্কা!
Advertisement
খরাপ্রবণ এলাকায় রোপা আমন ধানক্ষেতে মিনি পুকুর খনন করে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিন। জ্যৈষ্ঠ মাসে আউশ ও বোনা আমনের জমিতে পামরী পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। আক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে হাতজাল, গামছা, লুঙ্গি, মশারি দিয়ে পামরী পোকা ধরে মেরে ফেলুন। এছাড়া আক্রান্ত গাছের গোঁড়া থেকে ৫ সেন্টিমিটার (২ ইঞ্চি) রেখে বাকি অংশ কেটে দিন। আক্রমণ বেশি হলে অনুমোদিত কীটনাশক সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করুন।
পাট
পাটের জমিতে আগাছা পরিষ্কার, ঘন ও দুর্বল চারা তুলে পাতলা করা, সেচ এসব কাজগুলো যথাযথভাবে করুন। ফাল্গুনি তোষা জাতের জন্য একর প্রতি ৪০ কেজি ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করুন। মাটিতে রস না থাকলে বা দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হলে হালকা সেচ দিন এবং বৃষ্টির কারণে পানি জমে থাকলে তা বের করার ব্যবস্থা নিন। এ মাসে পাটের বিছা পোকা এবং ঘোড়া পোকা জমিতে আক্রমণ করে থাকে। এদের আক্রমণ রোধ করতে পোকার ডিমের গাদা, পাতার নিচ থেকে পোকা সংগ্রহ করে মেরে বা পুরিয়ে ফেলুন। আক্রমণ বেশি হলে অনুমোদিত কীটনাশক সঠিকভাবে, সঠিক সময়ে, সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করুন।
শাক-সবজি
লতানো সবজির দৈহিক বৃদ্ধি যত বেশি হবে তার ফুল-ফল ধারণ ক্ষমতা তত কমে যায়। সেজন্য বেশি বৃদ্ধি সমৃদ্ধ লতার ১৫-২০ শতাংশ কেটে দিন এতে তাড়াতাড়ি ফুল ও ফল ধরবে। কুমড়া জাতীয় সব সবজিতে হাত পরাগায়ন বা কৃত্রিম পরাগায়ন অধিক ফলনে দারুণভাবে সহায়তা করবে। গাছে ফুল ধরা শুরু হলে প্রতিদিন হাত পরাগায়ন নিশ্চিত করলে ফলন অনেক বেড়ে যাবে। এ মাসে কুমড়া জাতীয় ফসলে মাছি পোকা দারুণভাবে ক্ষতি করে থাকে। এক্ষেত্রে জমিতে খুঁটি বসিয়ে খুঁটির মাথায় বিষটোপ ফাঁদ দিলে বেশ উপকার হয়। এ ছাড়া সেক্স ফেরোমন ব্যবহার করেও এ পোকার আক্রমণ রোধ করা যায়।
আরও পড়ুন: কালীগঞ্জে ঘাস চাষে আগ্রহ বাড়ছে খামারির
গাছপালা
আগামী মাসে চারা লাগানোর জন্য জায়গা নির্বাচন, গর্ত তৈরি ও গর্ত প্রস্তুত, সারের প্রাথমিক প্রয়োগ, চারা নির্বাচন এ কাজগুলো এ মাসেই শেষ করতে হবে। নারিকেল, সুপারির উপযুক্ত মাতৃগাছ থেকে ভালো বীজ সংগ্রহ করে বীজতলায় এখন লাগাতে পারেন।
বিবিধ
বাড়ির কাছাকাছি উঁচু এমনকি আধা ছায়াযুক্ত জায়গায় আদা হলুদের চাষ করুন। মাঠের মিষ্টি আলু, চিনাবাদাম বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগেই তুলে ফেলুন। গ্রীষ্মকালীন যুগডালের চাষও এ মাসে করতে পারেন। পতিত বা আধা ছায়াযুক্ত স্থানে অনায়াসে লতিরাজ বা পানি কচু বা অন্যান্য উপযোগী কচুর চাষ করুন। সবুজ সার করার জন্য ধইঞ্চা বা অন্য গাছের বয়স ৩৫-৪৫ দিন হলে চাষ ও মই দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিন। সবুজ সার মাটিতে মেশানোর ৭/১০ দিন পরই ধান বা অন্যান্য চারা রোপণ করতে পারবেন।
এনএইচ/জেডএইচ/এএসএম